Posts

উপন্যাস

মেঘমালা এবং রোদ্দুর পর্ব ৯

January 17, 2025

Mahi 599

2
View

শিরোনাম: মেঘমালা আর রোদ্দুর
পর্ব ৯: পারিপার্শ্বিকতার ঘূর্ণিপাক

মেঘমালা ও রোদ্দুরের জীবনের কেন্দ্রবিন্দুতে ভালোবাসা থাকলেও, তাদের চারপাশের ঘটনাগুলো যেন এই সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলছিল। পরিবার, সমাজ এবং এমনকি প্রাকৃতিক দুর্যোগও তাদের জীবনে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছিল।


---

চলমান খরা এবং গ্রামের সংকট

সেই বছর গ্রামে বৃষ্টি প্রায় হয়নি বললেই চলে। জমিগুলো শুকিয়ে কাঠ, গ্রামের কৃষকেরা দিশেহারা। পুকুর আর জলাশয়গুলোও শুকিয়ে যেতে শুরু করেছে।
পঞ্চায়েত প্রধান একদিন ঘোষণা করলেন,
“এই খরা থেকে বাঁচার জন্য আমাদের সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে। গ্রামবাসী মিলে বাঁধ তৈরি করলে হয়তো কিছুটা পানি ধরে রাখা যাবে।”

গ্রামের সবাই এই কাজ শুরু করল। মেঘমালা ও রোদ্দুরও নিজেদের পরিবার নিয়ে এই কাজে যোগ দিল। কিন্তু কাজের ফাঁকেও তারা পরস্পরের দিকে তাকিয়ে নিজেদের ভালোবাসার শক্তি খুঁজে নিত।

একদিন কাজ করার সময় রিমি, মেঘমালার বান্ধবী, তার কাছে এসে বলল,
“দেখ, আমাদের চারপাশে এত সমস্যা চলছে—খরা, অভাব, ক্ষুধা। অথচ গ্রামবাসী সব ছেড়ে তোমাদের নিয়ে ব্যস্ত। এটা কতটা যুক্তিসঙ্গত?”

মেঘমালা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“তুই ঠিক বলেছিস। কিন্তু মানুষ তো অন্যের জীবনে নাক গলাতেই বেশি পছন্দ করে। আমরা যদি নিজেদের ভালোবাসার পথে এগোতে চাই, তাহলে এই সব বাধা অতিক্রম করতেই হবে।”


---

পাশের গ্রামের বিয়ে এবং তুলনা

এদিকে পাশের গ্রামে এক ধনী পরিবারের ছেলের বিয়ে হচ্ছিল। বিয়ে উপলক্ষে পুরো গ্রামে উৎসবের আমেজ। মেঘমালার ছোট বোন পূর্ণিমা সেই বিয়েতে গিয়েছিল। ফিরে এসে সে বলল,
“আপু, তোর আর রোদ্দুরের ব্যাপার নিয়ে এত কথা ওঠে। কিন্তু ওরা তো নিজেদের কাজিনের সঙ্গেই বিয়ে করছে। তাহলে আমাদের গ্রামে এত বাধা কেন?”

মেঘমালা মৃদু হেসে বলল,
“পূর্ণিমা, ধনী হলে সমাজ অনেক কিছু মেনে নেয়। আর আমরা সাধারণ মানুষ। আমাদের লড়াইটা অন্যরকম।”


---

বাজারে কানাঘুষা এবং রোদ্দুরের প্রতিবাদ

গ্রামের হাটবারে রোদ্দুর যখন বাজারে গিয়েছিল, তখন কয়েকজন লোক তাকে নিয়ে কানাঘুষা করছিল।
“ছেলেটা কী সাহস! নিজের কাজিনের সঙ্গে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখছে। গ্রামে কোনো নিয়ম-কানুন আছে বলে মনে করে না।”

রোদ্দুর তাদের কথাগুলো শুনতে পেল। সে আর চুপ থাকতে পারল না। সরাসরি গিয়ে বলল,
“আপনারা যেটা বলছেন, সেটা কি সঠিক? আমি কারো ক্ষতি করছি না। শুধু ভালোবাসছি। আপনাদের কীভাবে এটা সমস্যা?”

এক বৃদ্ধ বললেন,
“তুমি যদি সমাজের নিয়ম ভাঙো, তাহলে সেটা সবাইকেই প্রভাবিত করে। ভালোবাসা ব্যক্তিগত হতে পারে না, কারণ সমাজেও তার প্রভাব পড়ে।”

রোদ্দুর চুপ করে রইল। এই কথাগুলো তাকে ভাবিয়ে তুলল।


---

মেঘমালার বাবার দ্বন্দ্ব

মেঘমালার বাবা প্রতিদিন নিজের মনকে বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন। তিনি একদিন তার স্ত্রীকে বললেন,
“আমি জানি, মেঘমালার ভুল নেই। কিন্তু এই সমাজ আমাদের এতদিনের পরিচিতি নষ্ট করে দেবে। আমি কি তাদের কথা মেনে নেব, নাকি মেয়ের পাশে দাঁড়াব?”

তার স্ত্রী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
“তুমি যদি সমাজের কথা শোনো, তাহলে মেঘমালার সুখ নষ্ট হবে। আর যদি মেয়ের পাশে দাঁড়াও, তাহলে সমাজ আমাদের ত্যাগ করবে। যে পথই বাছো, সেটা কঠিন।”


---

রাতে পঞ্চায়েতের চাপ

একদিন রাতে পঞ্চায়েত আবার মেঘমালার বাবাকে ডেকে পাঠাল।
“তোমার মেয়েকে বোঝাও। নইলে আমরা কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হব।”

মেঘমালার বাবা বললেন,
“আপনারা কী করতে চান?”

পঞ্চায়েত প্রধান কঠোরভাবে বললেন,
“তোমার মেয়েকে বা ছেলেটিকে গ্রাম ছাড়তে হবে। এটাই আমাদের সিদ্ধান্ত।”


---

একটি নির্জন সন্ধ্যা

সেই সন্ধ্যায় রোদ্দুর আর মেঘমালা আবার দেখা করল। পুকুরপাড়ে বসে তারা চারপাশের অন্ধকার দেখছিল।
“তোর বাবা আমাকে গ্রাম ছাড়তে বলছে,” রোদ্দুর বলল।
মেঘমালা চোখের জল লুকাতে চাইল। কিন্তু পারল না।
“তুই কি আমাকে ছেড়ে চলে যাবি?”

রোদ্দুর গভীরভাবে তাকিয়ে বলল,
“আমি তোর পাশে থাকব। তুই যদি বলিস, আমরা গ্রাম ছেড়ে চলে যাব। কিন্তু তুই কি সেটা পারবি?”

মেঘমালা নিরুত্তর। তার মনে চলছিল নানা চিন্তা। তাদের সম্পর্ক কি এইসব বাধা অতিক্রম করতে পারবে?


---

পর্ব ৯ শেষ

পরবর্তী পর্বে দেখা যাবে, রোদ্দুর ও মেঘমালা কি গ্রাম ছাড়ার সাহস করবে, নাকি তারা নতুন কোনো পরিকল্পনা করবে? একইসঙ্গে খরা ও গ্রামের সংকট কীভাবে তাদের জীবনের প্রেক্ষাপট বদলে দেবে, তা নিয়েও গল্প এগোবে।

Comments

    Please login to post comment. Login