গৌতম বুদ্ধ (সিদ্ধার্থ গৌতম) ছিলেন প্রাচীন ভারতের এক মহান ধর্মগুরু, দার্শনিক এবং বৌদ্ধধর্মের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর জীবন এবং শিক্ষা আজও বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা। বুদ্ধের জীবনী নিম্নরূপ:
১. জন্ম:
গৌতম বুদ্ধের জন্ম ৫৬৩ খ্রিষ্টপূর্বে বর্তমান নেপালের লুম্বিনি অঞ্চলে, এক রাজপুত পরিবারে। তাঁর জন্মের আগে তাঁর মা মহামায়া দেবী এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখেন, এবং এই স্বপ্নের ভিত্তিতে তিনি বিশ্বাস করেন যে তাঁর সন্তান পৃথিবীতে এক মহান ব্যক্তি হয়ে জন্মগ্রহণ করবে। বুদ্ধের আসল নাম ছিল সিদ্ধার্থ, এবং তিনি শাক্য বংশের সদস্য ছিলেন।
২. যুবক জীবন:
সিদ্ধার্থ খুবই আভিজাত্যপূর্ণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর বাবা, রাজা শুদ্ধোধন, সিদ্ধার্থকে একটি সুখী এবং নিশ্চিন্ত জীবন দিতে চেয়েছিলেন। ফলে, তিনি সিদ্ধার্থকে রাজপথের বাইরে কোনো দুঃখ-দুর্দশা দেখতে দেননি। কিন্তু, একদিন তিনি শহরের বাইরে গিয়ে দুঃখ, মৃত্যু এবং বয়স্ক মানুষের দৃষ্টি পান। এ ঘটনা তার জীবনযাত্রার দৃঢ় পরিবর্তন ঘটায় এবং সিদ্ধার্থ জীবনকে খোঁজার এক নতুন পথ শুরু করেন।
৩. ত্যাগ এবং সাধনা:
সিদ্ধার্থ অনুভব করেন যে, দুঃখের পরিত্রাণ পেতে তাঁকে গৃহত্যাগ করতে হবে। তাই তিনি ২৯ বছর বয়সে তাঁর সুখী এবং বিত্তশালী জীবন ত্যাগ করেন, এবং নিরাময় এবং মোক্ষের পথ অনুসন্ধান করতে বেরিয়ে পড়েন। তিনি প্রথমে বিভিন্ন শিক্ষকদের কাছে প্রশিক্ষণ নেন, কিন্তু তারা তাঁর প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি। এরপর তিনি কঠোর তপস্যা শুরু করেন, কিন্তু তাতে তাঁর কোনো চূড়ান্ত জ্ঞান লাভ হয়নি।
৪. বোধি বৃক্ষের নিচে ধ্যান:
একদিন, সিদ্ধার্থ বোধগয়া অঞ্চলের একটি বোধি গাছের নিচে ধ্যানে বসে থাকেন এবং তিনি দৃঢ় সংকল্প করেন যে, তিনি যদি সত্যকে না জানতে পারেন, তবে উঠবেন না। বহুদিন ধ্যানের পর, তিনি আত্মজ্ঞান লাভ করেন এবং "বুদ্ধ" (অর্থাৎ, "জ্ঞানী" বা "জ্ঞান লাভকারী") হন। এ সময় তিনি 'চতুরার্য সত্য' এবং 'অষ্টাঙ্গিক পথ' সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেন। এই জ্ঞান তাঁকে সমগ্র পৃথিবীকে শিক্ষা দেওয়ার প্রেরণা দেয়।
৫. বুদ্ধত্ব অর্জন:
বুদ্ধত্ব লাভের পর, গৌতম বুদ্ধ প্রথমে তাঁর পাঁচজন পূর্বসঙ্গী শিষ্যদের কাছে গিয়ে তাঁদের জ্ঞান বিতরণ করেন এবং তাঁদের বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করেন। এরপর, তিনি সারা ভারতে ভ্রমণ করে দুঃখের মূল কারণ এবং এর পরিত্রাণের উপায় সম্পর্কে শিক্ষা দেন। তিনি প্রচার করেন, কীভাবে মানুষের কষ্ট মেটানো সম্ভব এবং কীভাবে সকলের মাঝে সমান বোধ সৃষ্টি করা যায়।
৬. বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিষ্ঠা:
গৌতম বুদ্ধ তাঁর শিক্ষা, চারটি মহাসত্য এবং আটটি পরিপূর্ণ পথের ভিত্তিতে একটি নতুন ধর্ম গড়ে তোলেন, যা পরবর্তীকালে বৌদ্ধধর্ম হিসেবে পরিচিত হয়। এই ধর্মে তিনি অহিংসা, সত্যবাদিতা, দান এবং শুদ্ধ জীবনযাত্রার উপর গুরুত্ব দেন।
৭. পরিনতি:
বুদ্ধ ৮০ বছর বয়সে কুশিনগর (বর্তমান উত্তর প্রদেশ) অঞ্চলে পরলোকগমন করেন। তাঁর মৃত্যু "পরিনির্বাণ" নামে পরিচিত, যেখানে তিনি চিরস্থায়ী মুক্তি লাভ করেন।
৮. বৌদ্ধধর্মের প্রভাব:
গৌতম বুদ্ধের শিক্ষা এবং দর্শন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে, এবং আজও বৌদ্ধধর্মের অনুসারী লাখ লাখ মানুষ আছেন। তাঁর শিক্ষা বিশ্ব শান্তি, অহিংসা এবং মানবিক মর্যাদার প্রতি গুরুত্ব দেয়।
গৌতম বুদ্ধের জীবন এবং শিক্ষা মানবতার জন্য এক অমূল্য রত্ন, যা মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং শান্তির পথে পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করে আসছে।