শিরোনাম: মেঘমালা আর রোদ্দুর
পর্ব ৫: লড়াইয়ের সূচনা
মেঘমালা আর রোদ্দুরের সম্পর্ক গ্রামের মানুষের চোখে ধরা পড়ে গেছে। তাদের হাসি, কথা বলা, কিংবা একসঙ্গে সময় কাটানো নিয়ে কানাঘুষা শুরু হয়েছে। গ্রামের পুকুরপাড়, মন্দিরের উঠোন, কিংবা আমবাগান—যেখানেই তারা একসঙ্গে সময় কাটায়, সেখানেই কিছু লোকের চোখ আটকে যায়।
সেদিন সকালে মেঘমালার মা তাকে ডেকে বললেন,
“তোর ব্যাপারে এখন অনেক কথা শুনছি। রোদ্দুরের সঙ্গে এত সময় কাটানো ঠিক হচ্ছে না। তোরা ভাই-বোনের মতো থাকবি, এটা মানুষ মেনে নেয়। কিন্তু এর বেশি কিছু মানবে না।”
মেঘমালা চুপ করে শুনছিল। সে জানত, এই দিনটা আসবেই। তার মনের মধ্যে এক ধরনের দ্বন্দ্ব শুরু হলো। তার মা কি ঠিক বলছেন?
---
সেই দিন দুপুরে রোদ্দুর তার বাড়ির উঠানে বসে ছিল। মেঘমালা তার পাশে গিয়ে দাঁড়াল।
“রোদ্দুর, আমরা যা করছি, সেটা কি ভুল?” মেঘমালা সোজাসুজি জিজ্ঞাসা করল।
রোদ্দুর তাকিয়ে বলল, “ভুল আর সঠিকের বিচার করার অধিকার কার? সমাজ? নাকি আমরা নিজেরা?”
“কিন্তু মানুষ বলছে, আমাদের এই সম্পর্ক ঠিক নয়। তারা বলছে, আমরা একসঙ্গে থাকলে নাকি সবাই অপমানিত হবে।”
রোদ্দুরের মুখ গম্ভীর হয়ে গেল।
“মেঘমালা, মানুষ সবসময় অন্যের জীবনে নাক গলাবে। আমরা যদি তাদের কথায় নিজেদের ভালোবাসা ত্যাগ করি, তাহলে তো আমরা জীবনের মানেই হারিয়ে ফেলব।”
---
পরের কয়েকদিন গ্রামের পরিবেশ আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠল। মেঘমালার বড় চাচা একদিন তাদের উঠোনে এসে বললেন,
“রোদ্দুর, তুই মেঘমালার সঙ্গে যা শুরু করেছিস, সেটা বন্ধ কর। তোরা ভাইবোন। এই সম্পর্ক সমাজ কখনো মানবে না।”
রোদ্দুর ধীর গলায় বলল, “চাচা, আপনি আমাদের ভাইবোন বলছেন, কারণ আমরা রক্তের সম্পর্কে বাঁধা। কিন্তু ভালোবাসা তো রক্ত দেখে আসে না। এটা হৃদয়ের ব্যাপার।”
“তুই কি বোঝাতে চাইছিস, তুই সমাজের নিয়ম ভাঙবি? গ্রামের মানুষ তোদের নিয়ে যেসব কথা বলছে, সেগুলো কি তোর কানে আসছে না?”
রোদ্দুর কিছু বলল না। কিন্তু তার চোখে যেন এক অদম্য আগুন জ্বলছিল।
---
মেঘমালার দাদু এই পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করছিলেন। এক সন্ধ্যায় তিনি রোদ্দুর আর মেঘমালাকে ডেকে বললেন,
“তোমাদের সিদ্ধান্ত তোমাদের নিতে হবে। কিন্তু মনে রাখো, সমাজের নিয়ম ভাঙা সহজ নয়। এটা যদি করো, তবে নিজেদের ওপর শক্ত থাকতে হবে।”
মেঘমালা কিছু বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু দাদু হাত তুলে তাকে থামালেন।
“তুমি রোদ্দুরকে ভালোবাসো, এতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু এই ভালোবাসার জন্য যদি লড়াই করতে হয়, তবে তোমাদের দুজনেরই সেই সাহস থাকতে হবে। সমাজের কথা ভাবলে, নিজের সুখ বিসর্জন দিতে হবে। এটা তোমাদেরই ঠিক করতে হবে।”
---
রাত গভীর হয়ে এসেছিল। পুকুরপাড়ে বসে রোদ্দুর আর মেঘমালা আবার একসঙ্গে ছিল।
“তুই ভয় পাচ্ছিস?” রোদ্দুর জিজ্ঞাসা করল।
মেঘমালা মাথা নেড়ে বলল, “ভয় পাচ্ছি না। কিন্তু চিন্তা হচ্ছে, আমাদের এই লড়াই কি সফল হবে?”
রোদ্দুর তার হাত ধরল।
“লড়াই তখনই সফল হয়, যখন নিজের বিশ্বাস অটুট থাকে। আমি জানি, আমরা যা করছি, সেটা ভুল নয়। ভালোবাসা কখনো ভুল হতে পারে না। সমাজ বুঝবে একদিন, আর যদি না বোঝে, তাও তুই আর আমি থাকব একসঙ্গে।”
---
পর্ব ৫ শেষ
পরবর্তী পর্বে দেখা যাবে, পরিবার ও গ্রামের পক্ষ থেকে তাদের উপর আরও কঠোর চাপ আসতে শুরু করবে। মেঘমালা ও রোদ্দুর কীভাবে এই চাপ সামলাবে, আর তাদের ভালোবাসা কীভাবে এই পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাবে, তা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হবে।