বিকেলের রোদ তখন ধীরে ধীরে গোধূলির লালচে আলোয় রূপ নিচ্ছিল। জানালার পাশে বসে থাকা তৃষা চোখের সামনে ছড়িয়ে থাকা শূন্যতায় তাকিয়ে ছিল। একসময় ঘরের নিরবতা ভাঙল দরজার খটখট শব্দে। পোস্টম্যান এসেছে।
একটি হলুদ খামের চিঠি এগিয়ে দিয়ে পোস্টম্যান চলে গেল। তৃষার হাত কাঁপছিল। চিঠিটা কার কাছ থেকে, জানার জন্য তার মন উদ্বেলিত। ধীরে ধীরে খাম খুলে সে ভেতরের কাগজটি বের করল।
চিঠির প্রথম লাইন পড়েই তার হৃদয় দুলে উঠল। এটা ছিল অয়নের লেখা। তিন বছর আগে তাদের সম্পর্কের শেষ দিনটি মনে পড়ে গেল তৃষার। অয়ন তাকে বলেছিল, "তোমার জন্য একদিন আমি শেষ চিঠি লিখব। যদি কখনো পেয়ো, জেনে নিও, তাতে আমার জীবনের সব কথা আছে।"
চিঠিতে লেখা ছিল:
"প্রিয় তৃষা,
তোমার কাছে আমি কোনো অভিযোগ নিয়ে লিখছি না। তোমাকে আমি কখনো বোঝাতে পারিনি আমার মনের কথা। হয়তো এটাই আমার ভুল ছিল। কিন্তু তোমার হাসিমাখা মুখ আজও আমার স্মৃতির কোণে জমা আছে।
তোমার সাথে আমার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ছিল রঙিন। কিন্তু সেই রং হারিয়ে যাওয়ার পর আমি নিজেকে আর খুঁজে পাইনি। তিন বছর ধরে আমি চেষ্টা করেছি, তৃষা নিজেকে বোঝানোর, ভুলে যাওয়ার। কিন্তু পারিনি।
আজ জানি, তোমার কাছে ফিরে আসা সম্ভব নয়। তাই এই শেষ চিঠি লিখে তোমার স্মৃতি থেকে নিজেকে মুছে দিতে চাই। তোমার জীবন রঙিন হোক, ভালো থেকো। জানি, তুমি বরাবরের মতো শক্ত মেয়ে। আমি তোমার এই সাহসকে ভালোবেসেছি এবং চিরকাল ভালোবেসে যাব।
ইতি, অয়ন।"
তৃষার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। চিঠিটি হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে সে আবার জানালার বাইরে তাকাল। আকাশ তখন গাঢ় লালচে রঙ ধারণ করেছে। হঠাৎ করেই সে মনে করল, অয়ন বলেছিল, "তোমার হাসি যেন কোনোদিন ম্লান না হয়।" তৃষা একবার নিজেকে আয়নায় দেখল। দীর্ঘদিন পরে তার ঠোঁটে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল।
চিঠিটি তৃষা আবার খামে ভরে তার ড্রয়ারের গভীরে রেখে দিল। সে জানত, এটি হয়তো তাদের শেষ যোগাযোগ, কিন্তু সেই চিঠিতে লেখা শব্দগুলো তার জীবনকে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে।