Posts

উপন্যাস

মেঘমালা এবং রোদ্দুর পর্ব ১২

January 17, 2025

Mahi 599

8
View

শিরোনাম: মেঘমালা আর রোদ্দুর
পর্ব ১২: সমাজের স্বীকৃতি

রোদ্দুর আর মেঘমালা বুঝতে পারছিল, তাদের ভালোবাসার লড়াই ধীরে ধীরে কেবল তাদের ব্যক্তিগত বিষয় নয়, পুরো গ্রামের জন্য একটি পরিবর্তনের প্রতীক হয়ে উঠেছে। তাদের কাজ আর সিদ্ধান্তগুলো মানুষকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। কিন্তু সেই স্বীকৃতির পথে এখনো কিছু চূড়ান্ত পরীক্ষার অপেক্ষা ছিল।


---

গ্রামে একটি বড় উৎসব

গ্রামে একটি বার্ষিক মেলা বসার আয়োজন করা হলো। এটি গ্রামের সবচেয়ে বড় সামাজিক উৎসব, যেখানে সব বয়সের মানুষ যোগ দেয়।
রোদ্দুর ও মেঘমালা সিদ্ধান্ত নিল, এই মেলায় তারা তাদের কাজ আর স্বপ্ন সবার সামনে তুলে ধরবে।

মেলার প্রস্তুতির সময়, রোদ্দুর গ্রামের তরুণদের নিয়ে একটি নাটকের আয়োজন করল। নাটকের গল্প ছিল সমাজে অন্যায় নিয়ম আর ভালোবাসার শক্তি নিয়ে।
মেঘমালা মহিলাদের সঙ্গে মিলে মেলায় একটি স্টল দিল, যেখানে তাদের তৈরি সামগ্রী বিক্রি হবে।

মেলা শুরু হলো। নাটকটি মঞ্চস্থ হওয়ার পর সবার মন কাড়ল। গল্পের শেষে রোদ্দুর সবার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
“আমাদের সমাজে অনেক নিয়ম আছে, যা মানুষের ভালোবাসা আর জীবনের আনন্দকে দমন করে। কিন্তু আমরা যদি সাহস করে এগিয়ে যাই, তবে এই সমাজকেও বদলানো সম্ভব। আমরা সেটা প্রমাণ করতে চাইছি।”


---

পঞ্চায়েতের প্রতিক্রিয়া

মেলার পরদিন পঞ্চায়েত একটি বৈঠক ডাকে। গ্রামবাসীও এতে উপস্থিত ছিল।
পঞ্চায়েতের প্রধান বললেন,
“রোদ্দুর আর মেঘমালার কাজ আমরা সবাই দেখেছি। তারা শুধু নিজেদের জন্য নয়, পুরো গ্রামের জন্য কাজ করছে। কিন্তু তাদের সম্পর্ক এখনো সমাজের নিয়মের বাইরে। আমরা কি তাদের মেনে নেব?”

গ্রামের এক বয়স্ক ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“আমি প্রথমে ওদের বিরুদ্ধে ছিলাম। কিন্তু এখন দেখি, ওরা গ্রামকে ভালো কিছু দিতে চাইছে। আমি মনে করি, ওদের ভালোবাসাকে সম্মান দেওয়া উচিত।”

কেউ কেউ আপত্তি করল,
“এটা যদি মেনে নিই, তাহলে অন্যরাও এই নিয়ম ভাঙার চেষ্টা করবে। সমাজে বিশৃঙ্খলা হবে।”


---

রোদ্দুরের বক্তব্য

রোদ্দুর উঠে দাঁড়াল।
“আমি বুঝি, সমাজের নিয়ম সবার জন্য। কিন্তু সেই নিয়ম যদি কারো জীবনকে নষ্ট করে, তবে তা বদলানো উচিত। আমরা কারো ক্ষতি করতে চাই না, শুধু নিজেদের ভালোবাসাকে সম্মান দিতে চাই। আমরা কি এতটুকু অধিকার পাই না?”

তার কথাগুলো অনেকের মন স্পর্শ করল।


---

মেঘমালার মা-বাবার মন পরিবর্তন

বৈঠকের পর মেঘমালার বাবা-মা নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলেন।
তার মা বললেন,
“ওরা নিজেরা সুখী হতে চায়। আমাদের কি উচিত হবে না ওদের পাশে দাঁড়ানো?”

তার বাবা দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্বের পর বললেন,
“সমাজের কথা ভেবে আমি ওদের বিরুদ্ধে ছিলাম। কিন্তু এখন বুঝি, ওরা যা করছে, তা শুধু নিজেদের জন্য নয়। আমার মেয়ে এমন কিছু করছে, যা অনেকের জীবন বদলাতে পারে। আমি ওদের পাশে দাঁড়াব।”


---

পঞ্চায়েতের সিদ্ধান্ত

পঞ্চায়েত পরদিন চূড়ান্ত বৈঠক ডাকে।
প্রধান বললেন,
“আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, মেঘমালা আর রোদ্দুরের সম্পর্ককে মেনে নেব। তবে তাদের কিছু শর্ত মানতে হবে। তারা যদি গ্রামকে উন্নতির পথে নিয়ে যেতে পারে, তবে তাদের সিদ্ধান্তকে আমরা সম্মান করব।”

গ্রামের মানুষ করতালি দিয়ে এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাল।


---

গ্রামের পরিবর্তন শুরু

পঞ্চায়েতের এই সিদ্ধান্ত গ্রামে নতুন আলো এনে দিল। মেঘমালা আর রোদ্দুরকে দেখে অনেক তরুণ-তরুণী নিজেদের জীবনে নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করল।
মেঘমালার উদ্যোগে গ্রামের মহিলারা আরও শক্তিশালী হলো। তারা নতুন নতুন প্রকল্প শুরু করল। রোদ্দুর তার দলের সঙ্গে আরও বড় কাজের পরিকল্পনা করল।


---

একান্ত মুহূর্ত

রাতে মেঘমালা আর রোদ্দুর পুকুরপাড়ে বসে ছিল। চাঁদের আলোয় তাদের মুখ এক অপূর্ব শান্তিতে ভরে উঠেছিল।
মেঘমালা বলল,
“আমাদের লড়াই শেষ হলো কি?”

রোদ্দুর হাসল।
“লড়াই তো জীবনের অংশ। কিন্তু আজ আমাদের জন্য একটা বড় জয় হলো। আমরা দেখিয়েছি, ভালোবাসা শুধু দুজনের বিষয় নয়, এটা সমাজ বদলানোর শক্তি। এখন শুধু সামনে এগিয়ে যেতে হবে।”

মেঘমালা তার কাঁধে মাথা রেখে বলল,
“তুই পাশে থাকলেই আমি সব পারব।”


---

পর্ব ১২ শেষ

পরবর্তী পর্বে দেখা যাবে, পঞ্চায়েতের শর্ত পূরণ করতে গিয়ে রোদ্দুর ও মেঘমালাকে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। তাদের নতুন জীবনের গল্পে আর কী কী বাঁধা আসে?

Comments

    Please login to post comment. Login