Posts

উপন্যাস

মেঘমালা এবং রোদ্দুর পর্ব ১৯

January 17, 2025

Mahi 599

3
View


---

শিরোনাম: মেঘমালা এবং রোদ্দুর
পর্ব ১৯: শিক্ষার নতুন সূর্য

গ্রামের জীবন কখনোই সহজ ছিল না। প্রতিদিনের রুটিন, ক্ষেতমজুরদের পরিশ্রম, আর শিশুদের খেলাধুলার মাঝে একটি অব্যক্ত শূন্যতা বিরাজ করছিল। তবে এখন, সবকিছু যেন বদলাতে চলেছে। একে অপরের প্রতি মেঘমালা এবং রোদ্দুরের অনুভূতি যেমন গভীর হচ্ছিল, তেমনি তাদের একসাথে কাজ করার উদ্দেশ্যও আরও স্পষ্ট হচ্ছিল। আজ সকালে, তারা এক নতুন লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল, যা শুধু তাদের নয়, পুরো গ্রামের জীবনকেও পরিবর্তন করবে—গ্রামের স্কুলের উন্নতি।

স্কুলটি ছিল একটা পুরনো কাঠামো, যেটির টিনের ছাদ জুড়ে ছিল অসংখ্য ফুটো, আর দেয়ালগুলোও খসে পড়ছিল। জানালাগুলো ছিল ভাঙা এবং অনেক ছাত্র-ছাত্রীকে একই বইয়ের পাতা দিয়ে পড়াশোনা করতে হত। মেঘমালা আর রোদ্দুর জানত, এই স্কুলের বর্তমান অবস্থায় ছাত্রদের মধ্যে যে আগ্রহ থাকার কথা, তা কখনোই অর্জিত হতে পারে না। কিন্তু তারা জানত, এই অবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন এবং তারাই সেই পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে।

"তুমি জানিস, রোদ্দুর," মেঘমালা বলল, একদিন স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে, "যতদিন আমাদের স্কুলে কিছু উন্নতি না হবে, ততদিন আমরা এই গ্রামের ভবিষ্যতকে সঠিক পথে নিয়ে যেতে পারব না। শিক্ষার ওপর ভিত্তি করেই আমরা এক নতুন দিগন্ত খুলতে পারি।"

রোদ্দুর মেঘমালার দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। তারপর বলল, "ঠিক বলেছিস, মেঘমালা। আমাদের এই সম্পর্কের মতো, যেখানে আমরা একে অপরকে বুঝি এবং বিশ্বাস করি, ঠিক তেমনি স্কুলের প্রতি আমাদের আস্থা রাখতে হবে। শুধুমাত্র ভালোবাসা দিয়ে কিছু হবে না—আমাদের কঠোর পরিশ্রম ও মনোযোগও দরকার।"

তারা দুজনেই একে অপরের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ থেমে ছিল, যেন একে অপরকে অনুপ্রাণিত করছে। তারপর তারা গ্রামবাসীদের সঙ্গে একযোগে কাজ শুরু করল। স্থানীয় কৃষকরা তাদের ফসলের লাভ থেকে কিছুটা চাঁদা দিয়েছিল, এবং গ্রামের অন্যান্য মানুষ যারা সম্ভবত অর্থনৈতিক কারণে স্কুলের উন্নতির জন্য সরাসরি সাহায্য করতে পারত না, তারা তাদের পরিশ্রমের মাধ্যমে সহায়তা করতে এগিয়ে আসল।

গ্রামের প্রতিটি ঘর, প্রতিটি উঠান যেন এক নতুন উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করতে শুরু করেছিল। পুরনো স্কুলের প্রাচীর ভাঙা হচ্ছিল, আর মেঘমালা আর রোদ্দুর নিজেদের হাতে প্রথমে ছোট ছোট কাজ শুরু করেছিল। কিছু জানালা মেরামত করা, কিছু দেয়াল চুনকাম করা, আর স্কুলের পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা ছিল তাদের প্রথম কাজ। গ্রামের সবার প্রচেষ্টায়, কিছুদিনের মধ্যে স্কুলের পরিবেশ বেশ খানিকটা উন্নতি লাভ করেছিল। তবে তারা জানত, এটি শুধু একটি শুরু, শেষ নয়।

তাদের পরিকল্পনা ছিল আরো বড়—নতুন বই সংগ্রহ করা, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য নতুন শ্রেণিকক্ষে ব্যবস্থার উন্নতি করা, এবং শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। শহরের কাছাকাছি কয়েকটি অঞ্চলের স্কুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল, যাতে আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতি ও নতুন পাঠ্যক্রম গ্রহণ করা যায়।

"আমরা যদি একে অপরকে সত্যিই সহায়তা করি, তাহলে একদিন এই স্কুল হবে পুরো অঞ্চলের মধ্যে সেরা," রোদ্দুর বলল, আর মেঘমালা তার পাশে দাঁড়িয়ে বলল, "এটা শুধু স্কুলের উন্নতি নয়, এটি আমাদের সমাজেরও উন্নতি। আমরা যদি এই স্কুলটিকে ভালোভাবে তৈরি করতে পারি, তাহলে পুরো গ্রামের শিশুদের ভবিষ্যত সুন্দর হবে।"

গ্রামবাসীরা তাদের দিকে এক নতুন দৃষ্টিতে তাকাতে শুরু করল। তারা বুঝতে পারল, মেঘমালা আর রোদ্দুর শুধু প্রেমে নয়, বরং এক শক্তিশালী সামাজিক আন্দোলনের অংশ হয়ে উঠেছে। তাদের এই উদ্যোগ যেন একটি নতুন প্রেরণা হয়ে উঠেছিল। একে একে আরও গ্রামবাসী সাহায্য করতে এগিয়ে এল, কেউ মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতে, কেউ আবার কৃষিজ উৎপাদন থেকে লাভের কিছু অংশ দিতে, কেউ আবার স্কুলের বারান্দা পরিষ্কার করতে।

শিক্ষকরা তাদের পরিকল্পনায় যুক্ত হলেন। তারা নিজ নিজ ছাত্রদের নিয়ে প্রকল্প তৈরি করতে শুরু করল। স্কুলের পড়াশোনার পরিবেশ কেবল শারীরিক দিক থেকে নয়, মানসিকভাবেও তাদের মধ্যে এক নতুন সঞ্চারণ তৈরি করেছিল। একে অপরকে সাহায্য করার মধ্য দিয়ে, স্কুলের পরিবেশ দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছিল।

"এটা যদি আমরা সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারি, মেঘমালা, তবে আমাদের এই স্কুল এবং আমাদের সম্পর্কের মধ্যে কোনো তফাৎ থাকবে না," রোদ্দুর মেঘমালাকে বলল, তার চোখে এক নতুন দৃঢ়তা ছিল।

মেঘমালা একটু হাসল এবং বলল, "এটাই তো, রোদ্দুর। একে অপরকে ভালোবেসে, আমরা শুধু আমাদের সম্পর্ক নয়, পুরো গ্রামকেই বদলে দিতে পারি।"

এইভাবে, তারা তাদের নিজস্বভাবে শিক্ষার ক্ষেত্রে নতুন সূর্যোদয়ের পথ তৈরি করতে শুরু করেছিল। আর তাদের এই প্রযোজনীয় কাজ শুধু সম্পর্কের জগৎকে নয়, পুরো সমাজের অবস্থা বদলে দিচ্ছিল।


---

Comments

    Please login to post comment. Login