সাহিত্য মানুষের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং তার ব্যাপ্তি অনেক বিশাল। সাহিত্যের রস আস্বাদন ব্যতিত জগত এবং জীবনের সবকিছুতে যেন অপূর্ণতা থেকে যায়। তাই যুগ যুগ ধরে মানুষ তার চিন্তা চেতনা ও মননশীলতার বিকাশের লক্ষ্যে শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে লালন করে আসছেন। সাহিত্যের রস আস্বাদন করে নিজকে সমৃদ্ধ করেছেন। অবলোকন করতে পারছেন ব্যক্তি, সমাজ,জাতির বা নৈসর্গিকের নানাবিধ বিষয়গুলো। আর এই সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে কাব্য বা কবিতা। এসবের প্রতি দৃষ্টি রেখেই কবি এস এম শাহনূর তাঁর 'স্বর্গছায়া' কাব্যগ্রন্থটিতে দেশ-সমাজ বা জাতির অসামঞ্জস্যতা, নিপীড়ন, শোষণ-বঞ্চনা, দেশপ্রেম, প্রকৃতি প্রেম, স্রষ্টার প্রতি অগাধ ভালোবাসা, ভন্ডামির মুখোশ উন্মোচন, মানবতাই শ্রেষ্ঠ ধর্ম, প্রেম-বিরহ ইত্যাদি বিষয় বিভিন্ন আঙ্গিকে কবি অত্যন্ত নিখুঁত ভাবে তাঁর প্রতিটি লেখায় প্রতিফলিত করেছেন যা পাঠে আমি অত্যন্ত বিমোহিত। বর্তমান সময়ে তিনি একজন সফল, সুপরিচিত আলোচিত কবি। দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তিনি সুপরিচিত।
কবি তাঁর কাব্যে "ইচ্ছে ঘুড়ি "কবিতার এক অংশে লিখেছেন -
"ইচ্ছে করে গাঁয়ের ধূলো অঙ্গে মাখি,
অদের কাদা মাটি-জলে মিশে থাকি।
মন হতে চায় নীল আকাশের মুক্ত পাখি
বটের ছায়ায় দুর্বাঘাসে ঘুমিয়ে থাকি"
এই পঙ্তির মাধ্যমে কবির গাঁয়ের প্রতি সেই প্রকৃতির প্রতি যে নাড়ির অগাধ টান তা সহজেই অনুমেয়।
আরেকটি কবিতায় লিখেছেন -
"মীর জাফরের উত্তর সূরি,
বাঙালি সমাজে ভূড়ি ভূড়ি,
ঘসেটি বেগমের ছল-ছাতুরী
রূপ লভিছে মহামারি।"
এই লেখায় যেন বর্তমান বাঙালির বাস্তব স্বরূপ উৎঘাটন হয়েছে।
তেমনি বিশ্বাসী চোখ কবিতায় কবি বলেছেন -
"এমন ষোড়শী হলে কে দিবে গো ঠেলে
ধরে রাখবে আষ্টেপৃষ্ঠে শত জনমভর,
আমি তো নামিনি মোহের বারিধি কূলে
বাঁধিনি ক' দুজনে মিছে বালুচরে ঘর"।
এখানে কবি প্রিয়তমার প্রতি রূপের মোহ বা ছলনা নয় গভীর ভালোবাসার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। যা হৃদয়ে নাড়া দিয়ে যায়।
তদ্রুপ, 'কন্যা স্বর্গের ছায়া' কবিতায় কবি নারী জাতিকে মমতাময়ী, প্রিয়তমা, আলোকবর্তিকা, মল্লিকলিকা ইত্যাদি বিশেষণে বিশেষিত করে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। পাশাপাশি বাল্যবিবাহ বন্ধের ইঙ্গিত রেখে তাদেরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার আহ্বান করেছেন যা সত্যিই প্রংসার দাবি রাখে।
"মসজিদে না যেও মুসলিম,গীর্জায় খ্রিস্টান,
অন্তর দেখেন খোদা না চাহে এত প্রতিষ্ঠান।"
এখানে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বরং অন্তর আত্মার ইবাদত করে মানুষকে মানবতায় বলিয়ান হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কবি। যা হওয়াটাই কাম্য।
'করোনা মুক্ত বিশ্ব চাই' কবিতায় কবির তাওহীদের প্রতি, সৃষ্টিকর্তার প্রতি অগাধ বিশ্বাস এবং অনুরাগের চমৎকার বহিঃপ্রকাশ দেখতে পাই।
'স্বদেশের ডাক' কবিতায় কবি বলেছেন -
"ঘরের ছেলে ঘরে ফিরি দেশের ছেলে দেশে,
মোহ ছাড়া কী আছে বলো এ দূর প্রবাসে।"
কবি তার এই লেখায় নিজ মাতৃভূমির প্রতি গভীর ভালোবাসা ব্যক্ত করেছেন। যা পাঠে সত্যিই আমি বিমোহিত হলাম। পুরো বইটি পাঠান্তে শব্দ- বাক্যের ভাঁজে ভাঁজে যেন আমি নিজকে হারিয়েছিলাম।
আশা রাখি কবি ড. এস এম শাহনূরের 'স্বর্গছায়া' কাব্যগ্রন্থটি পাঠকের হৃদয় জয় করতে সক্ষম হবে ইনশাআল্লাহ। পরিশেষে কবির প্রতি রাখছি আমার হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে অপরিসীম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। আমি কবির উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি। পাশাপাশি তাঁর চিন্তা চেতনার সোনালী ফসল 'স্বর্গছায়া' কাব্যগ্রন্থের বহুল প্রচার ও পাঠকপ্রিয়তা আশা করছি।
লেখক:
আসাদুজ্জামান খান মুকুল
কবি ও শিক্ষক।