সতীশ ঠাকুরদা হুকোতে গুরু গম্বীর কটা টান দিয়ে ধুবা ছেড়ে গল্প বলতে শুরু করল।
বনগাঁ থেকে আমাদের গ্রাম প্রায় ৫০-৬০ কিলোমিটার তখন বাস গাড়ি এত ছিল না । ঘোড়ার গাড়ি, গরুর গাড়ি, ভ্যান রিক্সা বা সাইকেল ছিল। সেদিন আমি ঝাড়গ্রাম বলে একটা গ্রামে ওখানে গিয়েছিলাম সেদিন শীল কেটে ছাতি শেরে আমার ভালই কামাই হয়েছিল চার টাকা ছয় আনা।
সেদিন আমি খুব খুশি ছিলাম খুশিতে খুশিতে মাঠের ভেতর রাস্তা দিয়ে অনেক দূর চলে গেছিলাম। গিয়ে দেখি সামনে আর কোন গ্রাম নেই রাস্তা এখানেই শেষ তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আর আসার সময় দেখেছিলাম একটা বটগাছ তার গুড়িটা বাঁধানো নেই, কিন্তু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আছে। সেখানে গিয়ে রাত কাটাবো ভাবছিলাম ভালোই ভালোই বট গাছের কাছে পৌঁছে গেলাম তখন আমার এত ভয় ছিল না। পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পরে দেখলাম মেঘ হয়ে আসছে তাই ব্যাগের ভিতর যে শুকনো খাবার ছিল তাড়াতাড়ি খেয়ে আমার সাথে যেই তাবু দুটো থাকতো একটাকে ছাদের মতন করে নিলাম তখন আমি জানতাম না এখানে আগে শ্মশান ছিল ।
বৃষ্টি শেষ হতে হতে আনুমানিক মাঝ রাত হয়ে গেছে, তখন আমি তাঁবুর উপরে যে একটু জল বেধেছে সেটা ফেলে নিচে আরেকটা তাবু পাতিয়ে শোয়ার পতিক্রম করছি। তখনই আমার কানে আসলো ঘোড়ার চীহি চীহি ডাক তখন ভাবলাম বৃষ্টি হচ্ছে বৃষ্টির আওয়াজ তখন আমি অত কান দিইনি, তোরা তো জানিস আমি হরিচাঁদ ও গুরুচাঁদ ঠাকুরের ভক্ত হরিচাঁদ গুরুচাঁদ ঠাকুর আমাকে যে একটু শক্তি দিয়েছে সেই শক্তিতে আমি বুঝতে পারি কোথাও বিপদ আছে কিনা, শ্মশানের ভেতরে তো জানিস কোন উপশক্তি আসতে পারে না। তাই আমার মনে কোন বিপদের সংকেত পাচ্ছিলাম না। তারপর আমি যখন একটু শুয়ে পড়লাম শোয়ার পর দেখছি ঘুম আসছে না। আমার খুব জোরে বাথরুম পেয়েছে তাই আসার সময় দেখেছিলাম একটা গর্ত কাটা আছে তাতে জল বেধে আছে। ওখান থেকে গিয়ে মাঠের ভেতরে গর্ত কাছে গেলাম জল নিতে গেছি তখন বুঝতে পারলাম আজ অনেক বিপদ। কালো ঘোড়া সাদা ঘোড়া অনেক রকমের ঘোড়া এত বড় বড় ঘোড়া আমি আগে কখনো দেখিনি।
তখন ভাবলাম ঘোড়া তো কোন ভয়ের কিছু নেই তখনো আমার মনে পড়েনি হরি মন্ত্র দিয়ে আমার গা বাধা নেই। আর মনে পড়তেই আমি সঙ্গে সঙ্গে হরিচাঁদ ও গুরুচাঁদ ঠাকুর যে মন্ত্র দিয়েছে সেই মন্ত্র দিয়ে আমি আমার গা বেঁধে নিলাম, ওখান থেকে বাথরুমটা করে আমি আবার সেই বট গাছের নিচে চলে আসলাম এসে দেখি সব শান্ত তখন বুঝলাম এখানে আগে শ্মশান ছিল;
