Posts

গল্প

সে দিন রাতে

January 18, 2025

Naznin sultana Dina

207
View

সে দিন রাতে

গ্রামের নাম ছিল সুখদীপ। চারিদিকে ধানক্ষেত আর মাঝখানে এক পুরনো জমিদারবাড়ি। বাড়িটির চারপাশে ঘন জঙ্গল, অদ্ভুত নিস্তব্ধতা। দিনের বেলাতেও জায়গাটা ভয় ধরানো। গ্রামের লোকজন বলে, ওই বাড়িতে নাকি কিছু একটা আছে।

সেদিন ছিল আশ্বিন মাসের এক অমাবস্যার রাত। আকাশে মেঘ, চাঁদের আলো নেই। গ্রামের তরুণ রাজীব আর তার বন্ধুরা ঠিক করেছিল, সেই রাতে জমিদারবাড়িতে যাবে। ভূতের গল্প শুনতে শুনতে তাদের মধ্যে সাহসের পরীক্ষা নেওয়ার ইচ্ছা জেগেছিল।

"ভূত-টুত কিছু নেই। সবই মানুষের বানানো গল্প," বলেছিল রাজীব।

তারা পাঁচজন ছিল—রাজীব, সুমন, নিলয়, অভ্র আর মিঠুন। মিঠুন একটু ভীরু প্রকৃতির ছিল। সে যেতে চাইছিল না, কিন্তু রাজীব জোর করেছিল।

"এখানে কিছুই হবে না। সবাই মিলে মজা করব। ভয় পাস না," বলেছিল রাজীব।

সন্ধ্যা সাতটার দিকে তারা জমিদারবাড়ির দিকে রওনা দিল। তাদের হাতে টর্চ, আর ব্যাগে কিছু শুকনো খাবার। বাড়িটার কাছে পৌঁছানোর পর চারিদিকে কেবল ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক আর বাতাসের শব্দ। বাড়িটার প্রধান দরজা লোহার ছিল, মরিচার দাগে ভরা।

"চল, ভেতরে ঢুকি," বলল রাজীব।

তারা দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকল। ভেতরে পা রাখতেই যেন বাতাস আরও ঠান্ডা হয়ে গেল। বাড়ির ভেতরে সব কিছু জীর্ণ। দেয়ালের প্লাস্টার খসে পড়েছে, মেঝেতে মাকড়সার জাল আর ধুলো জমে আছে। ঘরের কোণ থেকে ইঁদুর দৌড়ে পালাচ্ছে।

নিলয় বলল, "এখানে থাকতেও কি লোক পারত?"

"জমিদাররা তো রাজপ্রাসাদ বানাত। এ জায়গা ঠিক থাকবে না কেন?" উত্তর দিল অভ্র।

তারা ঘুরতে ঘুরতে মূল হল ঘরে পৌঁছল। হলটা বড়, মাঝখানে একটা ভাঙা কাঠের টেবিল আর কিছু ছড়ানো চেয়ার। দেয়ালে ঝুলছে পুরনো জমিদারের ছবি। জমিদারের মুখের গম্ভীর অভিব্যক্তি যেন তাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।

"উফ, এই লোকটা যেন আমাদের দেখে হাসছে," বলল মিঠুন, একটু আতঙ্কিত গলায়।

"আরে পাগল, ছবির মুখ হাসবে কী করে?" বলে হেসে উঠল সুমন।

তারা টেবিলের চারপাশে বসল। রাজীব মোমবাতি জ্বালিয়ে দিল। তারপর শুরু হলো গল্প।

রাজীব বলতে লাগল, "শুনেছি, এই জমিদার ছিলেন খুব অত্যাচারী। গ্রামের লোকদের ওপর অনেক জুলুম করত। একবার এক কৃষক তার জমির দাবি নিয়ে এলে, জমিদার তাকে মেরে পুকুরে ফেলে দেয়। তারপর থেকে এই বাড়িতে অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে শুরু করে। রাতে কারা যেন কাঁদে, কারা যেন দেয়ালে পায়ের শব্দ তোলে। অনেকেই দেখেছে, জমিদারের ছায়া।"

রাজীবের গল্প শুনে সবাই একটু থমকে গেল। মিঠুন তো প্রায় কাঁপতে শুরু করল।

"থাক, এসব বানোয়াট কথা বলে ভয় দেখাবি না," বলল অভ্র।

ঠিক তখনই, একটা হালকা আওয়াজ শুনতে পেল তারা। যেন মেঝেতে কিছু একটা পড়ল। সবাই চমকে উঠল। মিঠুন বলল, "কী ছিল এটা?"

