Posts

গল্প

রোমান্টিক গল্প(আবার ভালোবাসবে তবে)

January 4, 2025

Nusaiba Nur

349
View

-'আপনার এই ধর্ষিতা মেয়েটাকে আমি বিয়ে করতে চাই মিস্টার ফারদিন ইসলাম। '

কথাটা শোনা মাত্রই ফারদিন ইসলাম চমকে উঠেন,তার দুই চোখ খুশিতে ঝলমলে হয়ে যায়!ফট করে তিনি মাথা তুলে সামনে দাঁড়ানো যুবকটির দিকে তাকান।

বয়স কতো হবে ২৫ কি ২৬ তবে দেখতে অনেকটাই হিরোদের মতো। তাকে দেখতে খানিকটা বিদেশিদের মতোই  লাগলো ফারদিন ইসলামের কাছে যার মূল কারণ হলো তার দুধ সাদা গাঁয়ের রং! আর লম্বায় পাঁচ ফুট নয়,দশ হবে হয়তো,তবে চেহারায় তার একটু বিদেশি বিদেশি ভাব আছেই।

চোখদ্বয় খানিকটা নীল,তবে সামান্য ছোট,আর  তার ডার্ক রেড ঠোঁটজোড়া দাঁত দিয়ে চেপে ধরেই তার দিকে তাকিয়ে আছে ছেলেটি!নিসন্দেহে ছেলেটি সুদর্শন,তবে তার মেয়ে ধর্ষিতা জেনে ও কেনো এই ছেলেটি বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে!

অন্য কোনো মেয়ের বাবা হলে হয়তো এতোক্ষণে কাজি ডেকে এনে বিয়ের পিরিতে বসিয়ে দিতো মেয়েকে,কিন্তু তিনি কেনো জানি না সেটা করতে পারলেন না!

তবে অদ্ভুত ভাবে তার কেনো জানি ছেলেটাকে খুব একটা চেনা চেনা লাগছে, এরইমধ্যে ছেলেটি গলা খেঁকারি দিয়ে তার সামনে এসে তীক্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বাঁকা হেঁসে  বলে,,,,

--'আপনার কি এই ব্যাপারে অমত আছে মিস্টার ফারদিন?'তবে আমার মনে হয় এই মুহুর্তে আপনার অমত থাকলেও কিছু করার নেই!কজ,সেটা আপনার থেকে ভালো কেউ জানে না!

ফারদিন ইসলাম তার বিচক্ষণ দৃষ্টিতে একবার তাকায় তবে তার কাছে এখন আসলেই কোনো উপায় নেই। যদিও ছেলেটির কথা বার্তা গুলো বুলেটের মতো কিন্তু তার মেয়ের জন্য ছেলেটি নিসন্দেহে ভালো হবে বলে তার মনে হলো!

তবে শুধু মাত্র মেয়ের সন্মানের কথা ভেবে মেয়েকে না জেনে শুনে একটা ছেলের হাতে তুলে দেওয়া কি ঠিক হবে? কিন্তু অন্য কোনো ছেলেও তো তার মেয়েকে আর বিয়ে করবে বলে মনে হয় না!

ফারদিন ইসলাম ছেলেটাকে ইশারায় তার পাশে বসতে বললেন।ছেলেটি হয়তো এতোক্ষণ এটার অপেক্ষাই ছিলো,ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাঁসি নিয়ে ফারদিন ইসলামের পাশের সোফায় পাঁয়ের উপর পাঁ রেখে বসে পড়লো।

ফারদিন ইসলামকে দেখে মনে হলো তিনি ব্যাপারটা পছন্দের সহিত নিলেন না, কিন্তু তিনি বর্তমানে নিজেকে সামলিয়ে মুচকি হেঁসে বললেন,,,

--'কে তুমি বাবা?' আগে তো কখনো দেখেছি বলে মনে হচ্ছে না।
--'আদ্রাণ রহমান শুভ্র!'

নামটা শোনার সাথেই ফারদিন ইসলাম চমকে উঠলেন,শুভ্র  মনে হয় বেশ মজা পেলো!ঠোঁটের কোণে হাঁসি নিয়ে এবার বলে উঠলো সে,,,

--'এনি প্রবলেম আঙ্কেল?' আপনি হঠাৎ এভাবে চমকে উঠলেন যে? আমরা কি একে অপরকে আগে থেকে চিনি?

