Posts

উপন্যাস

মেঘমালা এবং রোদ্দুর পর্ব ৩

January 16, 2025

Mahi 599

6
View


---


পর্ব ৩: মেঘমালা এবং রোদ্দুর

গ্রামের মেলা শেষ হওয়ার পর মেঘমালা আবার ঢাকায় ফিরে গিয়েছিল। কিন্তু রোদ্দুরের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর তার মনে এক ধরনের অস্থিরতা এসে গিয়েছিল। দিন-রাত তার ভাবনায় রোদ্দুর, তার কথাগুলি, তার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকা—সব কিছু ছিল যেন পেরিয়ে যাওয়ার মতো এক অদ্ভুত অনুভূতি। মেঘমালা জানত, রোদ্দুরের কাছে যে অনুভূতি রয়েছে, তা সহজ নয়। কিন্তু সে নিজে এখনও পুরোপুরি সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না। তার জীবন, তার ভবিষ্যৎ—এগুলো সব কিছুই যে প্রশ্নবোধক হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেটা তার নিজের কাছেও পরিষ্কার ছিল।

ঢাকায় নতুন বন্ধু-বান্ধবীদের মধ্যে সময় কাটানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু রোদ্দুরের কথাগুলি আর তার চোখের দৃষ্টি যেন মেঘমালাকে কখনো শান্তি দেয়নি। একদিন তার বান্ধবী, মৌমিতা, তাকে বলল,
“তুই কি জানিস, মেঘমালা, একসময় আমারও এমনই অবস্থা ছিল। মনে হতো, আমার ভালোবাসা আর সমাজের নিয়মের মাঝে এক বিশাল প্রাচীর দাঁড়িয়ে। কিন্তু বুঝবি, আমাদের জীবনের কিছু সিদ্ধান্ত নিজেরাই নিতে হয়। কারো অনুমতি না নিয়ে।”

মৌমিতার কথাগুলো মেঘমালার মনকে আরও বেশি ভাবিয়ে তুলল। তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, শুধু সময় নয়, নিজের জীবনের সঠিক পথ খুঁজে বের করারও সময় এসেছে। কিন্তু সে জানত, এই সিদ্ধান্ত তার জন্য আরও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

একদিন রোদ্দুর ফোন করল,
“তুমি জানো, আজ গ্রামের পুরনো মন্দিরের সামনে একটা বড় অনুষ্ঠান হবে। আমার মনে হয়, তোমার আসা উচিত।”
মেঘমালা একটু হাসল, "তুই তো জানিস, আমি আর সহজে গ্রামে যেতে পারি না, পড়াশোনায় ডুবে থাকি।"
"কিন্তু তুই যদি একটু সময় বের করতে, আমরা আবার পুরনো স্মৃতিগুলোর মধ্যে হারিয়ে যেতে পারতাম।"
রোদ্দুরের কথা যেন মেঘমালার হৃদয়ে কোনও সুর বাজিয়ে গেল। সে জানত, রোদ্দুর এখনও একইভাবে তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকবে।

মেঘমালা কিছু দিন চিন্তা করার পর সিদ্ধান্ত নিল, সে গ্রামের উদ্দেশ্যে ফিরবে। কিন্তু তার ভেতরে ভয়ও ছিল—এটা তার জীবনের এক নতুন মোড় হতে চলেছে।


---

গ্রামে ফিরে মেঘমালা দেখল, সেখানকার দৃশ্য অনেকটাই বদলে গেছে। অনেক নতুন বিল্ডিং, একটু বেশি জমজমাট পরিবেশ। কিন্তু রোদ্দুরের প্রাচীন পুকুরের ধারে বসে থাকা姿, সেই পুরোনো গাছ, সব কিছুই যেন একইভাবে ছিল। রোদ্দুরের চোখে তার সেই আগের অদৃশ্য মায়া, সেই ভালোবাসা ছিল।

“তুমি এলেই ভালো হয়। কিন্তু তোর মুখে কিছু দেখছি না, কী হয়েছে?” রোদ্দুর মেঘমালার কাছে জানতে চাইল।
“কিছু না, শুধু ভাবছিলাম, অনেক কিছুই বদলে গেছে, রোদ্দুর। আমি আর তুই, আমাদের জীবনের দিকটা আরেকটু আলাদা হয়ে গেছে।”

রোদ্দুর চুপ করে গেল। তারপর হঠাৎ সে বলল,
“আমাদের মধ্যে এক অদৃশ্য বাঁধন ছিল, সেটা অস্বীকার করার দরকার নেই। তুই জানিস, আমি তোকে ছাড়া আর কিছু ভাবি না। তবে তুই যদি মনে কর, আমাদের সম্পর্ক অন্য কিছু হতে পারে না, তাহলে আমি তোর সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।”

মেঘমালা তাকিয়ে রইল। কিছু বলার জন্য তার ঠোঁটে কথা আসছিল না। সে জানত, রোদ্দুর তাকে ভালোবাসে, কিন্তু সে নিজে কিভাবে এই সম্পর্কের মধ্যে নিজেকে খুঁজে পাবে? সে যদি সব কিছু অতিক্রম করতে চায়, তাহলে তার আত্মবিশ্বাস এবং সাহস প্রয়োজন ছিল।

“আমাদের সম্পর্ক তো অন্য কিছু নয়, কিন্তু…” মেঘমালা শেষ পর্যন্ত বলল, “তুমি বললেই তো সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে না, রোদ্দুর। এটা সমাজও ভাববে, আমাদের ভালোবাসা তো প্রথা ভাঙতে যাচ্ছে। আমাদের দুজনেরই জীবন এখন বড় একটি পথের মুখে দাঁড়িয়ে।”


---

পর্ব ৩ শেষ

পরের পর্বে তাদের সম্পর্কের প্রতি সমাজের চাপ, পরিবারের প্রতিক্রিয়া এবং নিজেদের মধ্যে বিশ্বাসের সম্পর্ক কেমন পরিণতির দিকে যাবে, তা আরও গভীরভাবে উঠে আসবে।

Comments

    Please login to post comment. Login