তারপর সকাল হলে আমার ঘুমটা একটু দেরিতে ভাংলো । তত ক্ষণে গ্রামের অনেক লোক জড়ো হয়ে গেছে। তারা জানতো এখানে পৈশাচিক ঘোড়া ঘোরে আমাকে ঘুম থেকে উঠতে দেখে ওখানের একটা লোক এসে বলল বাবা আপনি কে? আমি বললাম সতীশ মন্ডল। আমি হরি ভক্ত। আমি বললাম এখানে এত লোক কেন সেই লোকটা নিজের পরিচয় দিল আমার নাম নন্দী চরণ রায়। বাবা আপনি সারারাত এখানে ছিলেন ? আমি বললাম হ্যাঁ। তারপর নন্দী চরণ বললো এখানে যে আসে সে আর বেঁচে ফেরে না। আগে এখানে শ্মশান ছিল শ্মশানের এখানে থাকলেও বাথরুম বা অন্য কোন ছবি ছুতো নাই তাকে এখান থেকে বের করে মেরে ফেলে ওই পৈশাচিক ঘোড়ারা।
নন্দী চরণ তখন আমার পা জড়িয়ে ধরে বলে বাবা আমাদের বাঁচাও। তাই দেখে বাকি সবাই আমার পা জড়িয়ে ধরে আর বলতে থাকে আমাদের বাঁচাও।
এই পৈশাচিক ঘোরার কারণে আমাদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে আগে তো শুধু এই শ্মশান চক্রে থাকতো এখন আমাদের গ্রামের ওদিকে ও যাচ্ছে। আমাবস্যার আগের দিন থেকে পরের দিন পর্যন্ত এই তিন দিনের মধ্যে ছেলে, বুড়ো ,বাচ্চা ,মেয়ে,বউ কাউকে ছাড়ে না। যাকে সামনে পায় তাকে মেরে ফেলে।
আমি বললাম আমি তো শুধুমাত্র একটা হরি ভক্ত। হরিচাঁদ গুরুচাঁ ঠাকুরের নাম নিয় আমি আর কিছু জানিনা।
তখন পিঠ ঠেলে একটা বয়েস জ্যেষ্ঠ লোক এসে আমার পা জড়িয়ে ধরে বলে বাবা আমাদের বাঁচাও। আমি বললাম ছাড়ো ছাড়ো আপনি আমার থেকে অনেক বয়েস জ্যেষ্ঠ তবু আমার পা ছাড়ে না। তখন হরিচাঁদ গুরুচাঁদ ঠাকুরের কাছে ক্ষমা চেয়ে বললাম ঠাকুর এই প্রণাম তুমি গ্রহণ করো আমাদের হরি ভক্তের ভেতর যেমন হয়। যখন আমরা মাতাম খুলায় থাকি তখন ছোট হোক বড় হোক সবাই সমান সবাই সবাই সবার কে প্রণাম করতে পারে, হরিচাঁদ গুরুচাঁদ বাবার ভক্ত। তারপর আমি বললাম ঠিক আছে ঠিক আছে ওঠো তখন বয়স জ্যেষ্ঠ লোকটা তার পরিচয় দেয় আমার নাম চন্দ্রকান্ত সিকদার চলুন আপনি আমাদের বাড়িতে সেখানে কথা হবে তখন আমি ঠিক আছে বলে আমার সব জিনিসপত্র গুছিয়ে ওদের সাথে যেতে লাগলাম। বয়স জ্যেষ্ঠ চন্দ্রকান্তের বাড়ি এসে বসলাম আর দেখলাম চন্দ্রকান্তুর বাড়ি মাটির দেওয়াল দিয়ে দুতালা বাড়ি আর তিন বারান্দা, আর ঘরের ভেতরে চারটি ক্ষোভ, বাড়ির দক্ষিণ পাশে একটা পুকুর তারপর আমি বললাম বলুন ব্যাপার কি এই ঘোড়া কবে আসে চন্দ্রকান্ত বলল বাবা কিছু খেয়ে নিন তারপরে কথা হবে ।
