Posts

উপন্যাস

মেঘমালা এবং রোদ্দুর পর্ব 20

January 17, 2025

Mahi 599

3
View


---

পর্ব ২০: নতুন দিগন্ত

গ্রামে মেঘমালা এবং রোদ্দুর তাদের নতুন জীবন শুরু করেছিল। শহরের কোলাহল, অস্থিরতা আর চিন্তা থেকে অনেক দূরে, তারা শান্তিপূর্ণ গ্রামীণ পরিবেশে নিজেদের গড়ে তুলছিল। একে অপরের কাছাকাছি থাকলে জীবন সহজ হয়ে উঠতে থাকে, আর মেঘমালা এবং রোদ্দুরের সম্পর্কেও সেই শান্তি আসতে শুরু করেছিল। কিন্তু মেঘমালার মনে এখনও এক জটিলতা ছিল—স্কুলের বিষয়। ষষ্ঠ শ্রেণীর পাঠ্যক্রমের কিছু বিষয় এখনও তার কাছে অস্পষ্ট ছিল। গণিতের কিছু সমস্যা এবং বিজ্ঞান সম্পর্কিত ধারণাগুলি বুঝতে সে অনেক সময়ই হতাশ হয়ে পড়ত। তাছাড়া, সপ্তম শ্রেণীর ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিও তার মনে এক চাপ তৈরি করছিল।

একদিন, দুপুরের পর, রোদ্দুর এবং মেঘমালা একে অপরের সাথে হাঁটতে হাঁটতে কথা বলছিল। চারপাশে মাঠ, হালকা বাতাস এবং সোনালি আলো তাদের পথ আলোকিত করছিল। রোদ্দুর মেঘমালার দিকে তাকিয়ে বলল, "মালা, তোমার মনে কিছু চিন্তা কি হচ্ছে? তুমি অনেক দিন থেকেই একটু চিন্তিত, সব কিছু ঠিক তো?"

মেঘমালা কিছুটা ইতস্তত করে বলল, "শহরে থাকতে তো আমার অনেক কিছু ছিল, কিন্তু এখানে এসে, যখন আমি সময় নিয়ে ভাবি, কিছু বিষয়ে একটু ভয় পাই। যেমন, ষষ্ঠ শ্রেণীর গণিতের কিছু বিষয় তো এখনও পুরোপুরি বুঝতে পারছি না। বিজ্ঞানও খুব জটিল মনে হয়। আর, সপ্তম শ্রেণীর ভর্তি পরীক্ষার জন্যও প্রস্তুতি নিতে হবে।"

রোদ্দুর হালকা হাসি দিয়ে বলল, "মালা, তুমি যে কি চিন্তা করো! তুমি তো জানো, পড়াশোনায় তুমি কীভাবে মেধাবী। শুধু একটু ভালো করে মনোযোগ দিলে, সব সমস্যার সমাধান হবে।"

মেঘমালা একটু অবাক হয়ে রোদ্দুরের দিকে তাকালো। "তুমি সত্যি বলছো? আমি জানি না, গণিত আর বিজ্ঞান আমার কাছে অনেক কঠিন।"

রোদ্দুর মেঘমালার হাত ধরে বলল, "হ্যাঁ, আমি জানি। কিন্তু তুমি কখনও কি একবার ভেবেছো, তুমি যখন কঠিন সমস্যার সমাধান করতে পারো, তখন কি কিছু সহজ হয়ে যায় না? আমি তোমার সাথে আছি। আমাদের শুধু একসাথে কাজ করতে হবে, আমি জানি তুমি পারবে।"

মেঘমালা একটু চিন্তাশীল হয়ে বলল, "তাহলে তুমি কি আমাকে সাহায্য করতে পারবে?"

