
অনেকদিন আগের কথা। এক ছোট্ট গ্রামের এক প্রান্তে ছিল একটি বিশাল বটগাছ, যার ছায়া ছিল বিশাল এবং নীচে অনেকেই বসে থাকত। গাছটির বয়স ছিল কয়েক শতাব্দী, এবং গ্রামবাসীদের কাছে এটি ছিল এক অমূল্য সম্পদ। কিন্তু গ্রামবাসীরা জানত না যে, গাছটির মধ্যে একটি বিশেষ শক্তি লুকিয়ে আছে। এই শক্তি কেবল তাদের জন্য কাজ করত যারা তার সঠিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করত।
গ্রামের নাম ছিল পিপলপুর, যেখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছিল অপরিসীম। গ্রামের মধ্যে ছিল এক ছেলে, নাম তার অর্ণব। অর্ণব ছিল একজন সাধারণ ছেলে, তবে তার মধ্যে একটি বিশাল স্বপ্ন ছিল—সে চায় পৃথিবীটাকে বদলে দিতে। তার মনে একটি প্রশ্ন সবসময় ঘুরত—"আমি কীভাবে শ্রেষ্ঠ হতে পারব?"
অর্ণবের মা তাকে অনেকবার বলেছিলেন, "শ্রেষ্ঠতা শুধুমাত্র বাহ্যিক প্রমাণে নয়, অন্তর থেকে আসে।" তবে অর্ণব কিছুটা অবাক হত, কারণ তার ধারণা ছিল যে বাহ্যিক সাফল্য ছাড়া শ্রেষ্ঠতা কিছু নয়। তবে একদিন, তার জীবনটি বদলে গেল।
এক বিকেলে, অর্ণব যখন বটগাছের নিচে বসে ছিল, তখন একজন পুরনো ব্যক্তি তার কাছে এসে দাঁড়াল। লোকটি দেখতে ছিল একদম সাদামাটা, সাদা কাপড় পরা, ও দাড়ি-গোঁফ ছিল দীর্ঘ। তিনি অর্ণবকে বললেন, "তোমার চোখে কিছু খুঁজছো, কিন্তু তুমি জানো না সেটা কী। তুমি যদি আমাকে অনুসরণ কর, তবে আমি তোমাকে তোমার প্রশ্নের উত্তর দেব।"
অর্ণব একটু আশ্চর্য হয়ে বলল, "আপনি কে? এবং কীভাবে আপনি আমাকে সাহায্য করতে পারেন?"
লোকটি হাসলেন, "আমিই তোমার গাইড, আমি তোমাকে সেই শক্তি দেখাবো যা তোমার জীবন পরিবর্তন করতে পারে।"
অর্ণব কিছুটা দ্বিধায় থাকলেও, তার কৌতূহল তাকে পুরানো ব্যক্তির কথা শুনতে প্ররোচিত করল। সে তার সঙ্গে চলল। তারা পিপলপুরের বাইরে একটি গুহায় পৌঁছাল। গুহার মধ্যে ছিল এক রহস্যময় ঝরনা, যার পানি ছিল অসাধারণ উজ্জ্বল।
লোকটি বলল, "এই ঝরনার পানি তোমাকে এমন কিছু দেখাবে, যা তোমার এখন পর্যন্ত জানা ছিল না। কিন্তু মনে রেখো, তুমি যদি এই শক্তিকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করার চেষ্টা করো, তবে তুমি কখনোই শ্রেষ্ঠ হতে পারবে না।"
অর্ণব ঝরনার কাছে গিয়ে পানি দেখল। পানির মধ্যে তার নিজের প্রতিবিম্ব দেখা যাচ্ছিল, কিন্তু তার চোখে যে আশা ছিল, তা ছিল অদ্ভুত। সেখানেই এক অদ্ভুত দৃশ্য ঘটে। অর্ণব দেখতে পেলো তার জীবন থেকে সব হতাশা, একাকীত্ব এবং ভীতির ছায়া ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে। তার চোখে কিছু নতুন দৃষ্টি জন্ম নিল।
লোকটি বলল, "এটাই তোমার ভিতরের শক্তি, অর্ণব। তুমি যে প্রতিভা নিয়ে জন্মেছো, তা সঠিক পথে ব্যবহার করলেই তুমি শ্রেষ্ঠ হতে পারবে।"
অর্ণব বুঝতে পারল যে, শ্রেষ্ঠতা শুধুমাত্র বাহ্যিক সাফল্যে নয়, বরং নিজের উদ্দেশ্যকে বোঝার মধ্যে নিহিত। সে শিখেছিল যে, অন্যদের ভালো করার জন্য নিজের ভালো কাজে লাগাতে হবে। সেই মুহূর্তে তার মধ্যে এক শক্তি উদিত হলো, যা তাকে জীবনে পথ দেখাতে সাহায্য করল।
অর্ণব গ্রামের দিকে ফিরে গেল। সে আর আগের মতো ছিল না। এখন সে জানত যে, তাকে কেবল নিজের ক্ষমতা আর মনোবল দিয়ে পৃথিবীকে পরিবর্তন করতে হবে। একদিন, সেই গ্রামের সব মানুষ অর্ণবের কথা শুনে অনুপ্রাণিত হয়ে উঠল। তাদের কাছে অর্ণব ছিল এক নতুন দিশারী, যে শিখিয়েছিল, আসল শ্রেষ্ঠত্ব মানুষের অন্তরে।
এভাবেই, অর্ণব তার গ্রামে নতুন এক যুগের সূচনা করল। সে জানত, শ্রেষ্ঠ হতে হলে অন্যদের জন্য কিছু করতে হবে, এবং নিজের অন্তরের শক্তিকে বুঝতে হবে। তার জীবন হয়ে উঠল এক উদাহরণ, যা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে রইল।
আজও পিপলপুরের মানুষ বটগাছের নীচে বসে এই গল্প শুনে। তারা জানে, শ্রেষ্ঠত্বের কোনো একক মাপকাঠি নেই। বরং, এটি নির্ভর করে আমাদের হৃদয়ের গভীরে কোথায় আমরা নিজেদের অবস্থান করি, এবং আমরা কতটা অন্যদের ভালো করার জন্য চেষ্টা করি।
(নীতিকথা:
শ্রেষ্ঠত্ব শুধুমাত্র বাহ্যিক সাফল্য বা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অর্জিত হয় না। এটি অন্তরের শান্তি, সততা এবং অন্যদের জন্য কাজ করার মধ্যে নিহিত। যখন আমরা নিজের শক্তিকে সঠিক পথে ব্যবহার করি এবং অন্যদের কল্যাণে নিয়োজিত থাকি, তখনই আসল শ্রেষ্ঠত্ব অর্জিত হয়।)
: )