Posts

গল্প

অরণ্যের পথচলা

January 6, 2025

Naznin sultana Dina

24
View

অরণ্যের পথচলা

গ্রামের এক ছোট্ট ছেলে অরণ্য। সে ছিল খুবই চঞ্চল ও কৌতূহলী। অন্য দশজনের মতো পড়াশোনায় খুব ভালো না হলেও তার মনে সবসময় কিছু নতুন করার আগ্রহ ছিল। বাবা-মা চেয়েছিলেন অরণ্য যেন স্কুলের পরীক্ষায় ভালো করে পাশ করে। কিন্তু অরণ্যের মন পড়ার চেয়ে বেশি ছিল প্রকৃতির রহস্য উদঘাটনে।

একদিন, গ্রামের এক কাকার কাছ থেকে অরণ্য শুনলো যে শহরে একটি বিজ্ঞান মেলা হচ্ছে। অরণ্য ঠিক করলো যে যেভাবেই হোক সে মেলাতে যাবে। অনেক কষ্টে বাবা-মাকে রাজি করিয়ে সে মেলায় পৌঁছালো। সেখানে গিয়ে সে দেখলো নানা ধরণের প্রযুক্তি, নতুন উদ্ভাবন এবং বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর প্রদর্শনী।

মেলায় একটি রোবটিক্স স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে অরণ্য যেন এক নতুন জগতে প্রবেশ করলো। তার মধ্যে জেগে উঠলো এক দুর্দমনীয় আগ্রহ—রোবট বানানোর। বাড়ি ফিরে সে তার অল্প পয়সা জমিয়ে রোবটিক্স শেখার জন্য প্রয়োজনীয় বই ও সরঞ্জাম কিনলো। প্রতিদিন স্কুল থেকে ফিরে সে তার ছোট ঘরে বসে রোবট বানানোর চেষ্টা করতো।

প্রথমে অনেকবার ব্যর্থ হলো। কিন্তু অরণ্য কখনও হাল ছাড়েনি। একদিন, অবশেষে তার তৈরি রোবট চললো। সেই আনন্দের মুহূর্তে তার চোখে জল চলে এলো। এরপর থেকে তার রোবট নিয়ে কাজ করার পথ আরও সহজ হলো। তার উদ্ভাবনী শক্তি তাকে নিয়ে গেলো এক নতুন উচ্চতায়।

কয়েক বছর পর, অরণ্য তার নিজের একটি রোবটিক্স কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করলো। তার তৈরি রোবটগুলি দেশের বিভিন্ন শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহার শুরু হলো। তার কোম্পানির নাম ছড়িয়ে পড়লো সারা দেশে। অরণ্য শুধু নিজের জীবনেই সফল হলো না, তার উদ্ভাবনী চিন্তা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে হাজারো মানুষের জীবনেও নতুন সম্ভাবনার আলো জ্বালালো।

অরণ্যের এই সফলতার গল্প আমাদের শেখায়, ইচ্ছাশক্তি আর পরিশ্রমের মাধ্যমে যেকোনো স্বপ্নকেই বাস্তবে রূপ দেওয়া সম্ভব। ব্যর্থতা কখনোই শেষ নয়, বরং তা হলো সফলতার পথে একটি সোপান মাত্র।

অরণ্যের কোম্পানি যখন সফলতার শিখরে, তখন সে ভাবতে শুরু করলো কীভাবে তার জ্ঞান আর উদ্ভাবন আরও বেশি মানুষের উপকারে আসতে পারে। সে উপলব্ধি করলো যে, শুধুমাত্র রোবটিক্স নয়, প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন করাও তার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

একদিন অরণ্য একটি নতুন প্রকল্প শুরু করার সিদ্ধান্ত নিলো—গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রযুক্তি শিক্ষা।

সে চেয়েছিল গ্রামীণ ছেলেমেয়েরা যেন আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হতে পারে এবং তাদের নিজেদের উদ্ভাবনী শক্তি বিকশিত করতে পারে। তার এই প্রকল্পের নাম রাখলো "তরঙ্গ"

অরণ্য নিজের গ্রামের স্কুল থেকে শুরু করলো এই প্রকল্প। প্রথমে গ্রামের অনেকেই সন্দিহান ছিল। কেউ কেউ ভাবতো, এই আধুনিক শিক্ষা গ্রামে কোনো কাজে লাগবে না। কিন্তু অরণ্যের দৃঢ় মনোভাব আর নিষ্ঠার ফলে ধীরে ধীরে সবাই প্রকল্পে আগ্রহী হয়ে উঠলো।

"তরঙ্গ" প্রকল্পের অধীনে অরণ্য স্কুলে বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন নিয়ে কর্মশালা আয়োজন করলো। শিক্ষার্থীরা তাদের হাত দিয়ে ছোট ছোট প্রযুক্তি প্রজেক্ট বানানোর সুযোগ পেলো। এতে করে তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস এবং নতুন কিছু করার আগ্রহ বাড়তে শুরু করলো।

এর কিছুদিন পর, "তরঙ্গ" প্রকল্প শুধু অরণ্যের গ্রামে সীমাবদ্ধ থাকলো না। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে স্কুল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অরণ্যকে আমন্ত্রণ জানাতে শুরু করলো। অরণ্য তার দল নিয়ে দেশের নানা প্রান্তে ঘুরে ঘুরে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে লাগলো। তার প্রচেষ্টায় অনেক গ্রামীণ শিক্ষার্থী নিজেদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা প্রতিভা আবিষ্কার করতে পারলো।

একসময় অরণ্য বুঝতে পারলো, শুধু নিজে সফল হওয়াই যথেষ্ট নয়। তার সফলতা তখনই পূর্ণতা পায়, যখন সে তার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারে। তার জীবনকাহিনী থেকে সবাই অনুপ্রাণিত হলো—স্বপ্ন শুধু নিজের জন্য নয়, বরং পুরো সমাজের জন্যও হতে পারে।

অরণ্যের এই নতুন অভিযাত্রা তার সফলতার গল্পকে আরও সমৃদ্ধ করলো। এখন সে শুধু একজন সফল উদ্যোক্তা নয়, একজন সমাজ সংস্কারকও। তার এই যাত্রা প্রমাণ করলো, প্রকৃত সফলতা সেই যা কেবল ব্যক্তিগত উন্নতিতে সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং পুরো সমাজের কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করতে পারে।

Comments

    Please login to post comment. Login