তারপর আমি স্নান করতে চাইলাম বলল ওদিকে পুকুর আছে বাড়ির দক্ষিণ দিকে। আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন আমি আমার ব্যাগ থেকে গামছা জামাকাপড় বের করে পুকুরের দিকে যেতে লাগলাম গিয়ে দেখি পুকুরটা মোটামুটি বড় আর পুকুরের জল পরিস্কার গিয়ে স্নান করতে লাগলাম, স্নান করে এসে দেখি চন্দ্রকান্তের বউ মা ভাত বেড়ে রেখেছে চন্দ্রকান্ত বলল বাবা বসুন তারপর চন্দ্রকান্ত আর আমি খেতে বসলাম খাওয়ার পর চন্দ্রকান্ত তার ছেলে বৌমা আর এক নাতি সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। ছেলের নাম রুদ্রকান্ত সিকদার,বৌমার নাম অনিমা সিকদার, আর নাতির নাম রবি কান্ত শিকদার। সবাই এসে এসে আমাকে একটা প্রণাম করে গেল তারপর চন্দ্রকান্ত সবাইকে ঘরে পাঠিয়ে দিল, আর বলল বাবার জন্য একটা ঘর ঠিক করো। আমি চন্দ্রকান্ত কে বললাম আমি এই ব্যাপারে সব না জেনে কিছুই করতে পারব না। আমাকে সব বলুন কিছু লুকাবেন না। চন্দ্রকান্ত বলল তবে তো সেই পাগলা বুড়ো জেঠুর কাছে যেতে হবে। আমি বললাম তবে চলো চন্দ্রকান্ত বললো এখন না সেই পাগলা বুড়ো জেঠু শুধু মাত্র সকালবেলায় কথা বলে, আর সারাদিন কথা বলে না। জানিনা কেন সেই জন্য সবাই তাকে পাগলা জেঠু বলে। আমি বললাম তাহলে আমি এখন একটু কাজে বের হই সন্ধ্যা হওয়ার আগে চলে আসব। আর গ্রামটা ঘুরেও দেখব। তখন আমি আমার জিনিসপত্র আমার সাইকেলে বেঁধে চেচাতে চেচাতে বললাম ছাতি সার্ভে সিল কাটাবে বলতে বলতে আমি যেতে লাগলাম। একটা বাড়ি থেকে একটা মহিলা ডেকে বলল ছাতি ঠিক করে দাও, ছাতি ঠিক করতে কত নাও আমি বললাম এক আনা। ছাতিটা ঠিক করে দিয়ে আমি বেরিয়ে পড়লাম তার ভেতরে গ্রামটাও আমি ভালো করে দেখতে থাকলাম। সামনে গিয়ে দেখলাম একটা পুরনো ভাঙ্গা বাড়ি তার পাশে একটা পুরনো মন্দির এটাও প্রায় ভেঙে পড়েছে মন্দিরে একটি প্রণাম করে ভাঙা বাড়িটির সামনে আসলাম আসার পর, এখান থেকে আমার কিছু আভাস হচ্ছিল, এখানে কিছু আছে। তারপর আমি ওখান থেকে আবার ফিরে চন্দ্রকান্তর বাড়ি আসলাম, বাড়ি এসে বললাম চন্দ্রকান্ত তোমাদের গ্রামের দিকে একটা ভাঙ্গা বাড়ি দেখলাম ওটা কার বাড়ি? আর বাড়িতে কি হয়েছিল তুমি কিছু জানো। চন্দ্রকান্ত বলল আমি ছোটবেলা থেকেই ওরকম ভাঙা দেখছি পাগলা জেঠু হয়তো বলতে পারবে। চন্দ্রকান্ত সাথে কিছু কথাবার্তা বলে রাতের খাওয়া সেরে শুয়ে পড়লাম। পরের দিন সকাল