শিরোনাম: মেঘমালা আর রোদ্দুর
পর্ব ১০: পরিবর্তনের সূচনা
পঞ্চায়েতের কঠিন সিদ্ধান্তের পর পুরো গ্রামে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ল। একদিকে মেঘমালা ও রোদ্দুরের পরিবার, অন্যদিকে পুরো গ্রাম। কিন্তু এরই মধ্যে মেঘমালা ও রোদ্দুর নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
---
খরার মধ্যে সহমর্মিতা
গ্রামে খরার তীব্রতা দিন দিন বেড়েই চলছিল। পানির অভাবে ফসল শুকিয়ে গিয়েছিল, আর গবাদি পশুদের খাবার জোগানোও কঠিন হয়ে পড়েছিল।
এই অবস্থায় গ্রামের কিছু তরুণ মিলে সাহায্যের উদ্যোগ নিল। রোদ্দুর এই দলটিতে যোগ দিল এবং দিন-রাত কাজ করতে লাগল।
মেঘমালাও রোদ্দুরের এই কাজ দেখে অনুপ্রাণিত হলো। সে গ্রামের মহিলাদের সঙ্গে মিলে শুকনো জমিতে কিছু নতুন ধরনের শাকসবজি চাষের উদ্যোগ নিল।
একদিন কাজের ফাঁকে রিমি মেঘমালাকে বলল,
“তোর ভালোবাসা নিয়ে মানুষ যতই কথা বলুক, তোর কাজ দেখে সবার মন ধীরে ধীরে বদলাবে। তুই লড়াই চালিয়ে যা।”
---
একটি আকস্মিক দুর্ঘটনা
একদিন রাতে, গ্রামে আগুন লেগে যায়। পাশের বাড়ির এক কৃষকের গোলাঘরে আগুন ধরে যায়, আর সেখান থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশে।
রোদ্দুর এবং তার বন্ধুরা দ্রুত সেখানে পৌঁছায়। রোদ্দুর প্রাণপণ চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে।
এদিকে মেঘমালাও মহিলাদের নিয়ে পানির বালতি হাতে ছুটে আসে। তারা সবাই মিলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করতে থাকে।
সেই রাতে পুরো গ্রাম যেন এক হয়ে কাজ করল। আগুন নেভানোর পর, গ্রামের এক বয়স্ক লোক বলল,
“আজ যদি রোদ্দুর আর তার দল না থাকত, তবে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে যেত। ওদের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।”
গ্রামের মানুষের মধ্যে এই ঘটনা কিছুটা হলেও মেঘমালা আর রোদ্দুরের প্রতি মনোভাব বদলাতে শুরু করল।
---
পঞ্চায়েতের পুনর্মূল্যায়ন
এই ঘটনার পর পঞ্চায়েত আবার বসলো। পঞ্চায়েতের প্রধান বললেন,
“রোদ্দুর এবং মেঘমালা আমাদের জন্য যা করেছে, সেটা অস্বীকার করার মতো নয়। কিন্তু তাদের সম্পর্ক নিয়ে আমাদের অবস্থান এখনও বদলায়নি। আমরা চাই, তারা নিজেরা এই বিষয়টি সমাধান করুক।”
রোদ্দুর পঞ্চায়েতের সামনে গিয়ে দাঁড়াল।
“আপনারা আমাদের যা সিদ্ধান্ত নিতে বলছেন, তা খুব কঠিন। কিন্তু আমি চাই, আপনারা আমাদের ভালোবাসাকে অপরাধ হিসেবে না দেখে একবার আমাদের মতো করে ভাবুন। আমরা তো শুধু নিজেদের সুখ চাইছি, অন্য কারো ক্ষতি করছি না।”
---
গ্রামের নতুন উদ্যোগ
খরার সঙ্গে লড়াই করার জন্য রোদ্দুর গ্রামে একটি বড়ো পানির কুয়া খননের উদ্যোগ নেয়। গ্রামের তরুণ-তরুণীরা এতে যোগ দেয়। মেঘমালাও মহিলাদের নিয়ে এই কাজে যুক্ত হয়।
এই কাজের মধ্য দিয়ে গ্রামবাসী ধীরে ধীরে তাদের গুরুত্ব বুঝতে শুরু করে।
---
সম্পর্কের নতুন পরীক্ষা
কিন্তু তাদের সম্পর্কের পরীক্ষা তখনও শেষ হয়নি। পাশের গ্রামের কিছু লোক এসে পঞ্চায়েতের কাছে অভিযোগ করল,
“তাদের সম্পর্ক এখনও নিয়মের বাইরে। এভাবে চলতে থাকলে অন্য গ্রামগুলোও এদের নিয়ে কথা বলবে।”
পঞ্চায়েতের প্রধান বললেন,
“আমরা চেষ্টা করছি বিষয়টা মীমাংসা করতে। তোমরা এখন অন্য গ্রামে গিয়ে এই নিয়ে কথা বলবে না। আমাদের সময় দাও।”
---
একান্ত পরিকল্পনা
রাতে মেঘমালা ও রোদ্দুর আবার দেখা করল। মেঘমালা বলল,
“আমরা যাই করি না কেন, লোকে আমাদের নিয়ে কথা বলবেই। তুই কি মনে করিস, আমরা গ্রাম ছেড়ে চলে গেলে সব সমস্যার সমাধান হবে?”
রোদ্দুর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“সমস্যা তো আমাদের সঙ্গেই থাকবে। তবে আমি চাই, আমরা সবাইকে প্রমাণ করি যে ভালোবাসা সমাজের নিয়মের চেয়ে বড়। তুই কি আমার পাশে আছিস?”
মেঘমালা তার হাত ধরে বলল,
“তুই যতক্ষণ আমার পাশে আছিস, আমি সবকিছু মোকাবিলা করতে পারব।”
---
পর্ব ১০ শেষ
পরবর্তী পর্বে দেখা যাবে, গ্রামে মেঘমালা ও রোদ্দুরের কাজ তাদের সম্পর্কের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে পারে কি না। পাশাপাশি, পাশের গ্রামের চাপ এবং তাদের নিজস্ব ভালোবাসার সংগ্রাম কি নতুন কোনো মোড় নেবে?