Posts

উপন্যাস

মেঘমালা এবং রোদ্দুর পর্ব ১১

January 17, 2025

Mahi 599

4
View

শিরোনাম: মেঘমালা আর রোদ্দুর
পর্ব ১১: সম্পর্কের চেয়েও বড় লড়াই

রোদ্দুর ও মেঘমালার জীবনের গল্প যেন ধীরে ধীরে আরও গভীর জটিলতায় পূর্ণ হয়ে উঠছিল। একদিকে তাদের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার লড়াই, অন্যদিকে গ্রামের সংকট আর পারিপার্শ্বিকতার চাপে তারা বুঝতে শুরু করল, এই লড়াই কেবল তাদের ব্যক্তিগত নয়—এটা এমন কিছু যা অনেকের জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে।


---

গ্রামের নতুন সংকট

সেই বছর খরা, অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠার পর গ্রামে আরেকটি নতুন সমস্যা দেখা দিল। পাশের গ্রামের কিছু লোক সীমান্ত নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি করল।
“তোমাদের গ্রাম আমাদের জমিতে চাষ করছে,” তারা অভিযোগ করল।

পঞ্চায়েত বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করছিল, কিন্তু দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছিল। রোদ্দুর এগিয়ে এসে বলল,
“আমরা একে অপরের শত্রু নই। এমন সময়ে লড়াই করলে উভয়েরই ক্ষতি হবে। বরং আমরা যদি একসঙ্গে কাজ করি, তাহলে এই দুর্যোগ কাটানো সম্ভব।”

পাশের গ্রামের একজন কড়া গলায় বলল,
“তুমি আমাদের শেখাতে এসেছ? তুমি তো নিজেই সমাজের নিয়ম মানো না। তোমার কথা আমরা কেন শুনব?”

রোদ্দুর শান্ত গলায় উত্তর দিল,
“আপনারা যদি আমাকে একপাশে রেখে পুরো গ্রামের ভালো ভাবতে পারেন, তবে আমি নিজেই সরে যাব। কিন্তু এই মুহূর্তে লড়াই করলে ক্ষুধার্ত মানুষ আরও বিপদে পড়বে।”

রোদ্দুরের শান্ত স্বভাব আর তর্ক করার ক্ষমতা দেখে কিছু লোক চুপ হয়ে গেল। তবে সমস্যা পুরোপুরি মিটল না।


---

মেঘমালার অন্যরকম ভূমিকা

এদিকে মেঘমালা গ্রামের মহিলাদের নিয়ে একটি ছোট সমিতি গঠন করল। তাদের লক্ষ্য ছিল গ্রামীণ উন্নয়ন এবং দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য ছোট ছোট প্রকল্প শুরু করা।
“আমরা যদি নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারি, তাহলে কোনো পঞ্চায়েত আমাদের জোর করতে পারবে না,” মেঘমালা বলল।

মেঘমালার নেতৃত্বে মহিলারা নিজেদের কাজে দক্ষ হয়ে উঠল। তারা হাতে তৈরি সামগ্রী বাজারে বিক্রি করতে শুরু করল, আর সেই টাকা দিয়ে গ্রামের ছোট ছোট সমস্যার সমাধান করা শুরু করল।


---

পরিবারের অস্থিরতা

মেঘমালার বাবা ধীরে ধীরে মানতে শুরু করেছিলেন যে মেয়ের আত্মবিশ্বাস আর উদ্যোগ তাকে নতুনভাবে ভাবতে শিখিয়েছে। কিন্তু তার মনের দ্বন্দ্ব তখনও কাটেনি।
একদিন তিনি মেঘমালাকে ডেকে বললেন,
“তোর মা আর আমি তোকে কখনো এই পরিস্থিতির মুখোমুখি দেখতে চাইনি। কিন্তু তুই যা করছিস, তাতে আমি গর্বিত। শুধু একটাই কথা বলি—তুই যদি রোদ্দুরের সঙ্গে জীবন কাটাতে চাস, তবে নিজেকে এমনভাবে গড়ে তুলিস যেন তোরা দুজন কারও মুখাপেক্ষী না থাকিস।”

