মায়া সভ্যতা মানুষের ইতিহাসে এক বিস্ময়।মায়া সভ্যতার উত্তরসূরীরা বাস করে মধ্য আমেরিকার দেশ গুয়াতেমালাতে।মায়া সভ্যতা নিয়ে আগ্রহের কারণে গুয়াতেমালার রাজনীতি কেমন ছিল,কেন প্রায় ৩৬ বছর গৃহযুদ্ধ হলো এ দেশে,কিভাবে ২০০,০০০ বেশি মানুষ মারা গেলো গুয়াতেমালাতে তা জানার ইচ্ছে জাগলো।
গুয়াতেমালা স্পেন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে ১৮২১ সালে।প্রায় ১৯৫০ সাল পর্যন্ত নানা ফরমেটে গুয়াতেমালাতে সামরিক শাসন ই আধিপত্য বিস্তার করে রাখে।১৯৫১ সালের নির্বাচনে এর ব্যত্যয় ঘটে।জ্যাকব আরবেঞ্জ প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত হন।জ্যাকব নির্বাচিত হবার সাথে সাথে আমেরিকার বুকে কামড় দেয় কারণ তারা জ্যাকবকে সমাজতন্ত্র ঘেঁষা রাজনীতিবিদ হিসেবে দেখতো।
গুয়াতেমালাতে কলা,কফি ও চিনি উৎপাদিত হতো।এই উৎপাদিত পণ্যের বিপণন,উৎপাদন,বাজারজাতকরণ,রফতানি সবই নিয়ন্ত্রিত হতো আমেরিকার রকফেলারের মালিকানাধীন ইউনাইটেড ফ্রুট কোম্পানি দ্বারা। এই ফ্রুট কোম্পানি গুয়াতেমালার ভূমিরও অনেক অংশের মালিক ছিল। জ্যাকব নির্বাচিত হবার পর ভূমি বণ্টনের উদ্যোগ নেন,সেইসাথে ইউনাইটেড ফ্রুটকে জাতীয়করণের চেষ্টা করেন।
এই ইউনাইটেড ফ্রুটে সিআইএর পরিচালক অ্যালেন ডালেসেরও শেয়ার ছিল।কাজেই কাজেই গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত জ্যাকব আরবেঞ্জকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সিআইএ উৎখাত করে। ইউনাইটেড ফ্রুট কোম্পানির বেনিয়ারা সেদেশের সমাজতন্ত্রী প্রেসিডেন্ট আরবেঞ্জকে উৎখাত করে গোটা দেশটাকেই নিজেদের দখলে নিয়ে আসে।
২০১১ সালে জ্যাকবের পরিবারের কাছে গুয়াতেমালা সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চায়।তারা বলে জ্যাকবের পরিবারের মানবাধিকার রক্ষায় তারা ব্যর্থ হয়েছে।
আমেরিকা ১৯৫৪ সালে
সিআইএর সহায়তায় মার্সেনারি আর্মি দিয়ে ক্যু করে নির্বাচিত জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধিকে সরিয়ে তাকে নির্বাসনে পাঠিয়ে সামরিক জান্তা কার্সিয়োস কাস্টিলোকে ক্ষমতায় বসায়।গুয়াতেমালা রক্তক্ষয়ী এক গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে যায় ১৯৬০ সাল থেকে,যা ১৯৯৬ সালে এসে একটি শান্তিচুক্তির মাধ্যমে শেষ হয়।কিন্তু সমাজের রাষ্ট্রের অবকাঠামোগত যে ধ্বংসযজ্ঞ ঘটে তার ফলে গুয়াতেমালার রাজনৈতিক অস্থিরতা কখনোই সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয় না।
মার্কিনিদের কাছে সব হলো ব্যবসা।কোন দেশের মানুষের জান-মাল-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য নষ্ট হলে
সিআইএ'র আগ্রাসনে,হত্যায়,নিষ্ঠুরতায় দেশ আমেরিকার কিছুই যায় আসে না।
গুয়াতেমালার কর্পোরেট ব্যবসায়ী যারা ইউনাইটেড ফ্রুট কোম্পানির দোসর ছিল তারা সামরিক জান্তা কার্সিয়োস কাস্টিলোকে বসিয়ে তাদের ব্যবসা ঠিকই চালিয়ে যায়।ভুগতে থাকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম সাধারণ মানুষেরা।
ঐ যে বলি,আমেরিকা সিআইএ যে দেশেই গণতন্ত্র,বাকস্বাধীনতা,ইনক্লুশন,ডাইভারসিটি,
ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশন,ফ্রিডম অফ প্রেস,মানবাধিকার এসব পসরা নিয়ে যায়,সাথে সিভিল সোসাইটির ভাড়াটিয়াদের যুক্ত করে সে দেশেই তারাবাত্তি জ্বলে যায়।
অন্য দেশে মানবাধিকারের বেসাতি করা আমেরিকার শুধু পুলিশের গুলিতে ২০২৩ সালে ওয়াশিংটন পোস্টের একটি চলমান বিশ্লেষণ অনুসারে, পুলিশ প্রতি বছর ১,০০০ জনেরও বেশি মানুষকে গুলি করে এবং হত্যা করে। যার মধ্যে অর্ধেক কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান। তুলনামূলকভাবে আমেরিকায় গুলি করে হত্যার ঘটনা খুবই স্বাভাবিক। নিজের দেশে স্বাভাবিক,অন্য দেশে গণহত্যা বলে চিক্বুর দিয়ে শেষ।
মানবতার ফেরিওয়ালাদের আমেরিকায় পুলিশের হাতে বিচারবহির্ভুত হত্যা একটি নিয়মিত ঘটনা। Gun Violence Archive (GVA)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন ৪৭২ জন এবং গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন ২৭৩ জন। ২০২৩ সালে পুলিশের গুলিতে ১৩৪৪ জন মানুষ মারা গেছেন।
অন্যদিকে ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, ২০১৫ সাল থেকে প্রতি বছর গড়ে ১ হাজার মানুষ পুলিশের গুলিতে বিনা বিচারে মারা গেছে।
বাংলাদেশে সিআইএ ও তার দোসরেরা কেন এসেছে, কি করছে,কি করবে না বুঝে এবং বুঝে যারা এখনো বিভ্রান্তিতে আছেন,চুপ আছেন নগদ নারায়ণ পেয়ে তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে গুয়াতেমালার পাঠ এখানেই শেষ করছি।