সাড়ে তিনটে বা চারটের সময় উঠে পড়লাম। তখন চন্দ্রকান্ত বলল চলুন বাবা পাগলা জেঠুর কাছে যেতে হবে। চন্দ্রকান্ত আর আমি হাঁটতে হাঁটতে পাগলা জেঠুর বাড়ির দিকে যেতে লাগলাম, গিয়ে দেখি পাগলা জেঠু ওই ভাঙ্গা বাড়ির পাশে সেই মন্দির থেকে বের হচ্ছে। কালকে যখন আমি এসেছিলাম তখন তো কাউকে দেখিনি চন্দ্রকান্ত কে বললাম। চন্দ্রকান্ত তখন কিছু বলল না পাগলা জেঠুর কাছে গিয়ে বলল জেঠু নমস্কার। তখন আমিও একটা নমস্কার করলাম। পাগলা জেঠু বলল চন্দ্রকান্ত তুই এখানে? এখানে তো আসিস না। সাথে আবার ইনি কে? চন্দ্রকান্ত বলল জেঠু ইনি সেই সিদ্ধ পুরুষ কালকে যে ওই শ্মশানে ছিল। পাগলা জেঠু অবাক হয়ে বলল কি কালকে ওই শ্মশানের লোক ছিল; আপনি ছিলেন পাগলা জেঠু বলল। আমি বললাম হ্যাঁ। পাগলা জেঠু বলল আমাদের বাঁচান এখানে পৈশাচিক ঘোড়া আমাদের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে, দুদিন পরে আমাবস্যা তাই কাল থেকে পরপর তিনদিন পৈশাচিক ঘোরার উপদ্রব চলবে। অমাবস্যার দিনকে তো আরো বেশি বেড়ে যাবে। আমি বললাম জেঠু আমাকে সব খুলে বলুন। কি হয়েছে? কিছু লুকাবেন না কিছু লুকালে আমি কিছু করতে পারবো না। পাগলা জেঠু কিছুক্ষণ ভেবে বলা শুরু করলো আমি তখন খুবই ছোট তখন এই ভাঙ্গা বাড়িটা ছিল একটা জমিদারের তার নাম বিষ্ণু কান্তি হালদার, হালদার বংশের জমিদারের সব ছেলে, বউ, মেয়ে, সব মারা গেছে। শুধু বিষ্ণু কান্তি হালদার আর তার একটি মেয়ে বৃষ্টি হালদার দুজনেই বেঁচেছিল তখন বৃষ্টি হালদারের ও শরীর ভালো ছিল না। সে এক তান্ত্রিকে নিয়ে এসে দেখাচ্ছিল কিন্তু বিষ্ণু কান্তি হালদার তো জানে না। ওই তান্ত্রিক নিজের কাজল সিদ্ধি করার জন্য এইসব করছে।
তান্ত্রিক বিষ্ণু কান্তি হালদার কে বলে এই সব ঘোড়া কে তুমি যদি ঘোড়ার গায়ে আগুন লাগিয়ে নেয় পুরানো সময় বলি দাও তাহলে তোমাদের সংসার আবার ঠিক হয়ে যাবে। তখন বিষ্ণু কান্তে হালদার তো জানতো না এসব হবে। ওই ঘোড়াগুলো বলি দেয়ার সাথে সাথেই বিষ্ণু কান্তি হালদারের গায়ে আগুন লেগে মরলোই সাথে ওর মেয়ে বৃষ্টি হালদার নগ্ন করে তান্ত্রিক তার তান্ত্রিক ক্রিয়া কলা শুরু করে। আর সেই মন্ডপে বৃষ্টি হালদার কে বলি দেয় , বলি দেয়ার পর বৃষ্টি হালদারের শরীরটা এই জমিদার বাড়ির কোথাও পুতে দেয় । আপনি তো দেখেছেন ওই শ্মশানে ওখানে শুধু ঘোড়া কিন্তু এই তিন দিনে ঘোড়ার সাথে ওই বৃষ্টি হালদার এসে আমাদের খুব অতিষ্ঠ করে দেয়। এই তিন দিন কেউ বাড়ি থেকেও বের হতে পারে না। যে বের হয় তার মৃত্যু নিশ্চিত আর যদি কেউ না বের হয় তাহলে বৃষ্টি হালদার এই গ্রামের কোন লোকের নাম ধরে ডাকে, নাম একবার শুনলে সে আর ঘরে থাকতে পারে না।