ফারদিন ইসলাম ঘামতে শুরু করলেন।তাকে ঘামতে দেখে পাশের শুভ্র  এবার নিজে থেকে বলতে শুরু করলো,,,
--'নাম তো শুনলেনই, আর রইলো আমায় আগে থেকে দেখার কথা? হয়তো কখনো দেখা হয়েছিলো।

--'মা-ন-নে?'
ফারদিন ইসলাম থেমে থেমে বলেেন।

ছেলেটি এবার চমৎকার হেঁসে বললো,,,
--'রহমান গ্রুপ এন্ড ইন্ডাস্ট্রির ওনারের নাম জানেন?'
--'সফিউল রহমান?'
--'উনি তো এখন আর নেই, নতুন ওনার এসেছে তিন মাস আগেই!' যদিও সে ওনার পরিবারেরই একজন।আপনি দেখছি একই শহরে থেকে ও কিছু জানেন না?
--'আসলে খেয়াল করিনি?' তবে তুমি যে সে বাড়িরই ছেলে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

আবার চমৎকার ভাবে হাঁসলো শুভ্র !ফারদিন ইসলাম শুভ্রকে খুঁটিয়ে খাঁটিয়ে দেখলেন,শুভ্র  হয়তো সেটা ও লক্ষ্য করলো কিন্তু তার ঠোঁটের কোণে সেই চমৎকার হাসি সরলো না!

--'আপনি দেখছি কিছুই জানেন না? নাকি জেনে ও না জানার ভান করছেন? তবে আপনার সম্পর্কে যেটা শুনেছিলাম, আপনি দেখছি তার থেকে অনেকটায় আলাদা।
--'না আসলে তুমি যেমনটা ভাবছো তেমনটা নয়,গত দুই মাস থেকে একটু ঝামেলায় আছি তো তাই খেয়াল করিনি।' আমার সম্পর্কে শুনেছিলে মানে?
--'ঝা-মে-লা?'
বানান করে বলেই আবার তার ঝলমলে দাঁতদ্বয় নিয়ে বাঁকা হাসলো শুভ্র , কিন্তু ফারদিন ইসলামের শেষের কথাটির জবাব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করলো না সে।ফারদিন ইসলাম অদ্ভুত ভাবে তাকালেন তার দিকে।তার কেনো জানি ছেলেটাকে অদ্ভুতই মনে হচ্ছে,সাথে খানিকটা বেয়াদব ও।

--'নাকি রহমান ম্যানশনের অনেককিছুই আপনার জানা,জাস্ট লাইক গুপ্ত কিছু!'

খানিকটা এগিয়ে এসে ফিসফিস করে বললো শুভ্র!' ফারদিন ইসলাম চমকে বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলেন।

--'আরে আঙ্কেল ওভাবে তাকানোর মতো কিছু হয়নি আ'ম জাস্ট কিন্ডিং!'
ফিঁক করে হেঁসে দিয়ে বললো শুভ্র ।ফারদিন ইসলামের বুকের ভেতর থেকে একটা বড় পাথর নেমে গেলো বলে মনে হলো,তিনি মনে মনে খুশি হয়ে যান।

--'কি আঙ্কেল আপনার মেয়েকে বিয়ে দিবেন তো নাকি?'
--'না না,এ কি করে হয়?'
ফারদিন ইসলামকে সম্পূর্ণ কথা শেষ করতে না দিয়ে শুভ্র আবার বললো,,,

--'কেনো হয় না বলেন তো?'
--'না আসলে আমি তো তোমার সম্পর্কে তেমন কিছু জানি না তাই আর কি!'

--'ওহ আচ্ছা ,আমার পরিচয় ফুল ভাবে দিয়ে নেই আগে তাহলে কি বলেন? মাই সেল্ফ,,,আদ্রাণ রহমান শুভ্র, সান অফ শাফায়াত রহমান এন্ড আদিবা রহমান,গ্রান্ডসান অফ সফিউল রহমান। '

--'তুমি শাফায়াতের ছেলে?'
আবার ঘামতে শুরু করলো ফারদিন ইসলাম! 
--'ইয়েস আঙ্কেল, শাফায়াত রহমান ইজ মাই ড্যাড।'কেনো আপনি ওনাকে চেনেন নাকি?

কথাগুলো মজার সহিত বললো শুভ্র, সে হয়তো ব্যাপারটাতে অনেক মজা পাচ্ছে! এই যে তার একটা করে প্রশ্নতেই ফারদিন ইসলাম একটু একটু করে ঘামছে,নয়তো ভয় পাচ্ছে।

--'না আসলে হ্যা!'
--'ও ওয়াও গ্রেট,তাহলে তো সুবিধাই হলো!' আপনি আমার ড্যাডকে চেনেন,উনি ও নিশ্চয়ই আপনাকে চেনে এম আই রাইট?
--'হুম!'
ঢোক গিলে বললো ফারদিন ইসলাম। শুভ্র বাঁকা হেঁসে বললো,,,
--'কিন্তু কিভাবে চেনেন ড্যাডকে আপনি?' 
--'বন্ধু ছিলো একসময় আমার!'
--'একসময় ছিলো কেনো?'
--'সে তো আর বেঁচে নেই তাই।'

শুভ্র এবার শান্ত হয়ে গেলো,শান্তের সহিত বললো,,,
--'হুম,তবে জানেন তাহলে, যাক আমি ভাবলাম এটা ও হয়তো আপনার অজানা!' 
--'হুম,তুমি হঠাৎ আমার মেয়েকে বিয়ে করতে চাও কেনো?' জানোই তো আমার মেয়ে ধর্ষিতা।