"ইঁদুর হবে," বলল নিলয়। কিন্তু তার গলায়ও একটু ভয় ঝরছিল।

তারা আবার গল্প শুরু করল। কিন্তু হঠাৎ করে দরজার বাইরে একটা ছায়া দেখে নিলয় চিৎকার করে উঠল।

"ওই দেখ, কে ওখানে!"

সবাই দরজার দিকে তাকাল। দরজার ফাঁক দিয়ে যেন কারও ছায়া দেখা গেল। রাজীব বলল, "চল, দেখি কে।"

তারা টর্চ নিয়ে দরজার দিকে এগোল। কিন্তু দরজা খুলতেই কেউ ছিল না। রাজীব বলল, "এই দেখ, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। হয়ত বাতাসে গাছের ডাল নড়েছিল।"

কিন্তু মিঠুন বলল, "না, আমি স্পষ্ট ছায়া দেখেছি।"

সবাই আবার ভেতরে এল। কিন্তু এবার ভেতরের পরিবেশ আরও গম্ভীর। হঠাৎ টেবিলের উপরে রাখা মোমবাতি নিভে গেল। তারা টর্চ জ্বালাল, কিন্তু তখনই দেয়ালের ওপর জমিদারের ছবিটা পড়ে গেল, বিকট শব্দ করে।

"এবার আমি যাব," বলে উঠে দাঁড়াল মিঠুন।

"আরে দাঁড়া, এসব কিছুই না। হয়তো বাতাসে পড়ে গেছে," বলল রাজীব। কিন্তু তার নিজের গলায়ও আতঙ্ক ছিল।

ঠিক তখনই, হল ঘরের পেছনের দরজাটা নিজে থেকে খুলে গেল। ঠান্ডা বাতাস ঢুকল ভেতরে। বাতাসের সঙ্গে যেন কারও কান্নার শব্দ।

"কে... কে কান্না করছে?" ফিসফিস করে বলল সুমন।

কেউ কিছু বলতে পারল না। সবাই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। কান্নার শব্দটা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠল। মিঠুন জোরে চিৎকার করে বলল, "আমি আর থাকব না! আমি বাড়ি যাচ্ছি।" সে দৌড়ে বাইরে চলে গেল।

রাজীব, নিলয়, সুমন আর অভ্র ভয়ে জমে গিয়েছিল। তারা দরজার দিকে এগোল, কিন্তু ঠিক তখনই দরজাটা বিকট শব্দে বন্ধ হয়ে গেল।

"এখন কী হবে?" বলল নিলয়।

"কিছু হবে না। ঠান্ডা মাথায় ভাবতে হবে," বলল রাজীব। কিন্তু তার কণ্ঠও কাঁপছিল।

হঠাৎ করে ঘরের এক কোণ থেকে একটা সাদা ছায়া বেরিয়ে এল। সেটা একটা মানুষের মতো, কিন্তু মুখ দেখা যাচ্ছে না। চারপাশে কুয়াশার মতো ধোঁয়া।

"তোমরা এখানে কেন এসেছ?" ভেসে এল এক ভৌতিক গলা।

রাজীব তাড়াতাড়ি বলল, "আমরা শুধু দেখতে এসেছি। কিছু করতে আসিনি।"

ছায়াটা বলল, "এই বাড়ি তোমাদের জন্য নয়। চলে য�

Comments

    Please login to post comment. Login

  • Arif Mahmud Ador 10 months ago

    গল্পটি পড়ে কিছুটা পরিচিত মনে হলেও ভালো লেগেছে। তবে হয়তো আরেকটু দীর্ঘ হলে আরো ভালো হতো। শুভকামনা। আর সময় হলে আমার নতুন ছোটগল্পটি একটু পড়ে দেখবেন এবং ভালো-মন্দ জানাবেন।