Posts

চিন্তা

তৈলাক্ত বাঁশ,বানর এবং বাংলাদেশ

January 19, 2025

মাসুম শরীফ

9
View

আমরা যারা বাংলা মিডিয়াম স্কুলে পড়েছি, আমাদেরকে পাটীগণিতে তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে বানরের উপরে উঠার অঙ্ক করতে হয়েছে | আমার স্পষ্ট খেয়াল আছে যে অঙ্কটি করার থেকে আমার বেশি মনোযোগ ছিল ওই বাঁশের গায়ে কে তেল মাখালো এই বিষয় নিয়ে | অনেক বার মনে হয়েছিল স্যারদের এই প্রশ্নটি করি, কিন্তু সাহসের অভাবে করা হয় নাই! কারণ আমাদের স্যাররা মোটা বেত রাখতেন দুষ্ট গরু গুলোকে যাতে পিটিয়ে মানুষ বানাতে পারেন! আমি ছিলাম মিচকে দুষ্ট গরু, যে কারণে ওই বেতের বারি তেমন একটা খেতে হয় নাই | যাই হোক অঙ্কটার কথায় আসি, অঙ্ক গুলো সাধারণত ছিল এরকম যে একটি বানর একটি তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে প্রথম তিন মিনিটে উঠে দুই মিটার আর পরবর্তী এক মিনিটে নামে এক মিটার, এবং এভাবে একটি নির্দিষ্ট উচ্চতার বাঁশ বেয়ে উঠতে বানরটির কত সময় লাগবে, এটি বের করতে বলা হতো| আমি দ্রুত অংকটি নিজে নিজে করতে পারতাম, আর বাকি সময় ভাবতাম বাঁশটিতে তেল মাখালো কে? গভীর ভাবে চিন্তা করতে করতে একসময় হারিয়ে যেতাম কিন্তু উত্তর বের করতে পারতাম না | পরবর্তীতে ওই উত্তর আর কোনো দিন বের করতে পারি নাই| কিন্তু ইদানিং মনে হয় আমার বহুল আকাঙ্খিত প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছি! বুঝলেন না, তাই না? দাঁড়ান একটু ব্যাখ্যা করলেই বুঝতে পারবেন|

এবার রূপক অর্থে কল্পনা করুন, ওই তৈলাক্ত বাঁশ হচ্ছে বাংলাদেশ, বানর হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণ আর বাঁশের গায়ে তেল মাখাচ্ছে মহামান্য রাজনীতিবিদেরা ! দেশের জনগণকে পিছানোর জন্য উনারা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন | কি এবার একটু একটু পরিষ্কার হচ্ছে? গত তিপ্পান্ন বছর ধরে বাংলাদেশের জনগণের অবস্থা হচ্ছে তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে উপরে উঠার চেষ্টা করা ওই অসহায় বানরের মতন !

আমাদের স্কুলে শেখানো হইলো মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক, স্বাধীনতার ঘোষক, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান | আমাদের পাঠ্য পুস্তকে শেখ মুজিবুর রহমানের অবস্থান ছিল অনেকটা না থাকার মতন! আমাদের পরবর্তী জেনারেশন জেড কে শিখাইলো মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক এবং একমাত্র সত্ত্বাধিকারী হইলেন গিয়া শেখ মুজিবুর রহমান এবং উনি হইলেন আমাগো জাতির পিতা | এই গল্প খাওয়ানোর জন্য সব টাকার নোটের উপর উনার ছবি, হাজার কোটি টাকা খরচ কইরা উনার মূর্তি বানানো হইলো, এমনকি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা গুলোর নামকরণ করা হইলো উনার নামে! আরো কিছুদিন উনারা ক্ষমতায় থাকলে মনে হয় শেখ সাহেবের মূর্তি পূজা শুরু হইতো, নাউযুবিল্লাহ !

বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটার অন্য গুরুত্বপূর্ণ নেতা, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হোক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি প্রমুখ নেতাকে এক প্রকার ইতিহাস থেকে বহিস্কার করা হইলো ! আমাদেরকে শিখানো হইলো যে শেখ পরিবার আমাদের ত্রাণকর্তা আর বাকি সবাই রাজাকার এবং শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধে একজন পাকিস্তানী গুপ্তচর ছিলেন! আমার মাঝে মাঝে মনে হয় শেখের বেটির কান্ড-কীর্তি দেইখা স্বয়ং ইবলিস শয়তান লজ্জা পাইয়া যায়!

