Posts

সমালোচনা

বদল -নাসিমা খান

January 9, 2025

Nasima Khan

39
View

পৃথিবীর মানুষগুলো বদলায়। কেউ ইতিবাচক কেউ নেতিবাচক। বদল ঘটেই। যখন কেরোসিন তেল, মাটির কুপী ব্যবহার হতো তখন বিদ্যুতের কথা হয়তো লেখাপড়া জানা কিছু মানুষ শুনেছিল। এই জ্ঞানী লোকগুলো কোনো না কোনোভাবে নিজেদের বদলে ছিল। এতো সুক্ষ্ম বদল সত্যিই কারো চোখে পড়ে না। ভিতরে ভিতরে মানুষগুলো আলোকিত ছিল। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে ছিল। কিন্তু প্রথা বা প্রচলিত ধ্যান ধারণা পরিবর্তন করার সাহস তাদের ছিল না।  

এটাই বাস্তবতা। মানুষ ভিতরে যতখানি বদলে যায়; ততখানি সে কখনো বাইরে প্রকাশ করতে পারে না। এটা তাদের অপারগতা কখনোই নয়। এটা অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা ও  হতে পারে। হতে পারে অন্যের বিশ্বাসকে সম্মান করা। তবে এটা সব সময় ভিতরের আলো থেকে আসে। এই বদলকে ইতিবাচক বদল হিসেবে ধরা হয়।

বদলে যাওয়াকে ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক দুইভাবে প্রকাশ করা যায়। সুতরাং বদলে যাওয়া মানুষগুলো সব সময় নিজেকে নিজের ভিতর আগলে রাখতে পারে না। সে যখন রুচিসম্মতভাবে পোশাক পরিধান করে ; তার বদল ইতিবাচক। আর যার পোশাক অশালীন তার বদল নেতিবাচক। এটা শুধু উদাহরণ। এটা ধরার মধ্যে পড়ে না। 
আমরা প্রথম যখন রাতের অন্ধকার ভেদ করে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলতে দেখলাম এই বদলটা আমরা ভীষণ আনন্দের সাথে উপভোগ করলাম। প্রথা ভেঙে হারিকেন হ্যাজাক খাটের তলায় ঢুকিয়ে দেওয়াতে কেউই বাঁধা দিল না। কারো ধর্মীয় অনুশাসন, ধর্মীয় বিধানের কানাকড়িও ক্ষতি হলো না। এটা ইতিবাচক পরিবর্তন। এটা সার্বজনীন। এখানে প্রথা বা ধর্মের কোনো মাথা ব্যথা ছিল না।

টেলিগ্রাম কী সাংঘাতিক সুন্দর বিষয় ছিল। ফাদার সিরিয়াস, কাম সুন।  সে সংবাদ সুখের অথবা দুখের হোক না কেন। জরুরি প্রয়োজনে সংবাদের গুরুত্ব বোঝানোর জন্য দু'একটা মিথ্যে লেখাতেও ধর্মীয় অনুশাসনের মাথা ব্যথা ছিল না। এই যে পরিবর্তন নেতিবাচক শব্দে মানুষের ভিতর ইতিবাচক ভাবধারা এনে দিয়েছিল; সেটা যত অন্যায় হোক না তা নিয়ে মাথা ঘামানোর কোনো প্রয়োজন ছিল না।

