হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ইসলামের শেষ নবী ও রাসূল। তিনি ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে মক্কা শহরের আল-আমিন পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আবদুল্লাহ এবং মাতা আমিনা। তাঁর জন্মের সময় তাঁর পিতার মৃত্যু হয়েছিল। জন্মের পরই মা আমিনাও মারা যান। ফলে তিনি দাদা আবদুল মুত্তালিব এবং পরে চাচা আবু তালিবের তত্ত্বাবধানে বেড়ে উঠেন।
শৈশব এবং কৈশোর
মুহাম্মদ (সাঃ) শৈশবে খুবই সাধারণ জীবন কাটিয়েছিলেন। তাঁর অল্প বয়সে মাকেও হারানোর পরে, তিনি চাচা আবু তালিবের তত্ত্বাবধানে বেড়ে ওঠেন। কৈশোরে তিনি একজন সত্, নির্ভীক এবং সৎ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন, যা তাঁকে "আল-আমিন" (বিশ্বাসযোগ্য) নামেও অভিহিত করেছিল।
বিবাহ ও পরিবার
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ২৫ বছর বয়সে একজন ধনী ব্যবসায়ী মহিলা, খাদিজা (রাঃ)-এর সঙ্গে বিবাহ করেন। খাদিজা (রাঃ) তাঁর প্রথম স্ত্রী ছিলেন, যাঁর মাধ্যমে তিনি সংসারের জীবন শুরু করেন। খাদিজার সাথে তাঁর সংসারে কয়েকটি সন্তান ছিল, তবে তাঁদের মধ্যে শুধু ফাতিমা (রাঃ) জীবিত ছিলেন।
ওহি প্রাপ্তি
৪০ বছর বয়সে, তিনি প্রথম বার গুহা হেরা (মক্কায়) অবস্থানকালীন সময়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে নবুওতের প্রথম ওহি গ্রহণ করেন। এই ওহি ছিল "ইকরা" (পড়), যা তাঁর নবুয়তের সূচনা ছিল। এরপর, মুহাম্মদ (সাঃ) ২৩ বছর ধরে মানুষের মাঝে ইসলামের বার্তা প্রচার করেন।
ইসলাম প্রচার
মুহাম্মদ (সাঃ) যখন মক্কায় ইসলামের বার্তা প্রচার শুরু করেন, তখন মক্কা সমাজের নেতৃবৃন্দ তাঁর প্রচারণায় বিরোধীতা করতে শুরু করেন। তাঁরা ইসলামকে প্রতিহত করার জন্য নানা ধরনের নির্যাতন এবং অত্যাচার চালান, কিন্তু হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাদের সামনে সত্যের কথা বলেই এগিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর প্রচার ও ইসলামের দিকে মানুষের আকর্ষণ একে একে বেড়ে যেতে থাকে।
হিজরত এবং মদিনা
মক্কায় মুসলিমদের ওপর অত্যাচারের কারণে, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে মদিনার দিকে হিজরত করেন। মদিনায় তিনি একটি ইসলামিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন। মদিনা ছিল একটি শক্তিশালী ইসলামিক রাষ্ট্র, যেখানে মুসলিমরা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারতেন।
যুদ্ধে অংশগ্রহণ
মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর জীবনে বেশ কয়েকটি যুদ্ধের মধ্যে অংশগ্রহণ করেন, যেমন বদর, উহুদ, এবং হানয়ীন যুদ্ধ। বদরের যুদ্ধ ছিল মুসলিমদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিজয়। যদিও উহুদ যুদ্ধে মুসলিমরা কিছুটা পরাজিত হয়, তবে তা ইসলামের শক্তি ও দৃঢ়তা বৃদ্ধি করেছে।
মৃত্যু
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ৬৩ বছর বয়সে ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে মদিনায় ইন্তেকাল করেন। তাঁর মৃত্যুর পর, ইসলাম পৃথিবীজুড়ে দ্রুত বিস্তার লাভ করে এবং তাঁর শিক্ষা মানুষের হৃদয়ে চিরকালীন স্থান করে নেয়।
ইসলামের মূল বার্তা
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জীবনের মূল লক্ষ্য ছিল আল্লাহর একত্ববাদ প্রচার এবং মানুষের মধ্যে ন্যায়, সৎ, দয়া, পরহেজগারি, এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। তাঁর শিক্ষা, সুন্নাহ ও হাদিস মুসলিম জীবনের পথপ্রদর্শক হিসেবে বিবেচিত হয়।
তিনি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা, এবং মানুষের মধ্যে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার এক অসীম দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন, যা আজও মুসলিম বিশ্বে অনুসৃত হচ্ছে।