নিউ এইজ সম্পাদক নূরুল কবীর ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আলাপচারিতা শুনলাম। এটাকে প্রচলিত ইন্টারভিউ বলব না। মনে হলো নূরুল কবীর ভাই বেশিটুকু বলেছেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিনয় ও সারল্যে বাস্তবতা স্বীকার করে নিয়েছেন।
রাজনীতি, সরকার চালানো, গণমাধ্যমের সাথে কথা বলা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ, অবৈধ সিন্ডিকেটকে আইনের আওতায় আনা, লাস্ট রেজিমের বিচার, নতুন রাজনৈতিক দল গঠন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ও শহীদদেরকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া, সংস্কার, নির্বাচন এবং ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক; এ সকল বিষয়ে অকপটে প্রধান উপদেষ্টা কথা বলেছেন।
নূরুল কবীর ভাইয়ের প্রশ্নের ধরণ দেখে মনে হলো আমাদের কথাগুলোই যেন তিনি প্রধান উপদেষ্টার সকাশে বললেন। রাজনৈতিক অনভিজ্ঞতা ও অনভ্যাসের দায়টুকু বিনয়ের সাথে মেনে নিয়েছেন ড. ইউনূস। ব্যুরোক্রিসির সাথে সম্পর্ক তৈরিতে তাঁদের পক্ষের সক্ষম কৌশল না থাকবার কথাও স্বীকার করেছেন।
একদল সিন্ডিকেটের মসনদ গড়ে গিয়েছে। আরেকদল সেই মসনদে আসন গেড়ে নিয়েছে। তাতে আগেও আমজনতার বিপদ হয়েছে। এখনও ওই জনতাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সিন্ডিকেট না ভাঙতে পারার সরকারি ব্যর্থতা মেনে নিয়ে স্পষ্টভাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সরকারের চোখ পরিষ্কার না! আমরা বলব দয়া করে টিনের চশমা ফেলে দিয়ে আগত সরকারের জন্য একখানা পাওয়ারফুল চশমা রেখে যাবেন, যাতে সমাজে ন্যায়নিষ্ঠতা কায়েম করতে সরকার ঠিকঠাক চোখে দেখতে পায়।
বস্তুত ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করা, নির্বাচনের সময়সীমাকে টেনে লম্বা করা কিংবা ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটানোর খায়েশ জাতীয় কোনো প্রবণতা ড. ইউনূসের আলাপে পাওয়া যায়নি। বরং ৬ মাসে তিনি অনেকটাই স্থৈর্য আত্মস্থ করে নিয়েছেন। অবশ্য এটা যদি তাঁর ভড়ং হয় তার ফলাফল অবশ্য কারো জন্যেই সুখকর কিছু বয়ে আনবে না।
এ যাবৎকালের সবচেয়ে ভালো সাক্ষাৎকার হয়েছে এটি। আমরা শিখলাম, আমরা যা জানি না, বুঝি না, করতে পারি না; তা অকপটে স্বীকার করে নিতে হয়। তাতে অন্তত এই প্রতীতি আমাদের মধ্যে জাগে যে, পৃথিবীর সবাই সবকিছু পারবে এমন না। নির্দিষ্ট একজন ছাড়া পৃথিবী চলবে না এমনও না। একজন কাজ করতে করতে সবই শিখে যায়। এ কারণে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হয়। গণতন্ত্রের আসল তরিকা এটাই।
ধন্যবাদ নূরুল কবীর।
অভিবাদন প্রধান উপদেষ্টা।
লেখক: সাংবাদিক
৭ জানুয়ারি ২০২৫