সে বেরিয়ে আসে তখন সেই বাড়ির সবাই কিসের মরন ঘুম ঘুমিয়ে পড়ে, আর যাকে ডাকে তাকে নিয়ে চলে যায়
এই তিন দিনে যদি কেউ না বের হয় তাহলে একটা তো নেবেই আর বের হলে যত বের হবে সব মারা যায়। আমরা আগে এর জন্য পাহারা দেয়ার জন্য অনেক লোককে রেখেছিলাম। সে একই দিনে সব মারা গেছে তারপর থেকে কেউ আর পাহারা দিতে যায় না। শুধুমাত্র আমি বেঁচে ছিলাম আমি বেঁচে ছিলাম এই কারণে আমি বাড়ির কাছে যাচ্ছিলাম আমার মায়ের শরীর খারাপ ছিল তাই আমি বাড়ি ফিরে আসছিলাম তবুও আমার এক হাত আর আমার বলার ক্ষমতা নিয়ে গেছে। শুধুমাত্র সকালে কথা বলতে পারি সূর্য উঠে গেলে আর আমার গলা দিয়ে শর বেরোবে না । এই বলতে বলতে পাগলা জেঠুর কথা আর শোনা যাচ্ছে না। তখন বুঝতে পারলাম পাগলা জেঠু আর কথা বলতে পারবে না। তারপর আমরা চন্দ্রকান্তের বাড়িতে চলে আসি বাড়িতে এসে আমি বললাম। আমার কিছু জিনিস লাগবে আমি তোমাকে বলছি সেই জিনিসগুলো তুমি জোগাড় কর? আমি যে শ্মশানে ছিলাম সেই শ্মশানের মাটি, আর ঘোড়াগুলো যে রাস্তাতে চলাফেরা করে সেই রাস্তার মাটি, আর যদি পারো ওই শ্মশানে কোনো ছাই থাকলে সেই ছাই টাও সাথে করে নিয়ে আসবে আর একটা কালো মোরগ। তাদের সাথে সাধারণ যজ্ঞে যে জিনিস লাগে তাই নিয়ে আসো আর শোনো। আর বাকি আমি দেখছি তারপর আমি বেরিয়ে গেলাম বেরিয়ে গেলে ওই গ্রামের নতুন শ্মশানে ভেতরে গিয়ে নিলিবিলিতে একটু হরিচাঁদ ঠাকুর গুরুচাঁদ ঠাকুর কে স্মরণ করে একটু সময় ধ্যানে বসলাম আর আমার ধ্যানের মধ্যে হরিচাঁদ গুরুচাঁদ ঠাকুর এসে বলল, ওই বাড়ির চার কোনায় মেয়েটির চার হাত পা ,মধ্যিখানে মেয়েটির শরীর, আর ঘরের পেছনের দরজায় পর ওখানে মেয়েটির মাথা আছে। ঘোড়ার কি হবে আমি জিজ্ঞাসা করলাম হরিচাঁদ গুরুচাঁদ ঠাকুর বলল কোন চিন্তা নেই ওই মেয়েটির ওইসব কটা ঘোড়া বন্ধু ছিল, তাই মেয়েটির অসুবিধা। না হয় তাই ওরা ওর সাথে থেকে গেছে মেয়েটি মুক্তি পেলে ঘোড়াগুলো ও মুক্তি পেয়ে যাবে
