Posts

গল্প

শান্তির সন্ধানে

January 11, 2025

Md Mottakin

146
View

নিশীথের আঁধারে এক গ্রাম ছিল—হালুয়া। একটি ছোট, শান্ত গ্রাম, যেখানে সূর্য অস্ত যাওয়ার পর এক অদ্ভুত পরিবেশ তৈরি হত। গ্রামের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া পুরনো সড়কটি কিছুটা রুক্ষ এবং ঝোপঝাড়ে আচ্ছাদিত ছিল। তবে, এই গ্রামে রাতের অন্ধকারে কিছু ভৌতিক ঘটনা ঘটত, যেগুলি নিয়ে মাঝে মাঝে গ্রামবাসীদের মধ্যে আলোচনা চলত। কেউ কাউকে বলতে সাহস পেত না, তবে এক ধরনের শঙ্কা সবার মধ্যে বিরাজ করত। এই গ্রামের নাম শোনা মাত্র, মানুষ কেমন যেন এক অদৃশ্য ভয় অনুভব করত।

গল্পের শুরু

মাঝি ছিল গ্রামের এক তরুণ ছেলে। তার বাবা-মা ছিলেন সাধারণ কৃষক, আর মাঝি ছিল খুবই কৌতূহলী এবং সাহসী। একদিন, গ্রামে নতুন কিছু মানুষ এলো—এক দল গবেষক, যারা ভূত এবং অতিপ্রাকৃত শক্তির উপর কাজ করছিলেন। তারা বলেছিলেন, "এখানে এক অদ্ভুত শক্তি রয়েছে। এই গ্রামে কিছু অতৃপ্ত আত্মা বাস করছে।" মাঝি তাদের কথায় খুব আগ্রহী হয়ে ওঠে এবং সিদ্ধান্ত নেয়, সে নিজেই এই রহস্যের সমাধান করবে।

ভৌতিক রহস্য

মাঝি এক রাতে, গ্রামবাসীদের অজান্তেই কবরস্থানে গিয়ে হাজির হল। কবরস্থানের মধ্যে প্রাচীন এবং পরিত্যক্ত সমাধিগুলো ছিল, যার মধ্যে একটির নামফলক থেকে এক রহস্যময় শব্দ বের হচ্ছিল। মাঝি দেখতে পেল, যে কোনো এক রাতের অন্ধকারে, এই কবরস্থানে মানুষ ঘুরতে আসলে কিছু অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। মাঝি সেই জায়গা ঘুরে দেখছিল, হঠাৎ তার কানে শুনতে পেল একটি ভাঙা কণ্ঠস্বর, "যাও...যাও, এখানে আর কোনো জীবিত মানুষ থাকার জায়গা নেই।"

ভয় না পেয়ে, মাঝি কবরস্থানের গভীরে প্রবেশ করল। হঠাৎ সে দেখলো, একটি পুরনো, লাল রঙের মোমবাতি অদৃশ্যভাবে জ্বলে উঠল। সে এগিয়ে যেতে থাকল, এবং দেখতে পেল এক অদ্ভুত কাঠের কফিন, যার উপরে কোনো নাম ছিল না। যখন সে কফিনটি খুলল, তখন এক ভয়ানক শীতল বাতাস আছড়ে পড়ল এবং কফিনের ভিতর থেকে এক নারী আত্মার উপস্থিতি অনুভব করল। তার চোখে ছিল তীব্র দুঃখ, আর মুখে কোনো কথা ছিল না। মাঝে মাঝে সে হাসছিল, আবার কখনো একেবারে গম্ভীর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকত।

আত্মার ভাষা

"আমি হারিয়ে গেছি," আত্মাটি বলল, "এখানে অনেক বছর ধরে বন্দী আছি। আমার আত্মার মুক্তির জন্য তোমাকে কিছু করতে হবে।" মাঝি সাহসের সঙ্গে বলল, "আমি কী করতে পারি?" নারী আত্মাটি জানালো, "তোমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভয়কে জয় করতে হবে। আমাকে মুক্তি দেওয়ার জন্য তোমাকে নিজেকে জানার দরকার।"

মাঝি প্রতিজ্ঞা করল, সে এই রহস্য সমাধান করবে। সে আত্মাটির কথা শুনতে থাকল এবং বুঝতে পারল, এই গ্রামে এক পুরনো যুদ্ধের আত্মারা ভেসে আছে, যারা তাদের ভুল ধারণা এবং পরিত্যক্ত আত্মা নিয়ে এখানে রয়ে গেছে।

ভয়াবহ সত্য

বিগত শতাব্দীতে, এই গ্রামে একটি ভয়াবহ যুদ্ধ হয়েছিল, যেখানে অনেক মানুষ মারা গিয়েছিল। সেই যুদ্ধের পর, মৃতদের আত্মারা শপথ নেয়, যে তারা শান্তি পাবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের অপ্রাপ্তি শেষ না হয়। মাঝি সেই অতীতের ইতিহাস খুঁজে বের করল এবং জানল, কবরস্থানের ভিতরে থাকা প্রতিটি আত্মা কোনো না কোনো কারণে শান্তি পায়নি।

মাঝি তখন প্রতিজ্ঞা করল, এই ভূতদের মুক্তি দেওয়ার জন্য তাকে শেষ পর্যন্ত তাদের গোপন কথাগুলি খুঁজে বের করতে হবে। এক রাতে, সে ফিরে গিয়ে সেই পুরনো কফিন খুলে দেখল, তার ভিতর ছিল একটি পুস্তিকা। পুস্তিকাটির মধ্যে ছিল, "যদি আপনি মুক্তি চান, তবে আপনাকে আপনার অতীত ও ভবিষ্যত সম্পর্কিত একটি ত্যাগ করতে হবে।"

মাঝি বুঝল, এই ত্যাগ তাকে নিজের জীবনের সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করবে। কবরস্থানে বাকি আত্মাগুলি তখন এক এক করে তার দিকে এগিয়ে আসছিল, যেন তারা তার সিদ্ধান্তের দিকে নজর রাখছিল। মাঝি এক গভীর নিঃশ্বাস নিল এবং সিদ্ধান্ত নিল, "আমি যা করতে হবে, তা করবো।"

শান্তির পরিণতি

মাঝি তার জীবন এবং আত্মার মাঝে একটা ভারসাম্য স্থাপন করে, সেই পুরনো গোপন ইতিহাস জানিয়ে, সেই আত্মাদের শান্তি ফিরিয়ে দিল। গ্রামে ফিরে এসে, সে দেখল, ভূতের উপস্থিতি আর সেই অদ্ভুত শক্তি আর নেই। কবরস্থানের গাঢ় অন্ধকারটা ধীরে ধীরে হালকা হতে শুরু করল।

গ্রামবাসীরা এখন শান্তিতে থাকতে পারছিল, আর মাঝে মাঝে মাঝি গ্রামে বসে তার কাহিনী বলত। সে জানত, কিছু রহস্য এমনই থাকে, যা জীবনে একবার জানলে তা চিরকাল মনে থাকবে। তবে সে শান্ত ছিল, কারণ সে জানত, সে একে একে অতীতের সমস্ত ভূতকে শান্তি দিয়েছে।

Comments

    Please login to post comment. Login