Posts

গল্প

ভালোবাসার গল্প আপুরুপা

January 13, 2025

Jone

12
View

ভালোবাসার গল্প: "অপরূপা"
রাতের আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ, চারদিকে সুনসান নীরবতা। এমনই এক রাতে অরিত্রর সঙ্গে দেখা হয় তানিয়ার। অরিত্র তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। হঠাৎ করেই সে তানিয়াকে প্রথম দেখে লাইব্রেরির করিডোরে। একটা বই খুঁজতে গিয়ে তানিয়া হঠাৎ বইয়ের তাক থেকে একটা বই ফেলে দেয়, আর অরিত্র সেটা তুলে দেয়। প্রথম দেখাতেই অরিত্র মুগ্ধ হয়ে যায় তানিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে।

তানিয়া ছিল খুব সাধারণ মেয়ে। হালকা সাদা সালোয়ার-কামিজে তার সরলতা যেন ঝলমল করছিল। কিন্তু তানিয়া জানত না, তার সেই সাধারণতা অরিত্রর মনে ঝড় তুলে দিয়েছে।

প্রথম আলাপ
পরের দিন ক্লাস শেষে অরিত্র আবার লাইব্রেরিতে যায়, তানিয়াকে খুঁজে। দেখা হলে অরিত্র প্রথমে খুব অপ্রস্তুত হয়ে যায়, তারপর সাহস করে বলে,
“তোমার নামটা জানতে পারি?”
তানিয়া একটু হেসে বলে, “তানিয়া।”
এই নামটা অরিত্রর মনে যেন একটা ছন্দ তুলে দেয়।

তাদের মধ্যে আলাপ শুরু হয়। ধীরে ধীরে তারা বন্ধুত্বের গভীরে ডুবে যেতে থাকে। লাইব্রেরিতে বই পড়া, ক্যাম্পাসে একসঙ্গে হাঁটা, দুপুরে ক্যান্টিনে চা খাওয়া—সবকিছুতেই তাদের মধ্যে একটা অদ্ভুত মিল খুঁজে পায় অরিত্র।

প্রেমের শুরু
একদিন বর্ষার সন্ধ্যায়, ভারী বৃষ্টি পড়ছিল। ক্যাম্পাসের ছাতার নিচে দাঁড়িয়ে তানিয়া বৃষ্টির ঝাপটা দেখছিল। হঠাৎ অরিত্র এসে দাঁড়ায় পাশে। কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর সে বলে,
“তানিয়া, একটা কথা বলব?”
তানিয়া অবাক হয়ে তার দিকে তাকায়।
অরিত্র বলে, “তোমার সঙ্গে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত আমার কাছে অমূল্য। আমি জানি না, এটা বন্ধুত্ব নাকি এর চেয়েও বেশি কিছু, কিন্তু আমি তোমাকে ছাড়া আমার দিন শুরু বা শেষ করতে পারি না। তানিয়া, আমি কি তোমার পাশে থাকতে পারি সারাজীবন?”

তানিয়া প্রথমে একটু চুপ করে থাকে। তারপর ধীরে ধীরে বলে, “তোমার চোখের সত্যতা আমি অস্বীকার করতে পারি না। আমিও অনুভব করেছি, তুমি আমার জীবনে আলাদা একটা জায়গা দখল করে নিয়েছ। কিন্তু এটা কি ভালোবাসা, নাকি অন্য কিছু, আমি জানি না। তবে আমি চাই, আমরা একসঙ্গে সময় কাটাই, নিজেদের বুঝি।”

সংগ্রামের দিনগুলো
অরিত্র ও তানিয়ার সম্পর্ক আরও গভীর হয়। তারা একে অপরের জীবনের প্রতিটি ছোটখাটো সমস্যায় পাশে থাকে। কিন্তু ভালোবাসার পথ সহজ ছিল না। তানিয়ার পরিবার ছিল খুব রক্ষণশীল। তারা চায়নি তানিয়া কোনো সম্পর্কে জড়াক।

অন্যদিকে, অরিত্রর পরিবারের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো ছিল না। তার মা চাইতেন, সে আগে নিজের পায়ে দাঁড়াক। তবুও, তানিয়া আর অরিত্র তাদের স্বপ্নগুলো আঁকড়ে ধরে একে অপরকে সাহস দিত।

স্বপ্ন পূরণ
পাঁচ বছর পর, অরিত্র একটি বড় কোম্পানিতে চাকরি পায়। আর তানিয়া তার স্বপ্নের শিক্ষকতা পেশা বেছে নেয়। দুজনেই নিজেদের পরিবারকে বুঝিয়ে একে অপরের সঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়।

শেষের গল্প
একদিন শীতের সকালে, তানিয়া আর অরিত্র শহরের এক পার্কে বসে। চারপাশে শিশিরভেজা ঘাস, পাখির কিচিরমিচির। অরিত্র তানিয়ার হাতে একটা ছোট আংটি দিয়ে বলে,
“তানিয়া, আজ আর অপেক্ষা করতে চাই না। তুমি কি আমার জীবনসঙ্গী হবে?”

তানিয়া হাসি মুখে বলে, “তোমার সঙ্গে তো আমি অনেক আগেই জীবন শুরু করেছি, অরিত্র। আংটি শুধু একটা চিহ্ন। আমার উত্তর তো তোমার কাছে আগেই ছিল।”

তাদের বিয়ে হয় সবার আশীর্বাদে। জীবনের ঝড়ঝাপটা পার করে তারা একসঙ্গে সুখের গল্প তৈরি করে।

শেষ কথা
ভালোবাসা মানে শুধু দুজন মানুষের সম্পর্ক নয়। এটা হলো একে অপরের স্বপ্নকে সম্মান করা, সংগ্রামে পাশে থাকা এবং জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত একসঙ্গে উপভোগ করা। অরিত্র আর তানিয়ার গল্প আমাদের শেখায়, ভালোবাসা ধৈর্য আর বিশ্বাসের উপর দাঁড়িয়ে থাকে।

Comments

    Please login to post comment. Login