বাংলাদেশ হইলো পৃথিবীর একমাত্র জাতি যাহাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রতি পনের বছরে একবার করে বদলায়! কি বিশ্বাস হচ্ছে না? একটি কইরা গণ অভ্যুত্থান হয় আর ইতিহাস বদলাইয়া যায়! ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ কয় বছর হয়? ইতিহাস বদলায় নাই? ১৯৯০ থেকে ২০০৫ কয় বছর? ইতিহাসের কি অবস্থা ছিল? ২০০৯ থেকে ২০২৪ কয় বছর? ইতিহাস এখন কি হইসে? ঠিক বলসি?

আগে ছিল উন্নয়নের ফাঁকা বুলি আর এখন দেখি সংস্কার আর সংস্কার! ভাব খানা এমন সংবিধান বদলায়া বা দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ বানাইলে বাংলাদেশ রাতারাতি আমেরিকা আর ইংল্যান্ড হইয়া যাইবো, থুক্কু অস্ট্রেলিয়ার কথা বাদ দিলাম, এই দেশটারে বাংলাদেশিরা আবার গোনার মধ্যে ধরে না!

সংবিধান সংস্কার কইরা আর ডজন ডজন কমিশন কইরা কি ওজনে কম দেওয়া বন্ধ হইবো? খাবারে ভেজাল দেওয়া কমবে? রাজনৈতিকদল গুলার মধ্যে পরিবারতন্ত্র বন্ধ হবে বা গণতন্ত্র আসবে? মধ্যবিত্তের জীবন-মানের উন্নতি হবে? ঢাকা শহরের বায়ু দূষণ কমবে? অসহনীয় ট্রাফিক জ্যাম সহনীয় হবে? পুলিশের ‘চা-নাস্তার টাকা‘

খাওয়া বন্ধ হবে? ডাক্তার কি ঠিক মতন চিকিৎসা করবে? ইঞ্জিনিয়ারদের  ‘নখরা‘ নেওয়া বন্ধ হবে? দেশের স্বাস্থ্য-ব্যবস্থার উন্নতি হবে? যেখানে সেখানে পিটিয়ে মানুষ মারা বন্ধ হবে? একজন সেলিব্রিটির ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে ফেসবুকে মাতামাতি বন্ধ হবে? ঢাকা তথা সারাদেশে বর্জ্য-ব্যবস্থাপনার উন্নতি হবে? রাজউকের মহামান্য কর্ম-কর্তাদের ‘উৎকোচ’ নিয়ে ভবনের প্ল্যান পাশ করানো বন্ধ হবে? বন্ধ হবে কি রানা প্লাজার স্বজন হারানো মানুষদের চাপা কান্না অথবা জুলাই ২০২৪ গণ-আন্দোলনে  শহীদ হওয়া তরুণ-তরুণীদের বাবা-মায়ের আহাজারি? একটি দেশের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে একাশি মিলিয়ন ডলার ছিনতাই হইলো, দেশের জনগণ কোনো কথা বললো না? জুন মাসে নির্বাচন দিয়ে দিলে সব সম্যসার সমাধান হয়ে যাবে তাই না? এই পরিপ্রেক্ষিতে মিজানুর রহমান আজহারী সাহেবের বক্তব্যটি বিশেষভাবে উল্লেখ্য 😉|

আচ্ছা সংসদের এমপি দের ন্যূনতম বয়স ২১ হইলে কি সুবিধা হবে? এই অধমের মনে হয় আগে, পুলাপাইন ছুটতো বিসিএস এর পিছনে আর তখন ছুটবে রাজনীতিবিদ আর এমপি হওয়ার জন্য| এই তথাকথিত  সংস্কার এর মধ্যে কি শিক্ষার বা মানুষের মানবিক উন্নয়নের কোনো কথা কি আছে?

বাংলাদেশের সমস্যা আসলে শুধু একটি| জানেন সেটি কি? মানুষের মানবিক উন্নয়ন ও একজন সৎ মানুষ হয়ে উঠা! এটি একমাত্র সমাধান| উন্নয়ন আর সংস্কারের ফাঁকা বুলি দিয়ে কিছুই হবে না, পরিণতি? ওই বানরের মতন তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে উঠার মতই হবে যেমন এখনটি উঠছেন!

Comments

    Please login to post comment. Login