Posts

চিন্তা

ইস্পাত কঠিন স্থৈর্য দেখালেন‌ খালেদা জিয়া!

January 8, 2025

ফারদিন ফেরদৌস

158
View

জেলে থাকতে জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পৌঁছে গিয়েছিলেন। বহু নিন্দামন্দ ও বিষোদগার সয়েছেন। হাজার দেনদরবারেও শাসকের মন গলাতে পারেননি। খালেদা জিয়াকে তাঁর ইচ্ছানুযায়ী চিকিৎসা নিতে দেয়নি সর্বশেষ সরকার। অতঃপর জুলাই-আগস্ট পেরিয়ে এসে খালেদা জিয়া কাঙ্ক্ষিত উন্নত চিকিৎসার নাগাল পেলেন।

প্রথম আলো লিখেছে, লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দর থেকে নিজে গাড়ি চালিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন ছেলে তারেক রহমান। লন্ডনের স্থানীয় সময় আজ বুধবার সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে তারেক রহমান মাকে নিয়ে লন্ডনের কেন্দ্রস্থলের দ্য ক্লিনিকের উদ্দেশে যাত্রা করেন। বেলা ১১টা নাগাদ হাসপাতালে পৌঁছান তাঁরা। এ সময় তারেক রহমানের সহধর্মিণী জুবাইদা রহমান তাঁদের সঙ্গে ছিলেন।

তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য গতকাল মঙ্গলবার রাতে কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা করেন খালেদা জিয়া। যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সময় আজ সকাল ৯টা ৫ মিনিটে খালেদা জিয়াকে বহনকারী উড়োজাহাজটি লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে অবতরণ করে। ৭ বছর পর মা ছেলের সামনাসামনি দেখা হওয়ার পর সেখানে আবেগঘন পরিবেশের তৈরি হয়।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার লিভার প্রতিস্থাপন খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, লিভার প্রতিস্থাপনের পর পুরো চিকিৎসায় দুই মাসের মতো লেগে যেতে পারে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসা শেষ হলে বিএনপির চেয়ারপারসন আবার লন্ডনে যাবেন। সেখান থেকে সৌদি আরবে পবিত্র ওমরাহ পালন করে তারপর দেশে ফিরতে পারেন।

অরফানেজের অর্থ আত্মসাত নামের অদ্ভুত এক মামলায় খালেদা জিয়াকে অন্তরীণ রেখেছিল লাস্ট রেজিম। এর আগে তাঁকে নিজের বাড়ি থেকে বাস্তুচ্যুত করা হয়েছিল। অথচ নিজের দলীয় লোকদের হাজার কোটি টাকা পাচার, ব্যাংক লুটপাট, রিজার্ভ চুরির ন্যূনতম বিচার হতে দেখিনি।

সবগুলো ঘটনার একীভূত খেসারত ৫ আগস্টে ঘটেছে। মানুষের বোধহয় এত প্রতিহিংসাপরায়ণ হওয়া ঠিক না। গভীর খাদে পড়ে যেতে হয়। আর ধৈর্য ধরে থাকলে অশীতিপর হয়েও খালেদা জিয়ার মতো আপোষহীন মর্যাদা ধরে রাখা যায়। তেমন এক ইস্পাত কঠিন স্থৈর্য দেখালেন‌ খালেদা জিয়া!

বিরুদ্ধবাদীরা তারেক জিয়ার হাজারটা দোষ ধরতে পারবে। সমালোচকরা খালেদা জিয়া সরকারের অনেক সমালোচনা করতে পারবে। কিন্তু আজকে মা আর পুত্রের এই যে আনন্দ সম্মীলনী এর মাজেজা  অন্যকিছু দিয়েই তরজমা করা যাবে না। মায়ের কাঁধে যখন পুত্র তাঁর মাথাটি রেখেছিলেন কী এক অনৈর্বচনীয় ঐশ্বরিক সৌন্দর্য তৈরি হলো না! মায়ের ঘ্রাণে সন্তান আবেশিত হলো না! এটি দেখতে চোখ ও মনের শান্তি।

আমাদের কথা হলো রাজনৈতিক বৈরিতা থাকুক। কিন্তু একে অপরের বিরুদ্ধে জানবাজি রেখে প্রতিহিংসা দেখানোর কোনো মানে থাকতে পারে না। একজন অসুস্থ মানুষকে ঠুনকো মামলা দিয়ে আটকে রাখবার নাম আর যাই হোক শুদ্ধ রাজনীতি না।

অনেকেই বলছেন, খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে সরকার মাইনাস টু ফর্মুলা বাস্তবায়ন করেছে। এটা একেবারেই অলীক চিন্তা। খালেদা জিয়া দেশের বাইরে থাকার মানুষ নন। রাজনীতিতে সক্রিয় না হতে পারলেও তিনি যথাসময়ে দেশে ফিরবেন। কোনোরূপ বাধা সৃষ্টি করবার নৈতিক ভিত্তি অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। এমনটা তারা করবে এটা বিশ্বাসও করি না।
 

জেল থেকে বেরিয়ে লাস্ট রেজিমের প্রতি একটা হিংসাত্মক শব্দও খালেদা জিয়া উচ্চারণ করেননি।
আমরা তাঁর আশু রোগমুক্তি কামনা করি। পরিবারের স্বজনদের সকাশে তিনি হাসিখুশি থাকুন।

লেখক: সাংবাদিক 
৮ জানুয়ারি ২০২৫

Comments

    Please login to post comment. Login