মেঘমালা বাবার চোখে জল দেখে নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। সে বলল,
“আপনাদের আশীর্বাদ পেলে আমরা সব পারব, বাবা। রোদ্দুর আমার পাশে আছে, আর আমি ওর পাশে আছি।”


---

একটি শোকাবহ ঘটনা

তাদের জীবনে যখন সবকিছু সামলে ওঠার চেষ্টা চলছিল, তখন হঠাৎ করে একটি বড় দুর্ঘটনা ঘটে। রোদ্দুরের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু, শফিক, যিনি সবসময় রোদ্দুরের পাশে থেকে তাকে সমর্থন করতেন, একদিন গভীর রাতে নদীতে ডুবে যান।

শফিকের এই দুর্ঘটনা পুরো গ্রামে শোকের ছায়া ফেলে। রোদ্দুর নিজে শফিককে খুঁজতে গিয়ে নদীর তীরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেঁদে কাটায়। মেঘমালা তাকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে নিজেও চোখের জল ধরে রাখতে পারেনি।
“তুই শক্ত থাক, রোদ্দুর। শফিক তোকে এমনভাবে ভেঙে পড়তে দেখতে চাইত না,” মেঘমালা বলল।

রোদ্দুর বলল,
“শফিক সবসময় বলত, সমাজ যাই বলুক, তুই আর আমি যেন নিজেদের ভালোবাসা ধরে রাখি। আজ তার কথাগুলো আমাকে আরও শক্ত হতে শেখাচ্ছে।”


---

গ্রামে একটি নতুন আলো

মেঘমালা ও রোদ্দুর নিজেদের ভালোবাসা আর কাজের মধ্য দিয়ে গ্রামবাসীর মনোভাব পরিবর্তন করতে শুরু করল। রোদ্দুরের নেতৃত্বে গ্রামে একটি নতুন কুয়া খনন করা হলো, যা গ্রামের পানির চাহিদা মেটাতে সাহায্য করল। মেঘমালার নেতৃত্বে মহিলাদের কাজ গ্রামে নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনা নিয়ে এল।

পঞ্চায়েত একদিন তাদের কাছে এসে বলল,
“তোমরা যা করছো, তা গ্রামবাসীর উপকারে লাগছে। আমরা হয়তো তোমাদের সম্পর্ককে পুরোপুরি মেনে নিতে পারিনি, কিন্তু তোমাদের কাজকে আমরা অস্বীকার করতে পারি না।”


---

শেষে এক কঠিন সিদ্ধান্ত

একদিন রাতে, রোদ্দুর মেঘমালাকে ডেকে বলল,
“গ্রামবাসী হয়তো ধীরে ধীরে আমাদের মানতে শুরু করেছে। কিন্তু তুই কি মনে করিস, আমরা এভাবে সবার সামনে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে পারব?”

মেঘমালা গভীরভাবে বলল,
“আমি জানি না। কিন্তু আমি এটুকু জানি, আমরা যদি সত্যি ভালোবাসি, তাহলে কোনো বাধাই আমাদের আলাদা করতে পারবে না। ভালোবাসা শুধু দুজনের বিষয় নয়, এটা পুরো সমাজ বদলানোর ক্ষমতা রাখে।”

রোদ্দুর মেঘমালার হাত ধরে বলল,
“তাহলে আমরা লড়াই চালিয়ে যাব। যতদিন পর্যন্ত না সবাই আমাদের মানতে বাধ্য হয়।”


---

পর্ব ১১ শেষ

পরবর্তী পর্বে দেখা যাবে, রোদ্দুর ও মেঘমালার সম্পর্ক নিয়ে গ্রামবাসীর চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়া কী হয় এবং তাদের উদ্যোগ কেবল নিজেদের নয়, গোটা সমাজকেই কীভাবে বদলাতে শুরু করে।

Comments

    Please login to post comment. Login