ফাতেমা
ওমর ফারুক
গ্রামের নাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া।ব্রাহ্মণ-শাসন আমার নানা বাড়ি।তার থেকে চার বাড়ি পরেই গোয়ালিনির বাড়ি।
গোয়ালিনির সাথে আমার নানির ভালোই সম্পর্ক বটে।
চার ছেলের পর এক কন্যা সন্তান হওয়ার ফলে পরিবারটিতে খুশির জোয়ার পরে গিয়েছে।মেয়েটির নাম রাখা হয় ফাতেমা।গায়ের রংটা শ্যামলা বর্ণের।
আমি তখন ছোট ছিলাম।তখন আমার বয়স ছয় বছর।
অনেক বছর পর গ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম।গাড়ি বিশ্বরোড থামল রাত নয়টায়।নানা বাড়ি যেতে যেতে রাত দশটা বেজে গেল।জার্নি করে বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।তাই সবার সাথে কুশল বিনিময় করার পর রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়লাম।
সকালে মামির ডাকে ঘুম ভেঙে গেল। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খেতে বসলাম,তখনই গোয়ালিনি হাজির।নানিকে উদ্দেশ্য করে বলল,সন্ধ্যার পর তাদের বাড়ি যেতে।যেই বলা সেই কাজ।সন্ধ্যার সময় আমি আর নানি হাজির হলাম গোয়ালিনির বাড়িতে।বেশ আপ্যায়ন করল বটে।নানি বলল,এবার বাড়ি যাওয়া যাক,আমিও তাতে সায় দিলাম।বেরিয়ে চলে আসবো এমন সময় গোয়ালিনি বলল,আজ থেকে গেলে হয় না।
নানি বলল,না।আমি থাকার জন্য প্রস্তুত ছিলাম।আমার থাকার জন্য এত আগ্রহ দেখে নানি আর না করতে পারল না।রাতটা তাদের ওখানেই থাকলাম।সকালে উঠে গোয়াল ঘরে গিয়ে দেখি,গোয়ালিনি নেই।অপরূপ সুন্দর একটা মেয়ে গরুর দুধ দোহাচ্ছে। বললাম,কে তুমি?গোয়ালিনি কোথায়?
মেয়েটি উত্তর দিল,আমি ফাতেমা।মা গরুর জন্য ঘাস কাটতে গিয়েছে।তুমি গোয়ালিনির মেয়ে?হ্যাঁ!আমি গোয়ালিনির মেয়ে।অনেক বড় হয়ে গিয়েছো,বয়স কত তোমার?বয়স জেনে আপনি কি করবেন?না কিছু না,তোমাকে তো অনেক ছোট দেখেছিলাম।খুব তাড়াতাড়ি বড় হয়ে গিয়েছো।রাগি কন্ঠে বলল,কেউ কি তাড়াতাড়ি বড় হয়।ইয়ে মানে না তোমাকে তো অনেক ছোট দেখেছি তাই।আপনি ঘরে গিয়ে বসেন আমি নাস্তা নিয়ে আসতেছি।আমি ঘরে গিয়ে বসলাম,দেখলাম অনেক সুন্দর করে খাবারের থালা সাজিয়ে সামনে রাখলো। বেশ তৃপ্তি সহকারে খেলাম।ওহ!বলতেই ভুলে গেছি,নানি সকালে ঘুম থেকে উঠেই চলে গিয়েছিল হাঁস-মুরগি খোয়ার থেকে বের করতে।
খাওয়া শেষ করে আমিও চলে আসলাম নানির কাছে।
পরের দিন দুপুরে গোয়ালিনির মা আবার হাজির।আমি মাদুর পেতে উঠানে শুয়ে ছিলাম।আমার মাদুরের পাশে বসলো।বলল,আমার তিন ছেলে তার বউ নিয়ে ঢাকা থাকে।আর ছোট্ট ছেলে কাল বিকালে ফ্লাইটে করে বিদেশ চলে গেছে।ও ফাতেমাকে স্কুলে নিয়ে যেত এবং স্কুল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসতো।এখন তো ও নেই তুমি একটু কষ্ট করে যদি ওকে স্কুলে দিয়ে আসতে। আমি গিয়ে নিয়ে আসবো।