ইতিহাসে যেসকল মানুষ ক্রীতদাসের জীবন থেকে উঠে এসে বিশ্বব্যাপী কীর্তি গড়ে গেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন সুলতান শামসুদ্দিন ইলতুৎমিশ। ইলতুৎমিশের জীবনের শুরুটা কিন্তু বেশ কঠিন ছিল। তিনি তুর্কিস্তানে জন্মগ্রহণ করেন এবং একসময় দাস হিসেবে বিক্রি হন। পরে তার প্রতিভা এবং সাহস দেখে কুতুবউদ্দিন আইবক তাকে কিনে মুক্তি দেন এবং তাকে নিজের সেনাপতি করেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইলতুৎমিশ তার বুদ্ধি, নেতৃত্বগুণ এবং যুদ্ধজয়ের মাধ্যমে কুতুবউদ্দিনের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। আইবক তার কন্যাকে ইলতুৎমিশের সাথে বিয়ে দেন। কুতুবউদ্দিনের মৃত্যুর পর ১২১১ সালে ইলতুৎমিশ দিল্লির সুলতান হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করেন।
ইলতুৎমিশের শাসনামলের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল চেঙ্গিস খানের নেতৃত্বে মঙ্গোল আক্রমণ। তিনি বুদ্ধি ও কূটনৈতিক কৌশলের মাধ্যমে মঙ্গোলদের হাত থেকে দিল্লি সুলতানিকে রক্ষা করেন। তার আমলে দিল্লি সুলতানি অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা পায়। কুতুব মিনারের অসমাপ্ত কাজ তিনি করেন। আজমীর দরগাহর নির্মাণ শুরু হয় এই মামলুক সুলতান-এর শাসনামলে। দিল্লীর সুলতানদের মধ্যে তিনি সর্বপ্রথম খাঁটি আরবি মুদ্রার প্রবর্তন করেন।
ইলতুৎমিশের আরেকটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত ছিল তার মেয়ে রাজিয়া সুলতানাকে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসেবে মনোনীত করা। তৎকালীন পিতৃতান্ত্রিক সমাজে এটি ছিল একটি অসাধারণ এবং সাহসী সিদ্ধান্ত। রাজিয়া পরবর্তীতে দিল্লি সুলতানির প্রথম এবং একমাত্র নারী শাসক হন।
ইলতুৎমিশের জীবন এবং শাসন আমাদের শেখায় যে কঠিন পরিশ্রম, ধৈর্য এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে যেকোনো বাধা জয় করা সম্ভব।