"অবশ্যই!" রোদ্দুর বলল, "আমরা একসাথে প্রতিটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারি। গণিতের যে কোনো সমস্যা, বিজ্ঞান সম্পর্কে যদি কিছু বুঝতে না পারো, আমি তোমার পাশে আছি। আর, সাতম শ্রেণীর ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নাও। একে একে, সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।"

মেঘমালা এক মুহূর্ত চুপ করে থেকে রোদ্দুরের দিকে তাকিয়ে বলল, "তুমি জানো, তোমার পাশে থাকলে আমি সত্যি অনেক কিছু করতে পারি।"

রোদ্দুর মৃদু হাসি দিয়ে বলল, "তাহলে শুরু করি। তোমার কোনো সমস্যা থাকলে আমাকে বলো। আমি তোমার সঙ্গে থাকলে, কোনো কিছুই অসাধ্য নয়।"

এরপর, তারা প্রতিদিন দুপুরের সময় একসাথে গণিত এবং বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা শুরু করল। রোদ্দুর প্রথমে মেঘমালাকে গণিতের সহজ নিয়মগুলো বুঝাতে লাগল। খুব ধীরে ধীরে, এক একটি সমস্যার সমাধান করতে করতে মেঘমালা অনুভব করলো, তার ধারণাগুলো স্পষ্ট হচ্ছে। গণিতের ধারণাগুলি যখন একে একে পরিষ্কার হতে লাগলো, তখন মেঘমালা আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠল।

"বিজ্ঞানও তো অনেক কঠিন মনে হয়," একদিন মেঘমালা বলল। "কিন্তু তুমি যখন একটু সময় নিয়ে ব্যাখ্যা করো, তখন মনে হয় খুব সহজ।"

রোদ্দুর বলল, "বিজ্ঞান আসলে প্রকৃতিরই অংশ। সব কিছু আমাদের চারপাশে ঘটে, শুধু সেগুলোকে ভালো করে লক্ষ্য করতে হবে।"

তাদের সময়ের সাথে, মেঘমালা বুঝতে পারলো, একসাথে কাজ করলে কোনো কিছুই কঠিন থাকে না। প্রতিদিনের আলোচনায় তার মনে অনেক কিছু পরিষ্কার হয়ে উঠল। গ্রামের পরিবেশ তার পড়াশোনার জন্য উপযুক্ত ছিল, কারণ সেখানে এক ধরনের শূন্যতা ছিল যা তাকে মনোযোগ集中 করতে সাহায্য করেছিল।

কিছুদিন পর, মেঘমালা যখন গণিতের সমস্ত সমস্যার সমাধান করতে শুরু করল, তখন তার মনে আর কোনো ভয় বা সংশয় ছিল না। রোদ্দুরের সাহায্যে, সে দেখতে পেল যে শুধু পাঠ্যবই থেকেই নয়, প্রতিটি বিষয় থেকে নতুন কিছু শিখতে পারে, তার পড়াশোনায় আগ্রহ এবং আত্মবিশ্বাস ফিরে আসছিল।

এভাবে, গ্রামে তাদের সম্পর্ক এক নতুন দিগন্তের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। মেঘমালা জানতো, সে যখন একে অপরের পাশে থাকবে, তখন সাফল্য আসবেই। পড়াশোনায় আর কোনো সমস্যা ছিল না, কারণ রোদ্দুর তার পাশে ছিল, এবং তাদের মিলিত প্রচেষ্টা সব বাধাকে জয় করতে সাহায্য করছিল। সপ্তম শ্রেণীর ভর্তি পরীক্ষার জন্যও সে প্রস্তুত হয়ে উঠছিল, কারণ সে জানতো, নিজেকে বিশ্বাস করলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।

মেঘমালা একদিন রোদ্দুরের চোখে চোখ রেখে বলল, "তুমি জানো, এই গ্রামে, এই শান্ত পরিবেশে, আমি শুধু শিক্ষা নয়, জীবনও শিখছি। তুমি আমার জন্য সবচেয়ে বড় শিক্ষক।"

রোদ্দুর মৃদু হাসি দিয়ে বলল, "তোমার জন্য আমি সব কিছু করতে প্রস্তুত। তোমার পাশে থাকলেই সব কিছু সহজ হয়ে ওঠে।"

গ্রামে থেকে, তারা একে অপরকে সহায়তা দিয়ে, তাদের ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যাচ্ছিল। মেঘমালা জানতো, নতুন সূর্য উঠতে আর বেশি দেরি নেই—এবং সেটি ছিল তার একসাথে রোদ্দুরের হাত ধরে এগিয়ে চলার নতুন সূচনা।


---

Comments

    Please login to post comment. Login