সর্বনাশের রাত
সন্ধ্যা নামতেই শহরের বাতিগুলো একে একে জ্বলে উঠল। রাস্তায় ভিড় বাড়ছে, অফিস শেষে মানুষজন বাড়ি ফিরছে। কিন্তু আজকের রাতটা ছিল অন্যরকম। অচেনা শীতল হাওয়া যেন পুরো শহরকে ঢেকে ফেলেছিল।
রিয়া ব্যস্ত হাতে জানালার পর্দা টানতে টানতে বাইরে তাকাল। পাশের গলির মোড়ে কয়েকজন অচেনা মানুষ দাঁড়িয়ে ছিল। তাদের চোখে এক অদ্ভুত ঝলক, মুখে নিঃশব্দ কথা। রিয়ার মনটা কেমন করে উঠল।
তার স্বামী আরিয়ান বলল, "রিয়া, দরজা-জানালা ভালো করে লাগিয়ে দাও। আজ শহরে একটা অদ্ভুত গুজব চলছে।"
রিয়া ভয়ে বলল, "কী গুজব?"
আরিয়ান বলল, "লোকেরা বলছে, আজ রাতে শহরে একটা অজানা বিপদ আসবে। কেউ জানে না কী হবে, কিন্তু সবাই সতর্ক আছে।"
রিয়া আর কথা বাড়াল না। সে দ্রুত সব দরজা-জানালা বন্ধ করে ঘরের লাইটগুলো নিভিয়ে দিল। বাইরে থেকে হঠাৎই একটা অদ্ভুত আওয়াজ শোনা গেল। রিয়া আর আরিয়ান চুপ করে বসে রইল। বাইরে কী চলছে তা বোঝার উপায় নেই।
হঠাৎ দরজায় জোরে ধাক্কা পড়ল। রিয়া ভয়ে কেঁপে উঠল। আরিয়ান ধীর পায়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেল। দরজার ওপাশ থেকে কেউ বলল, "দয়া করে দরজা খুলুন! আমরা বিপদে পড়েছি।"
আরিয়ান দ্বিধায় পড়ল। তার মনে হলো, এটি হয়তো ফাঁদ হতে পারে। সে দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে বলল, "আপনারা কে?"
কোনো উত্তর এল না। কয়েক মুহূর্ত পরে ধাক্কা বন্ধ হলো। বাইরে থেকে কেবল নিঃশব্দ ভয়ের সুরে বাতাস বইতে লাগল।
রিয়া বলল, "আরিয়ান, এ কী হচ্ছে? আমাদের কী করা উচিত?"
আরিয়ান বলল, "আমার ধারণা, আমাদের চুপচাপ অপেক্ষা করা উচিত। কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।"
রাত গভীর হতে থাকল। বাইরে থেকে ক্রমাগত অদ্ভুত শব্দ ভেসে আসছিল। হঠাৎ শহরের সমস্ত লাইট বন্ধ হয়ে গেল। পুরো শহর অন্ধকারে ঢেকে গেল।
কয়েক মুহূর্ত পরে, ভোরের আলো ফুটতে শুরু করল। অন্ধকার কেটে গিয়ে সব কিছু আবার স্বাভাবিক হয়ে গেল। রিয়া আর আরিয়ান দরজা খুলে বাইরে তাকাল। কিন্তু সেখানে কিছুই ছিল না। সেই অচেনা মানুষগুলোও উধাও।
কেউ জানল না, গত রাতের ঘটনার আসল রহস্য কী। কিন্তু সেই রাতকে শহরের মানুষজন নাম দিল "সর্বনাশের রাত"। আজও সেই রাতের কথা মনে পড়লে রিয়া আর আরিয়ান কাঁপতে থাকে। তাদের মনে একটাই প্রশ্ন রয়ে গেছে - সত্যিই কি এটা কোনো প্রাকৃতিক ঘটনা ছিল, নাকি অন্য কিছু?