Posts

উপন্যাস

মেঘমালা এবং রোদ্দুর পর্ব ১৮

January 17, 2025

Mahi 599

3
View


---


---

শিরোনাম: মেঘমালা এবং রোদ্দুর
পর্ব ১৮: নিষিদ্ধ প্রলোভন

গোলাপি আকাশে সূর্য অস্ত যাওয়ার পর, গ্রামের বুকে গভীর নীরবতা নেমে এসেছিল। একটুকু হাওয়া, পাখিদের চুপ থাকা, পুরো পরিবেশ যেন অস্বাভাবিকভাবে শান্ত ছিল। এমন সময়, রোদ্দুর আর মেঘমালা তাদের ভেতরের শূন্যতা মেটানোর জন্য একে অপরের কাছে ছুটে গিয়েছিল। তাদের মধ্যে যে অদৃশ্য টান ছিল, সেটি ধীরে ধীরে এক নিষিদ্ধ প্রলোভনে পরিণত হচ্ছিল।

গ্রামের নদীটি সেদিন কিছুটা বেশি শান্ত ছিল। তার সোঁদা গন্ধ বাতাসে মিশে ছিল, আর নদীর স্রোত কেমন যেন বিক্ষিপ্ত, অব্যক্ত ক্ষোভের মতো শোনাচ্ছিল। মেঘমালা নদীর কাছে দাঁড়িয়ে রোদ্দুরের দিকে তাকাচ্ছিল। নদী যেন তার ভেতরের অন্ধকার অনুভূতিকে পুরোপুরি উপলব্ধি করেছিল। রোদ্দুর ধীরে ধীরে মেঘমালার কাছে পৌঁছাল, তার শরীরের কাছে গিয়ে বলল, "তুই জানিস, মেঘমালা, এই নদীও তোর মতো শান্ত। কিন্তু ভেতরে একটা স্রোত লুকিয়ে থাকে, যা কখনো শান্ত থাকে না।"

মেঘমালা নিঃশব্দে তাকিয়ে ছিল, তার চোখে এক অদ্ভুত বিষণ্ণতা ছিল। "তুই বলছিস, রোদ্দুর, আমাদের সম্পর্কও কি এমন? আমরা শান্ত, কিন্তু ভেতরে যে জ্বালা, তা কেউ জানে না।"

রোদ্দুর তার হাতে মেঘমালার হাত ধরল, আর তার চোখে চোখ রেখে বলল, "হ্যাঁ, এটা ঠিক। তোর সাথে থাকলে, আমার ভেতরে যেন একটা অগ্নিকুণ্ড জ্বলে ওঠে, কিন্তু তুই জানিস, এই অগ্নি আমার জন্য বিপদ। তবুও আমি জানি, তুই ছাড়া আমার কিছুই থাকবে না।"

মেঘমালা গাঢ়ভাবে তার দিকে তাকিয়ে বলল, "তুই আমার ভেতরে একধরনের অন্ধকার সৃষ্টি করেছিস, রোদ্দুর, যা আমি আর মুছতে পারি না। কিন্তু তবুও, তোর কাছে ফিরে যেতে চাই।"

তাদের কথাগুলো যেন বাতাসে মিলিয়ে যাচ্ছিল। সেই নিস্তব্ধ পরিবেশে, চারপাশের দৃশ্য যেন থমকে গিয়েছিল। গ্রামের বাড়িগুলোর জানালা দিয়ে কিছু মুখ উঁকি দিচ্ছিল, যেন তারা বুঝতে পারছিল না এই গভীর সম্পর্কের ভিতরে কি চলছে। চন্দ্রালোক নদীর পানিতে প্রতিফলিত হচ্ছিল, আর মেঘমালা ও রোদ্দুরের মধ্যে সেই আলো ছিল—অন্ধকার ও আলোর এক মিশ্রণ।

রোদ্দুর ধীরে ধীরে মেঘমালার কপালে চুমু রেখে বলল, "আমরা যদি একে অপরকে না পাই, তবে আমরা নিঃশেষ হয়ে যাব।"

মেঘমালা তার ঠোঁটের কোণে এক মৃদু হাসি এনে বলল, "এটাই আমাদের ভাগ্য, রোদ্দুর। একে অপরকে চেয়েছি, কিন্তু জানি, এই সম্পর্ক একদিন আমাদের শেষ করে দিতে পারে। তবুও, আমরা ছাড়তে পারব না।"

তাদের শরীর একে অপরের মধ্যে ঢুকছিল, যেন তাদের একে অপরের অভ্যন্তরীণ অন্ধকার এবং উত্তেজনা এক হয়ে যাচ্ছিল। চারপাশের গ্রামের কোনো শব্দ যেন তাদের পৌঁছানোর আগেই থেমে গিয়েছিল, এক ধরনের সুনামি তাদের ভেতরে একে অপরকে ছুঁয়ে যাচ্ছিল। নদীর জল, বাতাস, গ্রাম—সবকিছু যেন মিলেমিশে এক প্রলোভনে পরিণত হয়েছিল।

এভাবেই, তারা একে অপরকে অনুভব করছিল, জানত, তাদের সম্পর্ক এক অন্ধকার পথে এগিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তবুও, তা থেকে বেরিয়ে আসার কোনো উপায় ছিল না। যেন তারা দুজনেই জানত, এই পথ শেষ হবে, কিন্তু তবুও, তারা একে অপরকে ছাড়তে পারবে না।


---

Comments

    Please login to post comment. Login