বললাম,আমি দিয়ে আসবো নিয়েও আসবো সমস্যা নেই। অযথা বসে থেকে কি হবে, যাইহোক একটা কাজ পেয়ে গেলাম।পরদিন থেকে ডিউটি শুরু হলো আমার।বেশ কয়েক দিন কেটে গেল।ওর সাথে আমার একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক হয়ে গেল।লম্বা ছুটি নিয়েছি তাই কোনো সমস্যা হয়নি,কারন আমার চাচা স্কুলের সুপারইনটেনডেন্ট।প্রায়ই বিকেলে ওর সাথে কথা বলতাম এবং অনেক দূরে দূরে হাঁটতে যেতাম।
দুপুরের খাবার খেয়ে মধ্যঘরের চৌকির উপরে শুয়ে একদৃষ্টিতে প্রধান ফটকের দিকে তাকিয়েছিলাম।দরজাটা খোলাই ছিল,দেখি ফাতেমা হাজির। বলে,কাল আমার সাথে স্কুলে যাবা?বললাম,কেন?বলল,কাল আমাদের স্কুলে নৃত্য প্রতিযোগিতা আছে;আপনি থাকবেন কিন্তু।বললাম,ঠিক আছে।পরদিন নিত্য প্রতিযোগিতা শেষে ওকে বললাম,চলো নদীর পার থেকে ঘুরে আসি।বলল,ঠিক আছে চলেন।যেই বলা সেই কাজ।দুজন সন্ধ্যার পর বাড়িতে ফিরলাম।দেখি,ওর মা নানির কাছে বসে গল্প করছে।আমাদেরকে দেখেই বলল,কোথায় ছিলে তোমরা?আমার তো চিন্তা হচ্ছিল।বললাম,চিন্তার কারণ নেই।আমি গ্রাম প্রধানের নাতি,কিছুই হবে না।
ফাতেমাকে উদ্দেশ্য করে বলল,বাড়ি যা;ফ্রেশ হয়ে দই মিষ্টি আছে খেয়ে নিস।পরদিন দুপুরে ফাতেমা এসে বায়না ধরল।বলল,আমাকে নাকি সাঁতার কাটতে হবে।বললাম,সাঁতার জানি না তো?ওবলল,সমস্যা নেই চলেন।গেলাম নদী পার থেকে দুই-তিনটা ডুব দিলাম।
সন্ধ্যার দিকে গোয়ালিনি পিঠা বানিয়ে হাজির।বলল,সবাই পিঠা খেতে আসো।বাহ!কি স্বাদ পিঠা।
কে পিঠাটা বানিয়েছে?কেন বাবা ফাতেমা।তখনই বাবার ফোন।জরুরি দলব।কালই নাকি ঢাকা যেতে হবে।
সকালে ব্যাগ পত্র গোছাতে আরম্ভ করলাম।দুপুরে খাবার খেয়ে রওনা দেব।অমনি ফাতেমা হাজির।আর কয়েকটা দিন থাকলে হয় না?না বাবা ডাক দিয়েছে যেতেই হবে নয়তো বাবা খুব বকবে।অনেক রাগী মানুষ।ঠিক আছে, চলে যেহেতু যাবেন,আমি আপনার জন্য একটা গিফ্ট এনেছি বলেই দৌড়,বাসা থেকে গিফ্ট এর প্যাকেট এনে আমার হাতে দিলো।বলল,বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে পরে গিফ্টটা খুলবেন।
আমিও কিছু না ভেবে গিফ্টটা ব্যাগের পকেটে রেখে দিলাম।দুপুরে রওনা দিলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে।বাড়ি গিয়ে পৌঁছলাম দশটায়।ফ্রেশ হয়ে রাত বারোটার দিকে ওই গিফ্টটা হাতে নিয়ে খুলতে আরম্ভ করলাম। খুলে দেখলাম একটা আতর,একটা ঘড়িএবং একটা চিঠি।লেখা ছিল,আপনাকে খুব ভালোবাসি।বলতে পারিনি।অনেক দিন কেটে গেল।হঠাৎ একদিন গোয়ালিনির ফোন,ওর নাকি বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।সবাইকে দাওয়াত দিয়েছে।
আমার মনটা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল কথাটা শুনে।
আমি ওকে ভালোবাসতে শুরু করেছিলাম।ভেবেছিলাম বিয়ে করলে ফাতেমাকেই করবো।কিন্তু আর হলো না।ওর বিয়েতে সবাই গেলেও আমি যাই নি।যাইহোক এটাই নিয়তির খেলা।