এবার অদ্ভুত ভাবে হাসলো শুভ্র। 
--'আপনার মেয়েকে আমার ভালো লেগেছে তাই,আর আদ্রাণ রহমান শুভ্রের যেটা একবার ভালো লাগে সেটা তার চাই ই চাই।' আপনার মেয়ে ধর্ষিতা হোক বা অন্য কিছু তাতে আমার কিছু যায় আসে না,ওকে আমার বিয়ে করতে হবে এটাই জানি আমি।আর সেটা আপনি সম্মতি দিলেও আর না দিলেও।

ভরকে গেলেন ফারদিন ইসলাম, কি বলে এই ছেলে!
--'কিন্তু তোমার পরিবার?'
--'আমার পরিবার আমার কথা ফেলবে না, আপনি রাজি হয়ে যান আগে তারপর বাকিটা দেখা যাবে।'
--'কিন্তু?'
--'আহা কোনো কিন্তু নয়, আপনার মেয়েকে কষ্টের ক ও পেতে দেবো না কখনো!'

বাঁকা হেঁসে বললো শুভ্র। ফারদিন ইসলাম চিন্তায় পড়ে গেলেন।ফারদিন ইসলামকে চিন্তিত দেখে শুভ্রের ঠোঁটের হাসিটা আরও একটু চওড়া হলো যেনো।সে সামনের টেবিল থেকে পেন আর পেপার নিয়ে ফটাফট কিছু একটা লিখে বললো,,,
--'আপনি চাইলে সময় নিতে পারেন আঙ্কেল আমি আমার ফোন নাম্বার লিখে দিয়ে গেলাম যখন ইচ্ছে ফোন দিয়ে আপনার ডিসিশন জানিয়ে দিবেন!আমি অপেক্ষায় থাকবো আপনার ফোনের।এখন চলি!

--'আরে এভাবে না খেয়ে যাচ্ছো কেনো?' আর একটু....
--'বাড়ির জামাই হয়ে গেলে একেবারে খাবো কেমন আজকে আসি ডিয়ার হবু শশুর বাবা!'

ফারদিন ইসলাম হাঁ করে শুভ্রের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছেন,ছেলেটাকে তার চমৎকার লেগেছে! কিন্তু তার ভয় হচ্ছে পুরোনো কিছু অতীত নিয়ে!তার আসলে কি করা উচিত ভেবে পাচ্ছেন না তিনি।আর অপর দিকে শুভ্রের ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি বিদ্যমান!

--'সময় এসে গেছে নিজের পুরোনো কিছু হিসেব নেওয়ার,আজকে থেকে আপনার জীবনটা ভয় ও কাঁপা কাঁপি দিয়ে ভড়িয়ে দিবো ফারদিন ইসলাম। আর এটা আদ্রাণ রহমান শুভ্রের না শাফায়াত রহমানের  ছেলের প্রমিজ।কেবল তো শুরু এখন থেকে প্রতিদিন আপনার চিন্তায় কাটবে।আজকে এই বাড়িতেই বলে গেলাম আমি।

বিরবির করে বলতে বলতে এগিয়ে যাচ্ছে শুভ্র! আর ফারদিন ইসলাম হাঁ করেই তাকিয়ে আছে তার যাওয়ার দিকে।এরইমধ্যে ফট করে পেছনে ঘুরলো শুভ্র, হকচকিয়ে গেলেন ফারদিন ইসলাম! হাসার চেষ্টা করলেন তিনি, শুভ্র বাঁকা হেসে "বায়" জানিয়ে আবার সামনে এগিয়ে গেলো।আর মনে মনে ভাবলো,,,,

--'বিয়েতো আমি এই বাড়ির মেয়েকেই করবো সেটা যেভাবেই হোক না কেনো,ইউ জাস্ট ওয়েট এন্ড সি!'

বিরবির করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছিলো শুভ্র কিন্তু, সামনে থেকে যে কেউ একজন ছুটে আসছিলো সেটা খেয়াল করেনি সে।তাই তো  সামনের মানুষটির সাথে ধাক্কা খেয়ে উল্টে পড়লো সে! পড়লো তো পড়লো সাথের মানুষটাকে নিয়েই পড়ে গেলো।

ব্যাথায় " উফফ " জনিত একটা শব্দ বের হয়ে গেলো শুভ্রের মুখ দিয়ে।তার মতে সামনের মানুষটি বর্তমানে তার কলিজার উপরে বসে আছে! চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে রেখেছে ব্যাথায়  সে তাই সামনের মানুষটি আসলে ছেলে না মেয়ে সেটা সে এতোক্ষণে বুঝতে না পারলেও এখন চুল মুখের উপর এসে পড়তেই সে বুঝতে পারলো,আসলে তার কলিজার উপরে একটা মেয়ে বসে আছে।

#চলবে🍁

#আবার_ভালোবাসবে_তবে❤️
নুসাইবা নূর
#পর্বঃ০১

Comments

    Please login to post comment. Login