Posts

গল্প

গল্প হলেও সত্যি

January 13, 2025

Madhab Debnath

11
View

টিফিন এর সময় সব ছেলে-মেয়ে টিফিন করতে বাইরে গেল। সবাই ক্লাস থেকে বের হয়ে কেউ কেউ গেল ক্যান্টিনে আবার কেউ কেউ মাঠে খেলতে। কিন্তু এর থেকে একটি ছেলে এর কোনটিতেই গেল না। মাঠের এক কোনে গাছের নিচে বসে আছে। প্রতিদিনই এই একই রকম দেখা যেত।

ক্লাসে অনেকেই এই ছেলেটিকে দেখতে পারে না। ছেলেটার জামা নোংরা, চুলগুলো এলোমেলো আর বাকিদের সুন্দর জামা-কাপড়। সুন্দর করে পরিপাটি করে আসে সবাই শুধু ঐ ছেলেটি ছাড়া। কিন্তু মেধাবী হবার কারণে ওরা তাকে সহ্য করে আছে। সামনে বার্ষিক পরীক্ষা, স্কুলে বকেয়া বেতনের টাকা দিতে হবে। সবাই যার যার বাসায় জানায়। সবার বাবা- মা এসে টাকা পরিশোধ করে গেছে। শুধু ঐ ছেলেটির পরীক্ষার ফি বাকি।

ছেলেটি ক্লাসে আসলেই স্যার ফি এর কথা জিজ্ঞাসা করে আর ছেলেটি চুপ করে বসে থাকে। এই ভাবে ২-৩ দিন গেল। স্যারেরা বুঝতে পারলো, এই ছেলে টাকা দিতে পারবে না। হেড স্যারের কাছে নিয়ে ছেলের নামে নালিশ করলো। হেড স্যার ছেলেটিকে তার রুমে ডাকলো। অনেক বকা ঝকা করলো। বাবা-মাকে নিয়ে পরের দিন ক্লাসে আসতে বলল। "প্রথম দিন তোমার বাবা- মা এসে সেই যে ভর্তি করে দিয়ে গেল আর তাদের মুখ দেখলাম না ১ বছরের মধ্যে। কাল যদি তোমার বাবা-মা আমার সাথে দেখা না করে তুমি আর স্কুলে আসবে না। এখন যাও।"

ছেলেটির বয়স তত বেশী হবে না, ১৪-১৫ বছর হবে, ছেলেটি কাঁদতে কাঁদতে ক্লাসে গিয়ে তার ছিড়া-ব্যাগটি নিয়ে বের হয়ে গেল স্কুল থেকে। সেই থেকে ছেলেটি আর স্কুলে আসে না। অনেক দিন পর সেই স্কুলের হেড স্যার একদিন রাস্তায় রিক্সার জন্য দাড়িয়ে ছিল। কোথা থেকে যেন একটা রিক্সা এসে বলল,

স্যার, স্কুলে যাবেন?

স্যার একটু আশ্চর্য হয়ে রিক্সা চালকটির দিকে তাকিয়ে রইলো। একটা ১৪-১৫ বছরের ছেলে রিক্সা চালাচ্ছে। স্যার আরও বেশী অবাক হল, যখন দেখলো এই ছেলেটা সেই ছেলে, যাকে সে স্কুল থেকে বের করে দিয়েছিল। স্যার আর কথা বলতে পারলো না। চুপ করে রিক্সায় উঠে বসলো। ছেলেটি কথা বলতে শুরু করলো। স্যার, আমাকে চিনছেন?

স্যার-না (না চিনার ভান করে বলল)।

স্যার, ঐ দিন পরীক্ষার ফি দিতে পারি নাই বলে আমাকে বের করে দিয়েছিলেন। আমি সেই ছেলে।

স্যার- হুম, চিনতে পেরেছি।

স্যার আপনি ঐ দিন আমারে স্কুল থেকে বের না করে দিলে আমি আজ না খেয়ে মরতাম।

স্যার- মানে কি?

"স্যার, আমি এতিম। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতাম আর বিভিন্ন স্কুলের সামনে দাঁড়াইয়া থাকতাম আর মনে মনে ভাবতাম আমি যদি স্কুলে পড়তে পারতাম। একদিন একটা, সাহেব আর তার বউ আমারে দেইখা আপনার স্কুলে ভর্তি করাইয়া দিছিল। আমি মনে মনে অনেক খুশি হইছিলাম কিন্তু স্কুলে ভর্তি করানোর পর আর সেই সাহেব আর মেডামরে দেখি নাই আর আমি পাগলের মত, খাইয়া না খাইয়া সারা দিন স্কুলে পইরা থাকতাম। সবাই যখন টিফিন খেত, আমি দূরে এক কোনে বসে বসে সবার খাওয়া দেখতাম আর কান্না করতাম। ক্ষিধা অনেক লাগতো। কিন্তু ক্লাস করতে ক্ষুধা লাগার চেয়ে বেশী ভাল লাগতো। তাই না খাইয়া ক্লাস করতাম আর রাতে গিয়া রাস্তার পাশে ঘুমাইতাম।

আপনে আমারে স্কুল থেকে বের করে দেবার পর বুঝতে পারলাম পড়া শুনা আমাদের জন্য না। যাদের পেটে ১ বেলা ভরপেট খাবার জুটে না, বাবা- মা নাই, তাদের জন্য পড়া লেখা না। তাই ঐ দিন থেকে স্যার আমি রিক্সা চালাইতাছি।

স্যার এখন প্রতিদিন ৩ বেলা হোটেলে ২ প্লেট ভাত, সাথে মাছ, ডাল দিয়া পেট ভইরা ভাত খাই।

স্যার, আমারে মাফ কইরা দিয়েন, আমি কি সব বকবক কইরা আপনেরে ডিস্টার্ব করতাছি। স্যার, স্কুলে আইসা পরছেন।

স্যার- এই নেও ভাড়া।

স্যার, এইডা কি কন? আপনি আমার স্যার, আপনার থেকে আমি টাকা নিয়া বেয়াদবি করতে পারমু না স্যার। এই বলে ছেলেটা চলে গেল।

আর ততক্ষনে, হেড স্যারের দুচোখ দিয়ে অঝরে পানি পড়ছে। রিক্সায় যা ও রুমাল দিয়ে মুছতেছিল, কিন্তু এখন যেন আর মুছে ও শেষ করা যাচ্ছে না।

যেই ছেলেটাকে সে না জেনে অনেক কথা শুনিয়ে স্কুল থেকে বের করে দিয়েছে, আজ সেই ছেলে তাকে এত সম্মান দিল? স্যার হাটতে হাটতে আর চোখের পানি মুছতে মুছতে নিজের রুমে চলে গেলেন।"

আসুন না, আমরা এই রকম কিছু গরীব ছেলেদের সাহায্যে এগিয়ে আসি। একদিনের জন্য নয়, সবসময়ের জন্য তাদের পাশে থাকি।

Comments

    Please login to post comment. Login