বদলে ছিল মানুষ সভ্যতার মুখোমুখি হয়ে। এবং খুব ধীরে ধীরে বদলে গিয়েছিল মানুষের আচরণ। তিন যুগ আগে বাংলাদেশেই প্রেম করা মহাপাপ ছিল। এখন মানুষ তার সন্তানদের প্রেম করার জন্য অনুপ্রেরণা দেয়। এখন প্রেম পাপ নয়, প্রেম সৌন্দর্য। মানুষের ভিতরের এই যে পরিবর্তন তা কিন্তু দুয়েক বছরে সম্ভব হয়নি। টানা ছত্রিশ বছর পরে প্রেম নিস্পাপ পবিত্র সম্পর্ক নামে অভিহিত হয়েছে। এটা ইতিবাচক না নেতিবাচক তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কোনো কোনো পরিবার এখনো প্রেম করাকে সুনজরে দেখে না। এটা তার গোঁড়ামি নয় অথবা সুশিক্ষার অভাব নয়। এটা তাদের স্বভাব। এদের পরিবর্তনের দায় কখনো সমাজ নিতে পারে না। কারণ এটা এখনো কারো কারো কাছে অবশ্যই নেতিবাচক পরিণতি অথবা পরিবর্তন। এই বদল নিয়ে ধর্মের, সমাজের অথবা নৈতিকতার কোনো মাথা ব্যথা নেই।  থাকতেই পারে না। কারণ এখানে এখনো সাহস কাজ করে না, এ জায়গা মানুষ তার বিশ্বাস দ্বারা পরিচালিত।

টেলিফোন মানেই উচ্চবংশীয় লেহাজ। উচ্চবিত্তের খুঁটি। টেলিফোন নেই মানে আভিজাত্যও নেই। এটা নিয়েও  তাই সমাজের বা ধর্মীয় কোনো বিধান ছিল না। অবশ্য সেকাল অথবা একাল কোনো কালেই মানুষ দম্ভের ওপরে উঠতে পারেনি।  এটা নিয়ে সমাজতন্ত্র বা ডানপন্থীদের এখন আর কোনো টেনশন অথবা বিরোধিতা নেই। তাহলে আভিজাতিক কোনো পরিবর্তন এখনো পর্যন্ত হয়নি।

কুপি গেছে, বৈদ্যুতিক বাতি এসেছে। আগে বিদ্যুৎ গেলে মোমবাতি জ্বালাত মানুষ। এখন আইপিএস এসেছে। বিদ্যুৎ কখন আসল গেল এনিয়ে টেনশন করে না কেউ। 
বিদ্যুৎ এসেছে একটি রূপে। তার বহুল ব্যবহার হয়েছে। কিন্তু তার নতুন কোনো রূপ পরিবর্তন হয়নি। হতে পারে অদূর ভবিষ্যতে মানুষ বাতাসের শক্তি ধরার ক্ষমতা রাখবে। বলা তো যায় না তা থেকে বিদ্যুৎ আবিষ্কার হয়ে যেতে পারে।

আসলে কোনো সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। টেলিফোন থাকতে থাকতে মোবাইল চলে এলো। কেউ কেউ আভিজাত্য ধরে রাখবার জন্য টেলিফোন লাইন রেখে দিল। কিন্তু চোরের চোখ পড়ল তারের উপর। অই তার দিয়ে ডিশ লাইনের সংযোগ দেওয়া যায়। শেষ পর্যন্ত মানুষ বাধ্য হয়ে আভিজাত্যের অহংকার নিজেরাই ভেঙে দিল। কিনল দামী টাচ ফোন। এই বদল নিয়েও যথেষ্ট সংশয় থাকার কথা। ওটা যখন রিকশাওয়ালার হাতে দেখল মানুষ, তখন তারা আইফোন কেনা শুরু করল। না না অন লাইন ব্যবসার জন্য নয়। স্রেফ সেলফি তোলার জন্য, ইউটিউবে নাটক দেখার জন্য , আর ফেসবুক চালানোর জন্য। ধীরে ধীরে মানুষের নৈতিকতার আবরণ ছেদ হলো। মানুষ তার চরম ইচ্ছার মূল্য দেওয়ার জন্য পরিবর্তন করল নিজেকে। এটা নেতিবাচক বদল।

অনেকেই বলে প্রযুক্তি থেকে ভালোটা নিয়ে খারাপটা বর্জন করা যায়। কিন্তু এটা অসম্ভব। ভীষণ অসম্ভব। কারণ ভালো খারাপ নির্ণয় করার জন্য শুধু টেস্টি খাবার পরখ করবার দরকার পড়ে না। সাথে বিষাদের স্বাদ নেওয়াও দরকার। খারাপ না থাকলে ভালো বোঝার উপায় নেই। এখানেই বদলে যায় মানুষ। কেউ ইতিবাচক কেউবা নেতিবাচক। এবং বদলটা অত্যন্ত ধীর গতিতে ঘটে। তবে তার ভিতরের আলো অথবা অন্ধকার দিয়েই দুই রকমের বদল দেখা যায়।

