Posts

গল্প

ব্যর্থতা শেখায় নতুন কিছু

January 3, 2025

Naznin sultana Dina

8
View

ব্যর্থতা শেখায় নতুন কিছু

শীতের সকাল। গ্রামের মেঠোপথ ধরে হেঁটে যাচ্ছিল ছোট্ট শুভ। তার মুখটা ভার—আজও স্কুলের পরীক্ষায় ভালো করতে পারেনি। বাড়িতে ফিরলেই বাবা বকবে, মা চোখের জল ফেলবে। এটাই যেন প্রতিদিনের নিয়ম হয়ে গেছে।

গাছতলায় বসে থাকা বুড়ো দাদু শুভকে ডাকলেন।

   "কী রে, এমন মনমরা হয়ে আছিস কেন?"
   শুভ মুখ নামিয়ে বলল, "আমি কিছুতেই ভালো করতে পারি না দাদু। সবাই বলে আমি ব্যর্থ।"

দাদু একটু হাসলেন। পকেট থেকে একটি পাকা আম বের করে বললেন, "দেখ তো, এটা কেমন?"


শুভ অবাক হয়ে বলল, "খুব সুন্দর, দাদু।"

   "হুম, কিন্তু জানিস, এই গাছটা প্রথমে একেবারেই ফল দিতে পারত না। মানুষ বলত, 'কেন এমন গাছ লাগিয়েছি!' কিন্তু গাছটা থেমে থাকেনি। যতবার ফল ঝরে পড়েছে, ততবার নতুন করে চেষ্টা করেছে। আজ দেখ, এর ফল কত মিষ্টি!"

শুভ অবাক হয়ে বলল, "গাছও চেষ্টা করে?"


দাদু মাথা নেড়ে বললেন, "হ্যাঁ। ব্যর্থতা মানে থেমে যাওয়া নয়। প্রতিবার ব্যর্থতা আমাদের শেখায়, কীভাবে ভালো করা যায়। তুই যদি এখন চেষ্টা থামিয়ে দিস, তবে তো কখনোই পারবি না। কিন্তু যদি তোর ভুলগুলো থেকে শিখে আবার চেষ্টা করিস, তুইও একদিন পাকা ফলের মতো মিষ্টি সাফল্য পাবি।"

দাদুর কথা শুনে শুভর মনে নতুন আশা জাগল। সে স্থির করল, এবার সবকিছু নতুন করে শুরু করবে।

সেই দিন থেকেই শুভ তার ভুলগুলো বিশ্লেষণ করে নতুনভাবে পড়াশোনা শুরু করল। প্রথমে কঠিন লাগলেও ধীরে ধীরে সে এগিয়ে যেতে লাগল। কয়েক মাস পর, পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হলো। শুভ ক্লাসে প্রথম হয়েছে!

ব্যর্থতার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে সাফল্যের বীজ। শুধু সেই বীজটাকে যত্ন করতে জানতে হয়। শুভ বুঝতে পারল, জীবনে সবসময় সাফল্য আসবে না। কিন্তু ব্যর্থতা কখনো শেষ নয়, এটা শুধুই নতুন শুরুর গল্প।


শুভর জীবনে এখন যেন একটা নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। প্রথমবারের মতো সাফল্যের স্বাদ পেয়ে সে বুঝতে পারল, পরিশ্রম আর ধৈর্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তবে জীবনে যে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসে, সেটাও খুব দ্রুতই টের পেল।

একদিন স্কুলের হেডমাস্টার স্যার ঘোষণা দিলেন, "আগামী মাসে আন্তঃস্কুল বিজ্ঞান মেলা অনুষ্ঠিত হবে। আমাদের স্কুল থেকে অংশগ্রহণ করতে হবে। যার প্রকল্প সেরা হবে, তাকে স্কুলের পক্ষ থেকে পুরস্কৃত করা হবে।"

শুভ শুনেই উত্তেজিত হয়ে উঠল। সে ভাবল, এবার তার বানানো কিছু একটা দেখিয়ে দেবে। কিন্তু সমস্যা হলো, কী বানাবে সেটাই বুঝতে পারছিল না। বাসায় ফিরে খাতার পাতা নিয়ে নানারকম আঁকিবুকি করতে করতে এক সময় পুরো মাথা ফাঁকা লাগতে লাগল। হতাশ হয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকল।

এমন সময় মা ঘরে এলেন। শুভর মুখ দেখে তিনি সব বুঝতে পারলেন। পাশে বসে মৃদু হেসে বললেন, "তোর মনে আছে, তুই ছোটবেলায় পাখির বাসা বানিয়ে সবাইকে অবাক করেছিলি?"

শুভর চোখে যেন আলো জ্বলে উঠল। সে বলল, "হ্যাঁ মা! যদি এমন একটা যন্ত্র বানানো যায়, যা পাখিদের নিরাপদে থাকতে সাহায্য করবে?"

মা তার আইডিয়াকে উৎসাহ দিয়ে বললেন, "এটাই তো ভালো! কিন্তু মনে রাখ, কাজটা কঠিন হবে। মাঝপথে হাল ছাড়বি না।"

পরের কয়েকদিন শুভ নিজের পড়াশোনা শেষ করে রাতে বসে যন্ত্র বানানোর কাজে। তার বানানো 'পাখিদের স্বয়ংক্রিয় নিরাপদ বাসা' দেখতে দেখতে তৈরি হলো। প্রথমদিকে অনেক ভুল হয়েছে, কিন্তু দাদুর সেই গল্প মনে পড়ে গেল—"প্রতিবার ব্যর্থতা শেখায় নতুন কিছু।"

বিজ্ঞান মেলার দিন। শুভর প্রজেক্ট দেখে সবাই মুগ্ধ। বিচারকদের মধ্যে একজন তার কাজের প্রশংসা করে বললেন, "এত ছোট বয়সে এমন একটি আইডিয়া সত্যিই অসাধারণ।" শুভর প্রজেক্ট প্রথম স্থান অধিকার করল।

বাড়ি ফেরার পথে শুভ তার মাকে বলল, "মা, দাদু ঠিকই বলেছিলেন। ব্যর্থতা আসলে আমাদের পথ দেখায়। এবার আমি বুঝতে পেরেছি, যত বাধাই আসুক না কেন, চেষ্টা থামানো যাবে না।"

শুভর এই কথা যেন তার জীবনের মন্ত্র হয়ে গেল। সেদিন থেকে সে শুধু নিজের জন্য নয়, অন্যদেরও অনুপ্রেরণা দিতে শুরু করল।


 

Comments

    Please login to post comment. Login