চন্দ্রকান্তুর এসে বাড়ি তার ছেলে বৌমাকে বলল বাবা আসেনি এখনো তারা বলল না। এই বলতে বলতে আমি পৌঁছে গেলাম তাদের বাড়ি আর বললাম সবকিছু জোগার হয়েছে? চন্দ্রকান্ত বলল হয়েছে আর আমি বললাম। একটা ভালো পুরোহিত কে খবর দাও সে কাল সকালে সন্ধ্যা হওয়ার আগে যোগ্য করবে সাধারণ যে যোগ্য হয় সেই যোগ্য আমি যেভাবে যেভাবে বলবো সেই ভাবে সেই ভাবে করবে । রাত্রেবেলা আমি শ্মশানে গিয়ে আমার কাজ করব তোমরা ওই পুরনো ভাগা বাড়ির চার কোনায় গর্ত খুঁজে মেয়েদের হাত-পা আর মাঝখানে গর্ত খুঁজে মেয়েটির শরীর, আর পিছনের দরজা ওখানে গর্ত খুজে মেয়েটির মাথাটা বের করে শ্মশানে আনেন। চন্দ্রকান্ত ভয় ভয় বলল আমরা। আমি বললাম কিছু হবে না। সন্ধ্যা হওয়ার আগে আগে তোমরা এটা বের করে রাখো আমি অমাবস্যা লাগার সাথে সাথে আমার কাজ শুরু করব। তারপরের দিন সাধারণ যজ্ঞ আমি যেভাবে যেভাবে বললাম সেভাবে সেভাবে পূর্ণ করে। তাই যোগ্যর চাই ওই পুরো গ্রামের সব বাড়ির চারিপাশটা ঘিরে দিলাম আর বললাম তোমরা যত পারো তত দূরে দূরে ছড়িয়ে দাও রুদ্রকান্ত আর তার বন্ধুদের দিয়ে আমি একটু বিশ্রাম করতে গেলাম। রুদ্রকান্ত আর বন্ধুরা কাজটা ভালো করে করেছে আমাকে এসে ভুলে গেল।
তারপর সেদিন আর কোনো উপদ্রব হলো না যেদিন তিনদিনের প্রথম দিন সেদিন যজ্ঞের ছায়ার কারণে প্রবেশ করতে পারেনি। তাই ওই পৈশাচিক ঘোড়া আর বৃষ্টি হালদারের আত্মা খুব রেগে আছে তাই আমি সবাইকে বললাম। আজ রাত নিজেদের বাড়ির দরজা খুলবে না যাই হয়ে যাক না কেন আমি এসে ডাকলেও খুলবে না। এই বলে আমি শ্মশান চত্বরে দিকে হাটা শুরু করলাম, গিয়ে দেখি সবকিছু তৈরি আছে। তারপর আমি আমার হরিচাঁদ গুরুচাঁদ ঠাকুরের মন্ত্র দিয়ে আমার গা বন্ধন করে নিলাম। বন্ধন করে আমার যোগ্য আরম্ভ করলাম এক হাতে জাহাদ বা কাশ বাজাতে থাকলাম। যজ্ঞে প্রথমে সেই মুরগির কপাল থেকে একটু খানি রক্ত ও একটু ফুল দিয়ে দিলাম আগুনে। আগুনে দিয়ে যোগ্য শুরু করলাম। যোগ্য মাঝামাঝিতে স্থানে পৌঁছালো তখন ঝড় তুফান শুরু হয়ে গেল আমি বুঝতে পারলাম এটা ওই পৈশাচিকরা আর মিষ্টি হালদারের সাথীগুলো করছে তবুও আমি আমার জাহাজ বা কাশি আর মন্ত্র জপ বন্ধ করলাম না। যত সময় পারছেনা বুঝলো যত যোগ্য শেষের দিকে এগোচ্ছে ততই ওরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছে, তখন আমি একটু শান্ত হয়ে বললাম বৃষ্টি হালদার তুমি এমন করছ কেন? বললো আমার প্রতিশোধ এখনো পূর্ণ হয়নি
