মিষ্টি একটি সুন্দর ছোট গ্রামের মেয়ে। তার বাড়ি বড়াল নদীর কাছে, যেটি গ্রামের জন্য এক প্রকার জীবনের রক্তসঞ্চালন। নদীটা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর, যেখানে সারা বছর নানা ধরনের ফুল, গাছ, পাখি আর প্রাণী খেলা করে। তবে, মিষ্টির জন্য নদীটি এক বিশেষ গুরুত্ব রাখে, কারণ এটা ছিল তার প্রিয় জায়গা।
প্রতিদিন সকালে মিষ্টি তার কাজের শেষে নদীর পাড়ে গিয়ে বসে থাকত। নদীটিতে ঢেউয়ের নৃত্য, বাতাসের শীতল ছোঁয়া, আর পাখিদের গান তাকে এক অদ্ভুত শান্তি দিত। সে মাঝে মাঝে সুরেলা কণ্ঠে গান গাইত, আর নদীটি যেন তার গান শুনে আরও গতি পেত। মিষ্টির প্রিয় কাজ ছিল নদীটির পাড়ে পিপঁলি সংগ্রহ করা। সে যখনই কিছু পিপঁলি সংগ্রহ করত, তখন মনে হতো নদী যেন তার সাথে খেলা করছে, তাকে আরও কিছু দেখানোর চেষ্টা করছে।
একদিন, মিষ্টি যখন নদীর পাড়ে বসে ছিল, তার চোখে পড়ল নদীর মাঝে কিছু অদ্ভুত ঝলমলে আলোর প্রতিফলন। সে আরও কাছে গিয়ে দেখল যে, নদীর জলে এক প্রকার বিশেষ মাছের ঝাঁক সাঁতার কাটছে। এই মাছগুলো ছিল রূপালী এবং সোনালী রঙের, এবং তারা সিল্কের মতো পানির ওপর ভেসে চলছিল। মিষ্টি আনন্দিত হয়ে মাছগুলোর পেছনে ছুটতে লাগল। কিন্তু সেগুলো এত দ্রুত সাঁতার কাটছিল যে, মিষ্টি আর তাদের ধরতে পারল না।
এমন সময়, নদীর পাড়ে বসে থাকা এক বৃদ্ধ মহিলার দিকে তার নজর পড়ল। মহিলার মুখে একটা মিষ্টি হাসি ছিল। মিষ্টি এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, "আপনি এই নদীটিকে এত ভালোভাবে জানেন, তাই না? এই মাছগুলোর কি কোনো বিশেষ গুরুত্ব আছে?"
বৃদ্ধা মহিলার হাসি আরো প্রশস্ত হলো, "এগুলো তোমার মনের মত একদিন তোমাকে কোনো বিশেষ উপহার দেবে, মিষ্টি। কিন্তু তোমাকে নিজের মনের মধ্যে শান্তি খুঁজতে হবে, তোমার আশা আর ভালোবাসা নদীর মতো বিশাল হতে হবে।"
মিষ্টি বুঝতে পারল যে, নদীটি শুধু পানি নয়, বরং জীবনের এক বিশেষ প্রতীক। তার মতো, নদীও নানা বাধা পেরিয়ে তার গন্তব্যে পৌঁছায়, কিন্তু কখনো হারিয়ে যায় না। এই উপলব্ধি মিষ্টিকে আরও শক্তিশালী করে তুলল। সে জানত, তার জীবনের সেরা উপহার নদীটি তার সাথে চলতে থাকবে, যে কোনো সময়, যে কোনো অবস্থায়।
এভাবে, মিষ্টি এবং বড়াল নদী হয়ে উঠল একে অপরের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।