আগামীকাল ঘোষিতব্য জুলাই প্রক্লেমেশন নিয়ে বিএনপি'র প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিল প্রথম আলো। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস প্রথম আলোকে বলেছেন, 'শহীদের রক্তের ওপর দিয়ে লেখা যে সংবিধান সেই সংবিধানকে যখন কবর দেয়ার কথা বলা হয় তখন কিন্তু আমাদের কষ্ট লাগে।'
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে মির্জা আব্বাস বলেন, 'অনুরোধ করব, বিষয়গুলো বোঝার চেষ্টা করবেন। ভুল বুঝবেন না। কবর দিয়ে ফেলব, মেরে ফেলব, কেটে ফেলব - এ সমস্ত কথা ভালো কথা নয়। এ ধরনের কথা ফ্যাসিবাদের মুখ থেকে আসে।'
সদ্য রিফর্ম করা নিবন্ধনবিহীন পলিটিক্যাল দল জাতীয় নাগরিক কমিটির সহযোগিতায় 'জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র' দেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে। বলা হচ্ছে, এই ঘোষণাপত্রে খসড়া ইতিমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়েছে। ধরে নেয়া যায় ঘোষণাপত্রের খসড়ার বিষয়বস্তু মিস্টার আব্বাস জানেন।
হাসনাত আব্দুল্লাহ সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আমরা চাই ভারতীয় সংবিধান মুজিবাদের চেতনা ও আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে মানুষের দাঁড়ানোকে স্বীকৃতি দেয়া হোক। আমরা চাই মুজিব বাদী সংবিধানকে কবরস্থ ঘোষণা করা হবে। যে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে এক দফার (শেখ হাসিনার পতন ও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ) ঘোষণা দেয়া হয়েছিল, ঠিক সেই জায়গা থেকে বাহাত্তরের মুজিববাদী সংবিধানের কবর রচিত হবে। আমরা প্রত্যাশা রাখছি, জুলাই বিপ্লবের ঘোষনাপত্রে নাৎসিবাদী আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশে অপ্রাসঙ্গিক ঘোষণা করা হবে। পাশাপাশি ঘোষণাপত্রে আমরা বিচার নিশ্চিতের ইশতেহার দেখতে চাই।'
এ প্রসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও বর্তমানে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রটি সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের একটি লিখিত দলিল হিসেবে থাকবে। যে দলিল বিগত ব্যবস্থাগুলোকে বাতিল করে প্রত্যাশিত নতুন ব্যবস্থা বাস্তবায়নের পথ দেখাবে। ভবিষ্যতে ভোটের মাধ্যমে যারা বাংলাদেশের মানুষের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন তাদের ক্ষেত্রেও এটি একটি নির্দেশিকা হিসেবে থাকবে।
তবে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের সঙ্গে অন্তবর্তী সরকারের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে গতকাল এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মো. শফিকুল আলম। তিনি বলেন, এটিকে সরকার 'প্রাইভেট ইনিশিয়েটিভ' (বেসরকারি উদ্যোগ) হিসেবেই দেখতে চায়। যারা এটিকে সাপোর্ট করছেন, 'এটা প্রাইভেট ইনিশিয়েটিভ কে সাপোর্ট করছেন।'
জুলাই প্রক্লেমেশন মূলত সংবিধান প্রতিস্থাপন ও আওয়ামী লীগকে অপ্রাসঙ্গিক করার কাঠামোবদ্ধ এজেণ্ডার প্রস্তাবনা। এ প্রস্তাবনাকে সরকার যতই প্রাইভেট ইনিশিয়েটিভ বলে দূরে রাখতে চাক, এতে আসলে সরকারি ইচ্ছারই প্রতিফলন ঘটবে। সরকার প্রত্যক্ষভাবে একে নিজেদের ডিক্লারেশন বলতে চাইছে না, এর কারণ হলো: তারা আসলে পাবলিকের পালস বুঝে নিতে চাইছে। এই ঘোষণা কেমন সাড়া ফেলে এর ওপর নির্ভর করবে সরকারের পরবর্তী করণীয়। তারা রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে রাখবেন কিনা, সংবিধানের চার মূলনীতি জাতীয়তাবাদ, ন্যায়বিচারের জন্য সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিয়ে তারা আসলে সংবিধানে কোন রাজনৈতিক তত্ব সন্নিবেশিত করবে; এটার একটা স্পষ্টিকরণ ব্যাখ্যা হয়ত তারা দিতে পারবে।
কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা যে পরিস্থিতি দেখতে পাচ্ছি, তাতে বিএনপির মতো বড় দলকে পাশ কাটিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় পাওয়া আমাদের এই জাতিরাষ্ট্রের খোলনলচে পাল্টে দিয়ে ভিন্নতর কিছু করতে গেলে তা টেকসই হওয়ার গ্যারান্টি কেউ দিতে পারবে না -এমনটা নির্দ্বিধায় বলা যায়।
চূড়ান্ত বিচারে একাত্তরে পাকিস্তানি Hegemony ও Discrimination'র বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম, লাখো শহিদ ও মা-বোনের সম্ভ্রমে পাওয়া 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা' ছুড়ে ফেলে দ্বিতীয় রিপাবলিক গঠনের স্বপ্ন বাংলাদেশকে কোন পথে নিয়ে যায় পর্যবেক্ষকদের দেখার বিষয় এটাই।
লেখক: সাংবাদিক
৩০ ডিসেম্বর ২০২৪
39
View