আমি বললাম তুমি এত অসহায় নিরীহ মানুষের উপর অত্যাচার করছ কেন? তোমার প্রতিশোধ আমি পূর্ণ করতে সাহায্য করবো। ওই ভাঙ্গা বাড়ির যেই পাগলা জেঠু আছে সেই পাগলা জেঠু তোমার পুরো সংসার নষ্ট করেছে । তোমায় বলি দিয়েছে তোমার বলি দেওয়ার পর তার একটা ভুল হয়েছিল। তাই তার সব শক্তি হারিয়ে ওই অবস্থা তুমি তাকে মারতে পারো। কিন্তু আর কাউকে ক্ষতি করো না নইলে তোমার আত্মা আর তোমার সঙ্গী সাথী ঘোড়া দের আমি নিচ্ছিন্ন করে দেব। তারপর বৃষ্টি হালদার চিনতে পেরে ওই পাগলা জেঠুকে খুবলে খুবলে খেয়ে ফেলে তারপরও তাদের তৃষ্ণা মেটে না, তখন আবার শ্মশানে ফিরে আসে। আমি বললাম দারা তোদের মুক্তি ব্যবস্থা করছি যজ্ঞের মোড়ক টি দিয়ে বললাম আগে এই টি খেয়ে শান্ত হ। তারপরে আমি ওই মোরগ টিকে বলি দিয়ে রক্ত যুদ্ধের আগুনে ফেললাম আর ওদের মোরগটি দিলাম তখন সব ঘোড়া আর বৃষ্টির আত্মা চিৎকার করে উঠলো তখন যজ্ঞের আগুন নিভানোর জন্য প্রচুর চেষ্টা করছিল ।এতে ফল হবে না বুঝে ওরা গ্রামের দিকে গেল আমি তখন শ্মশান মাটি, সেই শাসনের, ঘোড়া রাত যেই পথে চলাফেরা করতো সেই পথের মাটি, একসাথে মিশিয়ে জাহাজ কাশির তালে তালে মন্ত্র বলে যজ্ঞের আগুনে ফেলতে লাগলাম ।
ওরা আবার আসে বলে আমাদের ছেড়ে দাও আমাদের মুক্তি দাও তখন আমি ওই বৃষ্টির শরীরের একা একা অংশের যে হার গুলো একা একা করে যজ্ঞের আগুনে ফেলতে থাকি আর জাহাজ কাশির তাহলে মন্ত্র যোগ করতে থাকি তখন তাদের ধীরে ধীরে বুঝতে পারে এখন আমাদের যাওয়ার সময় হয়েছে তারা। তারা তখন একটি বারের মতন নিজেদের শরীরের ধারণ করে স্বর্গের দিকে চলে যায়। তারপর যোগ্য শেষ করার পর আমি ওই গ্রামে গিয়ে বললাম সব ঠিক হয়ে গেছে তখন আমার সকলে আমাকে ঘিরে ধরে বলল বাবা সব তো ঠিক হয়ে গেছে। কিন্তু পাগলা জেঠু তোমারা গেছে তখন আমি বললাম ওই পাগলা জেঠুই ওই সাধু। ওই ভন্ড সাধুর জন্যই এই অবস্থা। তোমাদের গ্রামের ভন্ড সাধু কে মেরে প্রতিশোধ নিয়ে তাই ওদের মুক্তি ।
তারপর একদিন দুদিন পর আমি আবার ওখান থেকে বাড়ির দিকে রওনা দেই তারপর ওই গ্রামে গেছি একবার সে অন্য গল্প আবার পরে আরেকদিন হবে। শানু বলল ওই পাগলা জেঠুই ঐ তান্ত্রিক তুমি বুঝলে কি করে সতীশ ঠাকুরদা বলল যখন তার কাছে গেছিলাম কথা বলতে তখন আমার সন্দেহ হয়েছিল তারপর যখন আমি ধ্যানে বসে হরিচাঁদ গুরুচাঁদের শরণাপন্ন হলাম তখন আমি সব জানতে পারলাম ওই সেই ভন্ড সাধু যার জন্য এই অবস্থা। সতীশ ঠাকুরদা বলল বৃষ্টি কমে গেছে চলো এখন সবাই বাড়ি যাও। ময়না , গোপু , আর শানু সবাই বলল আচ্ছা ঠিক আছে এই বলে সবাই বাড়ির দিকে চলে গেল।
সতীশ ঠাকুরদার গল্প ২ আসছে
আমি নতুন নতুন গল্প লিখছি তো কোন ভুল ত্রুটি থাকলে ফিডব্যাক দিও।