Posts

গল্প

"চোখের আড়াল"

January 1, 2025

Naznin sultana Dina

26
View

শহরের ব্যস্ত রাস্তাগুলো যেন কখনোই ঘুমায় না। যানবাহনের শোঁ-শোঁ শব্দ আর মানুষের কোলাহলে মিশে থাকা একটি মেয়ের কণ্ঠস্বর, "মিষ্টি! মিষ্টি!" প্রতিদিন সকালে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা নীলা তার দোকানে বসে মিষ্টি বিক্রি করত। মিষ্টির মতোই তার হাসি ছিল মধুর। তার দোকানে আসা সবাই নীলার হাসিতে আকৃষ্ট হতো। কিন্তু তার হৃদয়ে একটি গভীর ক্ষত ছিল, যা কেউ জানত না।

নীলার জীবনে একটি সময় ছিল, যখন সে নিজের জন্য নয়, অন্য একজনের জন্য বাঁচত। সেই মানুষটি ছিল আদনান – তার প্রথম এবং একমাত্র ভালোবাসা। গ্রামের একটি মেলায় তাদের প্রথম দেখা হয়েছিল। নীলা তখন সবে কলেজে ভর্তি হয়েছে। মেলার ভিড়ে যখন তার চুড়ির দোকানটি হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম, তখনই আদনান এসে বলেছিল, "আমি তোমাকে খুঁজে দিচ্ছি।" সেদিন থেকেই তাদের গল্পের শুরু।

আদনান শহরের ছেলে, নীলা গ্রাম থেকে শহরে পড়তে এসেছিল। তাদের জীবনের পথ ভিন্ন হলেও একে অপরের সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো তাদের জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অধ্যায় ছিল। নীলা তার প্রতিটি স্বপ্নের কথা আদনানের সঙ্গে ভাগ করত, আর আদনান তাকে বলত, "তুমি যাই করো, আমি তোমার পাশে আছি।"

কিন্তু সময় সবকিছু বদলে দেয়। কলেজ শেষে আদনান উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি দিল। যাওয়ার আগে সে বলেছিল, "আমি ফিরে আসব, নীলা। তোমার জন্যই আসব।" কিন্তু বছর পার হয়ে গেল, মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও নীলা কোনো খোঁজ পেল না। আদনানের শেষ চিঠিটি ছিল একটি বিদায় বার্তা। সে লিখেছিল, "আমার জীবনে এমন কিছু ঘটেছে যা তোমাকে জানানো সম্ভব নয়। আমি তোমার থেকে দূরে থাকব, কিন্তু তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা কখনো কমবে না।"

নীলার জীবনের সেই অধ্যায়টি যেন বন্ধ হয়ে গেল। কিন্তু সে থেমে থাকেনি। তার নিজের দোকান খুলল, নিজের পায়ে দাঁড়াল। যদিও তার হৃদয়ে একটি শূন্যতা রয়ে গেল, তবু সে হাসত। তার বিশ্বাস ছিল, জীবনের গল্প এখানেই শেষ নয়।

একদিন হঠাৎ করেই তার দোকানে একটি পরিচিত মুখ দেখা গেল। আদনান! তার চুলে রূপোলি আভা আর চোখে ক্লান্তির ছাপ। কিন্তু তার চাহনিতে সেই আগের মতোই উষ্ণতা। নীলা বিস্মিত হয়ে বলল, "তুমি! এত বছর পর?"

আদনান মাথা নিচু করে বলল, "নীলা, আমি জানি তোমার কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। কিন্তু আমার সাহস ছিল না। অনেক দিন পরে দেশে ফিরেছি। তুমি কী আমাকে একবার ক্ষমা করতে পারবে?"

নীলা কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তার চোখ ভেজা, কিন্তু মুখে হাসি। সে বলল, "তোমার জন্য আমি আর অপেক্ষা করিনি। আমি নিজের জন্য বাঁচতে শিখেছি। কিন্তু তুমি ফিরে এসে আমার জীবনের এক অধ্যায় পূর্ণ করেছ।"

আদনান ধীরে ধীরে বলল, "তাহলে কি আমরা নতুন করে শুরু করতে পারি?"

নীলা উত্তর দিল না। সে তার দোকানের ভিতরে গিয়ে আদনানের জন্য একটি মিষ্টি নিয়ে এল। মিষ্টি হাতে দিয়ে বলল, "এই মিষ্টি খাও, তারপর ভাবি কী করা যায়।" আদনানের চোখে হাসি ফুটল।

নীলার জীবনে আরেকটি অধ্যায় শুরু হলো। এইবার তার গল্পটি হয়তো অন্য রকম হবে, কিন্তু তাতে ভালোবাসার রং কখনো ফিকে হবে না।

Comments

    Please login to post comment. Login