আমার নাম আকাশ । রাতের বেলা একটু বাড়িড় বাইরে বের হলাম । একটু ফাকা রাস্তায় হাঠতে হাঠতে হঠাৎ চমকে উঠলাম । কারন আমার থেকে একটু দূরেই ল্যামপস্টের নিচে বসে আছে আমার বন্ধু রোমান । আর কিছু না ভেবে আমি চলে গেলাম আমার রোমানের কাছে ।
ঘটনা২:
আমি : কিরে বন্ধু তূই এই জায়গায় কি করছিস ? আর এতদিন কই ছিলি তূই,তোর কাপড়ে এত ময়লা কেন সব বল তো আমাকে ।
রোমান : আমি এখন এমন একজনের সাথে থাকি যাকে তোরা কেউ দেখতে পারবি না । আর এমন জীবনেই আমি ভালো আছি ।
আমি : কি জীবন আর কার সাথেই বা তূই থাকিস । তোর কোথার আমি কিছুই বুঝতেছি না । আর তূই না অন্ধকারকে ভয় পাস তাহলে এত রাতে তূই বাইরে আছিস তোর ভয় করছে না ।
রোমান : না আমি এখন অন্ধকারকে ভয় পাই না । সে আমাকে ভয় পেতে দেয় না।
আমি : আরে কে তোকে ভয় পেতে দেয় না । দয়া করে সব বল আমাকে ।
রোমান : আচ্ছা শোন তাহলে পূরো ঘটনা ।
আমি : হুম বল!
ঘটনা৩:
আমার নাম রোমান । আমি ছোট থেকেই অন্ধকারকে প্রচুর ভয় পাই । চাকরির ইনটারভিউ দিতে আমাকে ঢাকায় যেতে হবে । তাই অনলাইনে রাত ১০ টার ট্রেনের টিকিট বুক করে ফেলি । ট্রেনের কামড়ায় প্রবেশ করে নির্ধারিত আসনে আসন গ্রহন করি । কখন যে ঘুমিয়ে গেছি জানি না । ঘুম ভাংতেই আতঙ্কে আমার শরীর শিউরে উঠল । কামড়ার মধ্যে আমি ছাড়া আর কেউ নেই । কামড়ার সব বাতি বন্ধ । আমি চিৎকার করতে লাগলাম ঠিক তখনি চোখে পড়ল আমার সামনে একটি অবয়ক দাড়িয়ে আছে এবং ধীরে ধীরে আমার দিকেই অগ্রসর হচ্ছে । আমার ভয়ের মাত্রা দ্বিগূন বেড়ে গেল । হঠাৎ মনে পড়ল আমার ফোনের ফ্লাসের কথা । মোবাইল বের করতে করতে অবয়কটি আমার একদম নিকটে চলে আসল । আমি ফ্লাস বের করেই কিছু মূহূর্তের জন্য স্থির হয়ে গেলাম । আমার সামনে দাড়িয়ে আছে এক অপরুপ সুন্দরী নারী । যেই সৌন্দর্য সবাইকেই মুগ্ধ করে ফেলবে আর আমিও তার ব্যাতিক্রম ছিলাম না । আমি মেয়েটাকে জিগ্গেস করলাম কে আপনি । মেয়েটি জবাবে বলল ভয় পেয়েন না, আমিও আপনার মতোই একজন মানুষ । পাশের কামড়ায় আমি একা ছিলাম আপনার চিৎকার শুনে এখানে আসলাম । আপনি কি অন্ধকারে ভয় পান নাকি ? আমি একটূ লজ্জা পেয়ে বললাম হ্যা । মেয়েটি বলল তো ভিতুর ডিম আপনার নাম কি । আমি জবাবে বললাম রোমান,আপনার? মেয়েটি বলল আমার নাম আলো । তারপর সারা রাস্তায় আমরা একসাথে গল্প করতে করতে গেলাম ।এবং দুইজন মোবাইল নাম্বার দিয়ে বিদায় নিলাম ।
ঘটনা৪:
আকাশ : হা হা হা, তারপর কি তোরা দুইজন প্রেমে পড়ে গেছিস নাকি?
রোমান : হ্যা, ঠিক বলেছিস । সেদিনের পর থেকে আমরা প্রতিদিন যোগাযোগ করতেছিলাম । আস্তে আস্তে আমরা দুইজন দুইজনকে ভালোবাসতে শূরু করি । একসময় আমরা প্রেমে পরে যাই । আমরা প্রতিদিন মোবাইলে যোগাযোগ করতাম । একদিন আমি আলোকে বললাম চলো আমরা দুইজনএক হয়ে যাই । আমি তোমাকে আমার জীবনসঙ্গী বানাতে চাই । সারাটা জীবন তোমার সাথে কাটাতে চাই ।
আকাশ : তারপর সে কি বলল, আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারব না আমার অন্য কেউ আছে। নিশ্চই এগুলো বলেছে হা হা হা ।
রোমান : হ্যা তোর কথাই ঠিক কিন্তু এতটাও ঠিক না । সে বলেছিল আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারব না কিন্তু তার কারন ছিল ভিন্ন । এতদিনে আলো আমার অনেক কাছের মানুষ হয়ে গেছিল । আমার কষ্টে নিজে কষ্ট পেত আমি হাসলে সেও হাসত । অনেক সময় কাটাতে লাগলাম দুইজন । এখন আমরা দুইজন দুইজনকে ছাড়া কিছুই বুঝি না । এমনি এক মাঝরাতে আমরা ভিডিও কলে কথা বলছিলাম । কথা বলতে বলতে হঠাৎ বিদ্যুত চলে গেল । আমি অন্ধকারে চিৎকার করে উঠলাম । এমন সময় আলো বলল ভয় পেয় না, আমি আছি তোমার সাথে । এই কথা বলে আলো চেয়ার থেকে উঠে তার সামনে একটি প্রদিপ জ্বালিয়ে দিল । আমি মুগ্ধ হয়ে এক দৃষ্টিতে তার দিকেই তাকিয়ে রইলাম ।
আলো : কি দেখছ?
