"মানুষ সিংহের প্রশংসা করে, কিন্তু আসলে গাধাকেই পছন্দ করে" তেত্রিশ বছর আগে ১৯৮৯ সালে ভাষাবিজ্ঞানী, কবি, ঔপন্যাসিক অধ্যাপক হুমায়ূন আজাদের 'প্রবচনগুচ্ছ' প্রথম ছাপার অক্ষরে প্রকাশ করেছিল 'অরুনিমা' নামে একটি ক্ষুদ্র পত্রিকা। এর তিন বছরের মাথায় ১৯৯২ সালে, আগামী প্রকাশনী ২০০টি প্রবচন গ্রন্থাকারে প্রকাশ করে।
সন্দেহাতীত ভাবে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মানুষ ছিলেন হুমায়ূন আজাদ। তাঁর প্রবচনগুচ্ছ ক্ষুদ্রতম অংশকে করেছে সচেতন,অপরদিকে সংখ্যাগুরু ভণ্ডদের করেছে ক্ষুব্ধ। তাঁর এক ডজন প্রবচন বড্ড বেশী প্রাসঙ্গিক বর্তমানে। এর মানে এই না যে অন্যগুলো নয়। 'কুতর্ক' এড়াতেই উল্লেখিত এক ডজন থেকে সেগুলো উহ্য রাখা হয়েছে।
১৮ বছর পূর্বে (২৭ ফেব্রুয়ারী,২০০৪) 'উগ্রবাদী জল্লাদদের' আক্রমণে গুরুতররূপে আহত হয়েছিলেন। ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের ১১ আগস্ট রাতে একটি অনুষ্ঠান থেকে প্রত্যাবর্তনের পর আবাসস্থলে আকস্মিকভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন হুমায়ুন আজাদ।
হুমায়ূন আজাদের ১ ডজন প্রবচন
১. বুদ্ধিজীবীরা এখন বিভক্ত তিন গোত্রে। ভন্ড, ভন্ডতর, ভন্ডতম।
২. টেলিভিশন, নিকৃষ্ট জিনিসের একনম্বর পৃষ্ঠপোষক, হিরোইন প্যাথেডিনের থেকেও মারাত্মক। মাদক গোপনে নষ্ট করে কিছু মানুষকে, টেলিভিশন প্রকাশ্যে নষ্ট করে কোটি কোটি মানুষকে।
৩. বাংলাদেশের প্রধান মূর্খদের চেনার সহজ উপায় টেলিভিশনে কোনো আলোচনা-অনুষ্ঠান দেখা। ওই মূর্খমন্ডলিতে উপস্থাপকটি হচ্ছেন মূর্খ শিরোমণি।
৪. স্তব স্তুতি মানুষকে নষ্ট করে। একটি শিশুকে বেশি স্তুতি করুন, সে কয়েকদিনে পাক্কা শয়তান হয়ে উঠবে।
৫. কারো প্রতি শ্রদ্ধা অটুট রাখার উপায় হচ্ছে তার সাথে কখনো সাক্ষাৎ না করা।
৬. পৃথিবী জুড়ে প্রতিটি নরনারী এখন মনে করে তাদের জীবন ব্যর্থ; কেননা তারা অভিনেতা বা অভিনেত্রী হতে পারেনি।
৭. এখানে সাংবাদিকতা হচ্ছে নিউজপ্রিন্ট -বল পয়েন্ট -মিথ্যার পাচঁন।
৮. আমাদের অধিকাংশের চরিত্র এতো নির্মল যে তার নিরপেক্ষ বর্ণনা দিলেও মনে হয় অশ্লীল গালাগাল করা হচ্ছে।
৯. মৌলিকতা হচ্ছে মঞ্চ থেকে দূরে অবস্থান।
১০. বাংলাদেশে মাথার থেকে পা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। পদোন্নতির জন্যে এখানে সবাই ব্যগ্র কিন্তু মাথার যে অবনতি ঘটছে, তাতে কারো কোনো উদ্বেগ নেই।
১১. আগে কারো সাথে পরিচয় হলে জানতে ইচ্ছে হতো সে কী পাশ? এখন কারো সাথে দেখা হলে জানতে ইচ্ছে হয় সে কী ফেল?
এবং
১২. ষাটের দশকের আধুনিকতার পর সত্তর, আশি ও নব্বই দশকের মধ্যযুগীয়তা দেখা এক মর্মান্তিক ও বিবমিষা জাগানো অভিজ্ঞতা। পিতা মাতারা ছিলো আধুনিক আর তাদের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসেছে মধ্যযুগীয় সন্তানসন্ততি। এমন আঁধার যদি থাকতো ষাটের দশকে, তাহলে বাংলাদেশের জন্ম হতো না।