মানুষ বুঝতে পারে না কোনটা উচিত অথবা কোনটা অনুচিত। এখানেই মানুষের স্বরূপ ধরা যায়। ভিতরে যে আলো জ্বালতে পারে তার বদল ইতিবাচক। আর যার ভিতরের আলো নিভে যায়। তার বদল নেতিবাচক।

অনেকেই নাস্তিক মানেই যুক্তি খণ্ডনকে বোঝায়, নাস্তিক মানেই উলঙ্গতাকে বোঝায়। হট এ ননসেন্স!  এতো নির্বোধ কীভাবে মানুষ হয়? এদের বদল হয় না, এদের মনের আলো এবং চোখের আলো দুটোই নিস্প্রভ।

নাস্তিক অর্থ ঈশ্বরকে অস্বীকার করা। নাস্তিক অর্থ উলঙ্গ নয়। নাস্তিক অর্থ অমার্জিত নয়, নাস্তিক অর্থ নির্মম নয়। ঈশ্বরকে বিশ্বাসের যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ না পেলে কেউ কেউ ঈশ্বরকে অবিশ্বাস করতেই পারে। কিন্তু তাকে উলঙ্গ, নীতি বর্জিত বলা ভীষণ অন্যায়। উলঙ্গতা ব্যক্তিক কেন্দ্রীক। মানুষের রুচি কেন্দ্রীক। এটা কোনো দিক থেকে নির্লজ্জতা না। যুক্তিবাদী মানুষ, কাল্পিক নিরাকার সব কিছু অবিশ্বাস করতেই পারে। বরং তারাই  আসল মানুষ। কিন্তু ধর্মের লেবাস পরে যারা নীতিবিবর্জিত কাজ করে বরং তাদের কোনো ধর্ম নেই। ধার্মিকদের জীবন স্ব স্ব ধর্মের অনুশাসনকে মেনেই চলে। যারা ধর্মীয় বিধিনিষেধ অমান্য করে তারা কিছুতেই নিজেদের আস্তিক প্রমাণ করতে পারে না। প্রত্যেক ধর্মের কিছু বিধিনিষেধ আছে। যারা ধার্মিক তারা কোনো শর্তেই সেই বিধানের বিপরীতে যেতে পারে না। যারা কুযুক্তি দিয়ে নিজেদের ধার্মিক প্রমাণ করতে চাই তাদের চাতুর্যপূর্ণ আচরণ প্রমাণ করে দেয় তারা কোনো লেবেলেই পড়ে না। তারা আস্তিক ও নয়, নাস্তিকও নয়। এরা দোদুল্যমান জীব। এরা ভয়ংকর সমাজ, পরিবার সর্বোপরি দেশের জন্য।

তাদের বদল চাক্ষুষ অথবা পরোক্ষ সবটাই ভিতরে বাস করে। প্রকাশ শুধু আচরণ দিয়ে হয়।

মানুষ বদলায়। সমাজ সংসার এমনকি সঙ্গ মানুষকে নেতিবাচক বদল এনে দিতে পারে না। যদি না তাদের ভিতর নেতিবাচক ইচ্ছে থাকে।  
ইতিবাচক বদল মানুষকে চরম বিপথ থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে যদি তাদের ভিতর আলোক শক্তি থাকে। ভেতরের বদল না ঘটলে কিছুতেই কোনো বদল দীর্ঘস্থায়ী হয় না। সে ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক। 
হ্যাঁ কেউ কেউ বদলাতে থাকে কিন্তু ভিতরে যদি আলো থাকে সে বিপর্যয় থেকে ফিরে আসে। আবার যাদের ভিতর অন্ধকার থাকে তারা স্বর্গের দোরগোড়া থেকে ফিরে এসে জাহান্নামে লাফ দেয়। এটাই ভিতরের আলো এবং অন্ধকারের শক্তি। 
------নাসিমা খান

Comments

    Please login to post comment. Login