শীতের সকাল, এক নিস্তব্ধ আর শান্ত পরিবেশ। সারা পৃথিবী যেন এক পুরু সাদা চাদরে ঢাকা। সূর্যের রশ্মি আসতে আসতে আকাশের নীল থেকে গা dark ় রঙ বের হয়ে আসে, আর ঠাণ্ডা বাতাস শীতল শ্বাসের মতো গায়ে লেগে যায়। এমনই একটি শীতের সকালে, এক গ্রামের ছোট্ট ঘরে বসে ছিল অহনা, একটি মেয়ে, যার বয়স মাত্র ১২ বছর। কিন্তু তার মধ্যে এক বিশেষ ধরনের শীতল শান্তি ছিল, যা অন্যদের মধ্যে তেমন দেখা যেত না।
অহনা সকাল সকাল উঠে পড়েছিল। মা-বাবা তখনও ঘুমিয়ে ছিল, কিন্তু অহনা জানতো, শীতের সকালেই তাদের সবাইকে একসাথে বসে নাস্তা করা যায়। সে ধীরে ধীরে রান্নাঘরে চলে গেল, যেন মায়ের জাগানোর আগেই কিছু কাজ সেরে ফেলে।
অহনার মা একদম সাধাসিধে মানুষ। তার হাতে তৈরি রুটি, শাক, সবজি, আর গরম গরম দুধ—এগুলো দিয়েই একদিন শুরু হয়। অহনা জানতো, আজও একই রকম কিছু হবে। তবে তার মধ্যে কিছুটা আলাদা অনুভব হচ্ছিল। জানালার কাঁচে ভেজা কুয়াশা জমেছে, আর বাইরে বনের মধ্যে পাখিরা মিষ্টি সুরে গান গাইছে। এ যেন এক শান্তির দ্যুতি। অহনা মনের মধ্যে মনে মনে ভেবে ফেলেছিল, “আজকে আমি কিছু বিশেষ করবো।”
তখন অহনা রান্নাঘরে ফিরে এসে গরম চায়ের কাপ হাতে মায়ের কাছে গেল। মায়ের চোখে ঘুমের রেখা, কিন্তু সে তবুও হাসলো। মা বললেন, “তুই আবার কি করেছিস অহনা? আজকে কি কোনও নতুন কিছু করবে?” অহনা তার মায়ের চোখে চোখ রেখে বললো, “আজকে আমি সব কিছুর জন্য কৃতজ্ঞ। মা, শীতের এই সকালে আমাদের কাছে যা কিছু আছে, তার জন্য আমি মনে মনে তোমার কাছে কৃতজ্ঞ। ”
মায়ের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। “বাবা, তুই যখন বড় হবে, তখন বুঝবি, আসল কৃতজ্ঞতা তো প্রকৃতির প্রতি। আমাদের যা কিছু আছে, তা সকলেই কমবেশি নিয়ে থাকে, তবে প্রকৃতি ছাড়া কেউ কিছুই পায় না।”
সকালে তীব্র ঠাণ্ডা থাকার পরও অহনা একবার ঘর থেকে বেরিয়ে এসে দেখলো, তার চারপাশে সাদা বরফে ঢাকা পৃথিবী। গ্রামের পথগুলো যেন স্বপ্নের মতো সাদা হয়ে গেছে। অহনা নরম স্নোতে পা রেখেই দৌড়াতে শুরু করলো, যেন তার আনন্দ বেড়ে গেছে। তার চোখে মুখে ছিল আনন্দের ঝিলিক।
আজকের শীতের সকাল যেন অহনার জীবনের এক নতুন অধ্যায় হয়ে উঠেছিল। সে অনুভব করেছিল, প্রকৃতি আর শান্তি, ভালোবাসা আর কৃতজ্ঞতা—এই সব মিলিয়েই জীবনের সুন্দরতম মুহূর্তগুলো তৈরি হয়।
অহনা জানতো, এই শীতের সকালে সে যা কিছু অনুভব করেছে, তা হয়তো কখনো আর ফিরে আসবে না। কিন্তু সে চিরকাল মনে রাখবে, জীবনের ছোট ছোট মুহূর্তের মধ্যে যে শান্তি পাওয়া যায়, সেটাই আসল।
সেই শীতের সকালে অহনা শিখে নিয়েছিল, শীতের সকাল শুধু শীতল নয়, এটা স্নিগ্ধতা, তৃপ্তি আর শান্তির এক অমুল্য উপহার।