Posts

উপন্যাস

মেঘমালা এবং রোদ্দুর পর্ব ৪

January 16, 2025

Mahi 599

8
View

শিরোনাম: মেঘমালা আর রোদ্দুর
পর্ব ৪: সমাজের চোখে ভালোবাসা

গ্রামে মেঘমালার ফেরা যেন এক নতুন আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। সে শহরে পড়তে গিয়েছে, এক নতুন জীবন শুরু করেছে, কিন্তু তার শৈশবের গ্রামের মানুষগুলো তাকে ভুলতে পারেনি। বিশেষ করে রোদ্দুর। তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ যেন গ্রামের লোকেদের চোখে ধরা পড়ে।

সন্ধ্যাবেলা উঠোনে বসে চা খাচ্ছিল মেঘমালা। তার মা পাশে বসে রান্নার কাজে ব্যস্ত। এমন সময় মেঘমালার বড় চাচী এসে বললেন,
“মেঘমালা, তুই শহরের মেয়ে হয়ে গেছিস, তা ভালো কথা। তবে একটা কথা বলি, এই রোদ্দুরের সঙ্গে এত বেশি মেশা তোর জন্য ঠিক হবে না।”
মেঘমালা অবাক হয়ে তাকাল।
“কেন চাচী?”
“তুই বুঝবি না। সমাজে ছেলে-মেয়ে এইভাবে একসঙ্গে বেশি মেশা ভালো চোখে দেখে না, আর তাছাড়া তোরা কাজিন। এ নিয়ে গ্রামের মানুষজন কানাঘুষা শুরু করেছে।”

চাচীর কথাগুলো যেন মেঘমালার হৃদয়ে কাঁটার মতো বিঁধল। সে ভাবল, রোদ্দুরের সঙ্গে তার শৈশবের দিনগুলো, পুকুরপাড়ের হাসি-ঠাট্টা, মেলার আনন্দ—এসব কি ভুল ছিল?


---

সেই রাতে রোদ্দুর তাকে ফোন করল।
“তোর চাচী আবার কিছু বলেছে তোকে?”
মেঘমালা অবাক হয়ে বলল, “তুই জানলি কী করে?”
“আমি জানি, গ্রামের মানুষ এভাবেই কথা বলে। তবে তুই এসব নিয়ে চিন্তা করিস না। আমি জানি, আমাদের সম্পর্কটা স্রেফ বন্ধুদের মতো ছিল না, তবু আমরা কিছু ভুল করিনি।”

মেঘমালা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “কিন্তু রোদ্দুর, মানুষ তো আমাদের বুঝতে চাইবে না। তারা শুধু তাদের নিয়ম আর প্রথার কথা বলবে। আমাদের ভালোবাসা এই সমাজ মানবে কি?”

রোদ্দুরের গলা শক্ত হয়ে গেল।
“সমাজ সবসময় নিজের নিয়ম চাপিয়ে দেয়। কিন্তু আমরা কি সেই নিয়মে বাঁচব, নাকি নিজের মতো করে? মেঘমালা, আমি শুধু চাই, তুই সত্যিটা অনুভব কর।”


---

পরদিন সকালে মেঘমালা তার দাদুর সঙ্গে দেখা করতে গেল। দাদু গ্রামের সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি। ছোটবেলা থেকেই মেঘমালা তার প্রিয় ছিল।
“দাদু, আপনি কী ভাবেন? কাজিনদের মধ্যে কি কখনো এমন ভালোবাসা হওয়া উচিত নয়?”
দাদু হেসে বললেন, “ভালোবাসা তো এমন একটা জিনিস, যা বাধা মানে না। তবে সমাজ কি তা সহজে মেনে নেয়? ভালোবাসার পথ যদি বেছে নিস, তুইকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। সাহস লাগবে। কিন্তু মনে রাখিস, ভালোবাসা মানে কখনো ভুল নয়, যদি সেটা সৎ হয়।”

দাদুর কথাগুলো মেঘমালার মনে গভীর দাগ কাটল।


---

একদিন বিকেলে রোদ্দুর আর মেঘমালা আবার পুকুরপাড়ে বসেছিল।
“তুই কি ঠিক করেছিস, মেঘমালা?” রোদ্দুর জিজ্ঞাসা করল।
মেঘমালা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। তারপর বলল,
“আমি জানি না। আমি শুধু জানি, তোকে ছাড়া আমার জীবন অসম্পূর্ণ মনে হয়। কিন্তু সমাজের চোখে আমরা যদি ভুল হই, তাহলে কীভাবে সামলাব?”

রোদ্দুর মৃদু হেসে বলল,
“ভালোবাসা যদি সত্য হয়, তাহলে সেই সত্য মিথ্যে করার সাহস কারও নেই। তুই শুধু আমার হাতটা ধর। আমরা একসঙ্গে লড়ব।”


---

পর্ব ৪ শেষ

পরের পর্বে দেখা যাবে, সমাজের চাপ এবং পরিবারের সিদ্ধান্ত তাদের সম্পর্ককে কোন দিকে নিয়ে যায়। একই সঙ্গে মেঘমালা আর রোদ্দুর নিজেদের মধ্যে ভালোবাসার জন্য কীভাবে লড়াই চালিয়ে যাবে, তা আরও স্পষ্ট হবে।

Comments

    Please login to post comment. Login