শিরোনাম: মেঘমালা আর রোদ্দুর
পর্ব ৮: সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দু এবং চারপাশের আঁচ
রোদ্দুর ও মেঘমালার সম্পর্ক শুধু তাদের দুই পরিবারের নয়, পুরো গ্রামজুড়েই এক আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। একদিকে তাদের ভালোবাসার শক্তি, অন্যদিকে চারপাশের নানা গুজব আর মতামত—এই দুইয়ের সংঘর্ষ যেন ধীরে ধীরে এক উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি করছে।
---
সেদিন বিকেলে গ্রামের চায়ের দোকানে কয়েকজন বসে গালগপ্প করছিল।
“এই মেঘমালা আর রোদ্দুরের ব্যাপারটা আর মেনে নেওয়া যাচ্ছে না,” এক বয়স্ক লোক বলল।
“হ্যাঁ, ঠিক বলেছিস। এটা যদি চলতে থাকে, তাহলে আমাদের গ্রামে ছেলেমেয়েরা আর নিয়ম মানবে না।”
এক তরুণ সেখানে বসেই বলল,
“কিন্তু দাদু, ভালোবাসা কি অপরাধ? তারা তো কাউকে অপমান করছে না। আর সত্যি কথা বলতে, এমন অনেক জায়গায় কাজিনদের বিয়ে হয়। তাহলে এখানে সমস্যা কোথায়?”
বয়স্ক লোকটি একদম কটমট করে তাকাল।
“তুই বোঝাবি আমাদের? সমাজের নিয়ম কেন আছে জানিস? ভালোবাসা এক জিনিস, কিন্তু সেটা করতে গিয়ে পরিবারের মানহানি করলে সেটা অপরাধ।”
এই তর্কের মধ্যেই পাশ থেকে আরও একজন বলল,
“তাহলে কি আমরা তাদের গ্রামের বাইরে বের করে দেব? এতে কি সমস্যার সমাধান হবে?”
কথাটা শুনে দোকানে নীরবতা নেমে এলো।
---
পাশের বাড়ির রিমি, মেঘমালার একসময়ের খুব কাছের বন্ধু, মেঘমালার সঙ্গে কথা বলতে এলো।
“তোর সত্যি কি মনে হয়, তোরা দুজন এই ভালোবাসায় টিকে থাকতে পারবি?”
মেঘমালা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। তার চোখে চিন্তার ছায়া।
“আমি জানি না, রিমি। কিন্তু আমি রোদ্দুরকে ছাড়া বাঁচতে পারব না। আমি শুধু চাই, সবাই আমাদের বুঝুক।”
রিমি কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর বলল,
“আমি তোকে বোঝাই বা না বোঝাই, তুই যদি নিজে এই লড়াই করতে পারিস, তবে সবাই একদিন মানতে বাধ্য হবে। তবে লড়াই সহজ হবে না, এটা মনে রাখিস।”
---
রাতে মেঘমালা ও রোদ্দুর গোপনে দেখা করল।
“তুই জানিস, গ্রামের চায়ের দোকানে লোকজন আমাদের নিয়ে কী বলছে?” মেঘমালা ফিসফিস করে জিজ্ঞাসা করল।
“জানি,” রোদ্দুর বলল। “তারা আমাদের শত্রু ভাবছে। কিন্তু আমি কিছুতেই তোকে ছাড়ব না। তুই কি এখনও আমার পাশে আছিস?”
মেঘমালা কিছু না বলে মাথা নিচু করল।
রোদ্দুর তার হাত ধরে বলল,
“শুন, তুই যদি একবার পিছিয়ে যাস, তবে এই সম্পর্ক বাঁচানো কঠিন হবে। আমরা যদি একসঙ্গে লড়ি, তবে একদিন মানুষ মেনে নেবে। সমাজ বদলাতে সময় লাগে, কিন্তু এটা সম্ভব।”
---
অন্যদিকে পাশের গ্রামের কিছু লোকও এই গুজব শুনে নিজেদের মতামত দিতে শুরু করল।
“তাদের গ্রামে এমন ঘটনা ঘটছে, আর কেউ কিছু বলছে না?”
“আমাদের গ্রামেও এমন কিছু ঘটতে পারে। আগে থেকে ব্যবস্থা না নিলে সমাজ নষ্ট হয়ে যাবে।”
এদের মধ্যে একজন বলল,
“তোমরা যারা এভাবে কথা বলছ, তারা কি একবারও ভেবে দেখেছ, তাদের দোষ আসলে কী? ভালোবাসা কি অপরাধ?”
লোকটি রাগী কণ্ঠে জবাব দিল,
“ভালোবাসা অপরাধ নয়। কিন্তু সমাজের নিয়ম তো আছে। তাদের এই সম্পর্ক সমাজের চোখে সঠিক নয়। এটা বন্ধ করতেই হবে।”
---
সেদিন রাতে গ্রামে পঞ্চায়েত ডাকা হলো। মেঘমালার পরিবার আর রোদ্দুরের পরিবার সেখানে উপস্থিত ছিল।
পঞ্চায়েতের বড়জন বললেন,
“আমাদের এই গ্রাম শত বছর ধরে নিয়ম মানে। আমরা কেউ চাই না, এই নিয়ম ভাঙা হোক। তোমাদের ছেলে-মেয়েরা যা করছে, সেটা গ্রামে নজিরবিহীন। আমরা এর সুরাহা চাই।”
রোদ্দুর সোজাসুজি উঠে দাঁড়াল।
“আপনারা বলেন, এটা নিয়ম ভাঙা। কিন্তু নিয়ম কি বদলায় না? ভালোবাসা কি নিয়মের চেয়ে ছোট?”
গ্রামের লোকজন গুঞ্জন শুরু করল। পঞ্চায়েত প্রধান গম্ভীর মুখে বললেন,
“তোমাদের এই প্রশ্নের উত্তর আমরা সবাই মিলে দেব। কিন্তু তার আগে তোমাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই সম্পর্ক কি তোমরা সত্যিই টিকিয়ে রাখতে চাও?”
---
পর্ব ৮ শেষ
পরবর্তী পর্বে দেখা যাবে, পঞ্চায়েতের সিদ্ধান্ত কী হতে যাচ্ছে এবং এই সিদ্ধান্ত রোদ্দুর আর মেঘমালার জীবনে কী পরিবর্তন আনবে। সমাজের সঙ্গে তাদের লড়াই কি কোনো দিক নির্দেশনা পাবে, নাকি তারা আরও কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হবে?