শিরোনাম: মেঘমালা আর রোদ্দুর
পর্ব ৭: সম্পর্কের পরীক্ষা
রোদ্দুর আর মেঘমালা দুজনেই জানত, তাদের ভালোবাসার পথ সহজ নয়। চারপাশের সমাজ, পরিবার, এবং নিজেদের ভেতরের দ্বন্দ্ব—সব মিলিয়ে তাদের সম্পর্ক এখন বড় একটা পরীক্ষার মুখে।
---
সেদিন রাতে মেঘমালার মা তাকে ডেকে বললেন,
“তুই রোদ্দুরের সঙ্গে এই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে চাইলে, আমাদের মুখ দেখানো কঠিন হবে। সমাজের নিয়ম, প্রথা—এগুলো উপেক্ষা করলে একদিন তোদেরও খেসারত দিতে হবে।”
মেঘমালা কোনো উত্তর দিল না। তার মা চলে যাওয়ার পর সে নিজের ঘরে বসে রইল। জানালার বাইরে চাঁদের আলো তার মুখে পড়ছিল। সে ভাবছিল, তার ভালোবাসা কি এতটাই বড় ভুল? রোদ্দুরের প্রতি তার টান, তার অনুভূতি—সব কিছুই কি শুধু সামাজিক প্রথার কারণে মুছে যাবে?
---
অন্যদিকে রোদ্দুরও চুপ করে থাকতে পারছিল না। গ্রামের এক কোণে সে তার বন্ধু অপুকে বলল,
“আমি মেঘমালাকে ভালোবাসি। এটা কোনো অপরাধ নয়। কিন্তু সবাই যেন আমাদের শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে। কী করব আমি?”
অপু কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। তারপর বলল,
“দেখ, ভালোবাসা কোনো দিন সহজ ছিল না। তোর লড়াইটা অনেক কঠিন হবে, এটা তো জানিস। কিন্তু তুই যদি হাল ছাড়িস, তোর ভালোবাসার মানে থাকবে না। সিদ্ধান্ত তোকে নিতে হবে। তুই কী চাস?”
রোদ্দুর চুপ করে রইল। তারপর দৃঢ়ভাবে বলল,
“আমি মেঘমালাকে চাই। আমি তার পাশে থাকব, যতদিন সে আমাকে বিশ্বাস করে।”
---
পরের দিন সকালে রোদ্দুর আর মেঘমালা আবার পুকুরপাড়ে দেখা করল। মেঘমালার চোখ লাল হয়ে ছিল, যেন সারা রাত সে কেঁদেছে।
“রোদ্দুর, আমি ক্লান্ত। প্রতিদিন এই চাপ, এই কানাঘুষা… আমার মনে হচ্ছে, আমি আর পারব না।”
রোদ্দুর তার দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুই যদি সত্যি বলতে চাস যে তুই আর লড়তে পারবি না, তাহলে আমি দূরে সরে যাব। কিন্তু যদি তুই আমার ভালোবাসায় ভরসা করিস, তাহলে আমি কিছুতেই তোকে ছেড়ে যাব না। তুই কি আমাকে বিশ্বাস করিস?”
মেঘমালা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। তারপর বলল,
“বিশ্বাস করি। কিন্তু আমি ভয় পাচ্ছি, রোদ্দুর। আমাদের যদি কেউ মানতেই না চায়? আমরা যদি একা হয়ে যাই?”
রোদ্দুর মৃদু হেসে বলল,
“তুই আর আমি একসঙ্গে থাকলে, আমরা একা হব না। লোকে হয়তো আমাদের বিরুদ্ধে থাকবে, কিন্তু তুই যদি আমার পাশে থাকিস, আমি সবকিছু জয় করতে পারব।”
---
এদিকে গ্রামের পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠছিল। লোকজন মেঘমালার পরিবার ও রোদ্দুরের পরিবারকে একের পর এক কথা শোনাতে লাগল।
“তোমাদের ছেলে-মেয়েরা গ্রামের নিয়ম ভাঙছে। এটা থামাও। নইলে তাদের জন্য ভালো কিছু হবে না।”
রোদ্দুরের বাবা একদিন রাগ করে বললেন,
“তুই যদি এই সম্পর্ক শেষ না করিস, তাহলে তোকে বাড়ি থেকে বের করে দেব।”
রোদ্দুর শান্তভাবে উত্তর দিল,
“আপনার যা করতে হয়, করুন। কিন্তু আমি মেঘমালাকে ছেড়ে দেব না।”
---
পর্ব ৭ শেষ
পরবর্তী পর্বে দেখা যাবে, পারিবারিক এবং সামাজিক চাপের মুখে মেঘমালা ও রোদ্দুর কীভাবে নিজেদের ভালোবাসাকে বাঁচানোর চেষ্টা করে। তাদের সাহস কি এই পরীক্ষায় টিকে থাকতে পারবে, নাকি তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে?