Posts

গল্প

ভাদুপুরের পুরনো কবরস্থান

January 11, 2025

Md Mottakin

127
View

নিশীথের অন্ধকারে, ছোট একটি গ্রাম ছিল—ভাদুপুর। এই গ্রামটি ছিল একদম বিচ্ছিন্ন, যেখানে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসত শুধুমাত্র এক জিনিসের জন্য: ভাদুপুরের পুরনো কবরস্থান। গ্রামবাসীদের কাছে শোনা গিয়েছিল, কবরস্থানের ভেতর অদ্ভুত কিছু ঘটনা ঘটে থাকে—শুনতেও মন্দ লাগত, তবে কেউ সঠিকভাবে বলতে পারতো না কীভাবে এসব ঘটে।

গল্পের শুরু

একদিন, একটি নতুন ছেলে—অদ্বিতীয়—গ্রামে এসে পৌঁছাল। সে ছিল এক শহুরে যুবক, যিনি গল্প শুনে এই গ্রামে বেড়াতে এসেছিলেন। ভাদুপুরের কবরস্থান সম্পর্কে প্রচুর গল্প শোনা গেছে তার কাছে, তবে সে মনে করেছিল, এসব শুধুই রূপকথা। একটি সন্ধ্যায়, তার কৌতূহল তাকে সেই কবরস্থানের দিকে টানল। কবরস্থানের কাছাকাছি পৌঁছানোর পর, সে কিছু অদ্ভুত শব্দ শুনতে পেল, কিছু যেন ফিসফিস করছে। অবাক হয়ে অদ্বিতীয় মনস্থির করল—এটা নিছক বাতাস বা তার নিজের কল্পনা হতে পারে। কিন্তু সে জানতো, এই কবরস্থানের ভিতরে অজানা এক শক্তি রয়েছে যা তাকে ভয় দেখাতে চাইছে।

অদ্ভুত ঘটনা

কবরস্থানে ঢুকতেই, অদ্বিতীয় দেখতে পেল যে কিছু পুরনো কবরের কাছে কিছু অদ্ভুত তিলক আঁকা। রাতের গভীরতা আরও বেড়ে যাচ্ছিল, হঠাৎ কবরের সামনে এসে তার পা আটকে গেল। সে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে দেখে, এক পরীর মতো একটি সাদা পোশাক পরিহিত নারী তার দিকে এগিয়ে আসছে। নারীর চোখ দুটি সাদা, গভীর অসীম আঁধারের মতো।

নারীটি অদ্বিতীয়কে বলল, "এখানে এক ভয়ানক অতীত লুকিয়ে আছে। তুমি এখানে এসেছ, কিন্তু তোমাকে এক কঠিন পথ বেছে নিতে হবে।"

অদ্বিতীয় ভয়ে শিহরিত হয়ে প্রশ্ন করল, "কী চাই তোমরা? আমি কি তোমাদের সাহায্য করতে পারব?"

নারীটি আবার বলল, "তুমি যদি আমাদের শান্তি ফিরিয়ে দিতে চাও, তবে তোমাকে ওই পুরনো কাঠের কফিনটি খুঁজে বের করতে হবে। তার মধ্যে আমাদের শেষ ইচ্ছা রয়েছে। কিন্তু সাবধান, আমাদের আত্মারা তখন থেকে তোমার উপর নজর রাখবে।"

কফিনের রহস্য

অদ্বিতীয় কাঁপতে কাঁপতে নারীর নির্দেশিত পথে হাঁটতে শুরু করল। একটু দূরেই একটি পুরনো কাঠের কফিনের ভিতর সাদা কাপড় দিয়ে কিছু ঢাকা ছিল। কফিনটি খুলতেই, অদ্বিতীয় এক অতীন্দ্রীয় শক্তি অনুভব করল, যেন কিছু তার ভিতরে থেকে তাকে ডাকছে। সে কফিনের ভিতরে দেখল একটি পুরনো পুস্তিকা এবং কিছু লাল মোমবাতি, যা এখনও জ্বলছিল। পুস্তিকার ভেতর একটি অদ্ভুত ভাষায় লেখা ছিল।

সে শব্দগুলো পড়তে চেষ্টা করল, এবং অমনি পুরো কবরস্থানে একটি গম্ভীর গুঞ্জন শুনতে পেল। হঠাৎ, কফিনের ভিতর থেকে বেরিয়ে এলো এক ভয়ানক আত্মা, তার মুখে অদ্ভুত হাসি আর হাত伸ানোর আগেই অদ্বিতীয় চিৎকার দিয়ে পেছনে ছুটে গেল।

অদ্বিতীয় জানত, সে যা করেছে তা ঠিক হয়নি, কিন্তু সেই পুস্তিকাটি ছিল আত্মাদের মুক্তির চাবিকাঠি। সে অনেক চেষ্টা করেও পুস্তিকার ভাষা বুঝতে পারছিল না। তার হাত থেকে পুস্তিকাটি পড়ে গেল এবং আশপাশের কবরগুলো একে একে সজাগ হয়ে উঠল। কবরস্থানের ভূতেরা মুক্তি পাওয়ার পথে চলে যাচ্ছিল, আর অদ্বিতীয় তাদের থেকে পরিত্রাণ পেতে জানল, তাকে এখন কবরস্থানের অভিশাপ ভাঙার জন্য আরো একটি কাজ করতে হবে।

অদ্বিতীয় তখন বুঝতে পারল, ভূতেরা শুধু ক্ষুধার্ত নয়, তাদের রাগ ও কষ্টও তাদের এক ভয়াবহ দৃষ্টিতে পরিণত করেছে। আর তাকে এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে আত্মাদের শান্তি ফিরিয়ে দিতে হবে—অথবা তার নিজের আত্মা তাদের মাঝে হারিয়ে যাবে।

কবরস্থানের সেই অদ্ভুত রাত একদম শেষ হওয়ার পথে, অদ্বিতীয় বুঝল, তার কল্পনা নয়, সে সত্যিই এক অদ্ভুত ও ভয়ানক পৃথিবীতে চলে এসেছে, যেখানে ভূতেরা একটি দুঃখজনক কাহিনীর মধ্যে আটকা পড়েছিল, আর তাকে তাদের মুক্তির জন্য তার জীবনের অর্ধেক সময় দিয়েই এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

Comments

    Please login to post comment. Login

  • Md Mottakin 11 months ago

    যদি গল্পগুলো সবার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাকে সাপোর্ট করবেন