আমি : আলো ! মায়াবি আলো ।
সত্যিবলতে তখন আমার ভিতর থেকে সব ভয় চলে গিয়েছিল । আমি শুধু একমনে তার দিকেই তাকিয়ে ছিলাম । তারপর অনেক কথা বলতে বলতে আমি বললাম আমরা বিয়ে করে ফেলি ।
আলো: না রোমান এটা কখনো হবে না । আমরা দুইজন কখনো এক হতে পারব না ।
আমি : কিন্তু আমরা কেন এক হতে পারব না?
আলো : আমি কালকে তোমাকে এর কারন বলব । কালকে কি আমরা দুইজন দেখা করতে পারি ?
আমি : হ্যাঁ, কেন নয় । বল কোন জায়গায় দেখা করব ।
আলো : যেখানে আমরা প্রতিদিন দেখা করি । সন্ধ্যার সময় চলে এসো ।
আমি : আচ্ছা ঠিক আছে।
এই বলে আমরা বিদায় নিলাম ।
আকাশ : তো দেখা করিস নি ওর সাথে?
আমি : না । তাকে সেখানে পাই নি ।
আকাশ : হা হা হা , আমি নিশ্চিত যে ওই মেয়ে অন্য কারো সাথে পালিয়ে গেছে ।
আমি : তুই একটু থাম তো । আমার কথা শেষ করতে দে ।
আকাশ: আচ্ছা ঠিক আছে বল ।
ঘটনা ৫:
রোমান: আমি সন্ধ্যার সময় সেখানে উপস্থিত হই কিন্তু তাকে পাই নি । অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পরে নিরাশা হয়ে বাসায় ফিরলাম । তারপর প্রায় এক সপ্তাহ তার কোনো খোঁজ পাইনি আমি । তার খোঁজ নেয়ার অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু আমি ব্যার্থ ছিলাম । কিছুদিন পর তার একটি মেসেজ আসে আমার মোবাইলে ।
আকাশ : কি লেখা ছিল সেই মেসেজে যে আমি অন্য একটা ছেলের সাথে পালিয়ে গেছি হা হা হা ।
আমি : শোন তাহলে।
আকাশ : হুম বল।
আমি: যখন আমি মেসেজটি দেখলাম আমি আমার চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না । মেসেজে যেভাবে লেখা ছিল ওইভাবেই বলছি । মেসেজে লেখা ছিল যে, রোমান কেমন আছো তুমি? জানি তুমি ভালো নেই । আমি তোমাকে বলেছিলাম সন্ধায় তোমার সাথে দেখা করে আমরা কেন কখনো এক হতে পারব না সেই কারন বলব । কিন্তু সেটা আর হয়ে ওঠে নি। আমি আজকে সব কিছু বলব তোমাকে । আমরা কখনো এক হতে পারব না কারণ আমরা দুইজন যদি বিয়ে করি তাহলে তুমি বেশিদিন আমাকে তোমার কাছে পাবে না । আসলে ছোট বেলা থেকেই আমি অনেক বড় রোগে আক্রান্ত । ডাক্তার বলেছিল আমি বেশিদিন এই পৃথিবীতে থাকতে পারব না । যেদিন আমাদের দেখা করার কথা ছিল সেদিন আমি অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ি আর আমাকে হসপিটালে ভর্তি করানো হয় তাই আমি সেদিন তোমার সাথে দেখা করতে পারি নি । ডাক্তার বলেছে আমার হাতে শুধু আজকের দিনটাই আছে । আজকে যেকোনো মুহূর্তে আমাকে এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে হবে । তুমি আমাকে ভুলে যেও না । তোমার আলো সবসময় তোমার হয়েই থাকবে । তোমার আলো কখনো তোমাকে অন্ধকারকে ভয় পেতে দিবে না । তোমার আলো সবসময় তোমাকে আকাশের চাঁদ 🌙 হয়ে তোমাকে আলোর পথ দেখাবে। আমি চলে গেলেও তুমি একা নও আমি সবসময় তোমার আলো হয়ে তোমার পাশে থাকব ।
এই বলে রোমান পুরো স্থির হয়ে গেল । আসলে আমি নিজেও আলোর সম্পর্কে কত মজা করলাম । তারপর রোমানের দিকে চোখ পড়তেই দেখলাম রোমানের চোখ থেকে অনবরত পানি পড়ছে । হঠাৎ রোমান বলে উঠলো, আচ্ছা বন্ধু আমাকে এখন যেতে হবে আমার আলো আমার কাছে আসবে এখন । এই বলে রোমান চলে গেল। রোমান কিছুদূর যাওয়ার পর যা দেখলাম তা দেখার পর আমার শরীরের সমস্ত রক্ত হিম হয়ে গেল । রোমানের পাশে দাঁড়িয়ে আছে এক অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর নারী অবয়ক। তার দুইটি ডানা থেকে আলোক রশ্মি নিঃসৃত হচ্ছে। তখনই মনে পড়লো আলোর সেই মেসেজের কথা যেখানে লেখা ছিল আমি চলে গেলেও তুমি একা নও আমি তোমার আলো হয়ে সবসময় তোমার পাশে থাকব ।
( সমাপ্ত )