মিরাজ একজন প্রবাসী যুবক, যিনি দীর্ঘদিন ধরে *দুবাই*তে কাজ করছিলেন। তার জীবনে অনেক কিছু ছিল, কিন্তু এক বিশেষ জায়গা ছিল—একটি মেয়ে, যার নাম ছিল *ইয়াসমিন*। ইয়াসমিন ছিল তার দেশের একটি ছোট শহরের সুন্দরী তরুণী। তবে, তাদের মধ্যে ছিল অনেক দূরত্ব। মিরাজ আর ইয়াসমিন একে অপরকে প্রথম দেখেছিল এক সামাজিক প্ল্যাটফর্মে, যেখানে তারা প্রথমে বন্ধু হয়ে কথা বলেছিল।
যত দিন যায়, তাদের সম্পর্ক ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব থেকে গভীর ভালোবাসায় পরিণত হয়। ফোনের স্ক্রীনে একে অপরের মুখ দেখতে দেখতে, তারা জানত, তাদের মধ্যে কিছু আছে, যা শুধুমাত্র কথায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তাদের ভালোবাসা ছিল সত্যি, তবে সীমানার অনেকটা পথ তাদের মাঝে ছিল।
*প্রথম দিকের আলাপ*
মিরাজ ইয়াসমিনকে প্রথম মেসেজ করেছিল, *"হ্যালো ইয়াসমিন, তুমি কেমন আছো?"*
ইয়াসমিন উত্তর দিয়েছিল, *"ভালো আছি, তুমি কেমন?"*
এই সাধারণ কথোপকথনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল তাদের সম্পর্ক। তারপর থেকে নিয়মিত ফোনে কথা বলা, ভিডিও কল করা, একে অপরকে জানার চেষ্টা করা—এভাবেই তাদের সম্পর্ক গড়ে উঠতে থাকে।
মিরাজ জানত, ইয়াসমিন তার জীবনে বিশেষ কিছু, তবে সে কখনোই ভাবেনি যে, এতটা ভালোবাসা একদিন তাকে অনলাইন মাধ্যমে বিয়েতে নিয়ে যাবে।
*দূরত্বের মাঝে ভালোবাসা*
মিরাজ এবং ইয়াসমিন একে অপরকে অনেক ভালোবাসত, কিন্তু তাদের সম্পর্ক শুধুমাত্র ফোনের মাধ্যমে ছিল। তারা জানত, তাদের মধ্যে এক গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, কিন্তু তখনও তারা একে অপরকে শারীরিকভাবে কাছে পায়নি। দু'জনের জীবনে অনেক বাধা ছিল, তবে তারা জানত, একে অপরকে ছাড়া তাদের জীবন অসম্পূর্ণ।
একদিন, মিরাজ সিদ্ধান্ত নেয়, সে ইয়াসমিনকে বিয়ের প্রস্তাব দেবে। তবে, যে অবস্থায় তারা ছিল, তা ছিল একেবারে অনলাইন—মোবাইলের মাধ্যমে।
*মোবাইলে বিয়ের প্রস্তাব*
মিরাজ গভীরভাবে ভাবল, *"আমি যদি তাকে বলি যে, আমি তাকে বিয়ে করতে চাই, তবে সে কী প্রতিক্রিয়া দেখাবে?"*
তার মন ছিল দোদুল্যমান, কিন্তু সে জানত, এই মুহূর্তে তার অনুভূতি আর কথা বলার সময় এসেছে।
একদিন সন্ধ্যায়, মিরাজ ইয়াসমিনকে একটি মেসেজ পাঠায়:
*"ইয়াসমিন, আমি জানি আমরা অনেক দূরে আছি, কিন্তু আমি জানি তুমি আমার জীবনের একমাত্র মানুষ। আমি তোমাকে চিরকাল ভালোবাসি, এবং আমি চাই, আমি তোমার সাথে পুরো জীবন কাটাতে পারি। তুমি কি আমার সঙ্গী হতে চাও?"*
ইয়াসমিন কিছুক্ষণ চুপ ছিল। তার মনটা এক অদ্ভুত উত্তেজনায় কাঁপছিল। সে জানত, মিরাজের কথা সত্যি, এবং সে নিজেও তাকে ভালোবাসে। তার চোখে জল চলে আসে, কিন্তু তার মুখে ছিল এক মিষ্টি হাসি।
*"মিরাজ, আমি জানতাম। আমি জানতাম তুমি আমাকে ভালোবাসো, আর আমি তোমার সাথে জীবন কাটাতে চাই।"*
এভাবে, মিরাজ এবং ইয়াসমিন একে অপরকে তাদের জীবনের সঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা জানত, এর অর্থ শুধু কিছু শব্দ নয়, বরং একটি জীবন্ত প্রতিশ্রুতি, যেটি তারা একে অপরকে দিয়েছে।
*অনলাইন বিয়ের আয়োজন*
এখন, তাদের জীবন নতুন এক অধ্যায়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। তারা সিদ্ধান্ত নেয়, তাদের বিয়েটি হবে অনলাইন—একটি মোবাইল স্ক্রীনের মাধ্যমে। ইয়াসমিন তার পরিবারের কাছে মিরাজের বিয়ের প্রস্তাবটি জানায়, এবং তার পরিবারও অত্যন্ত খুশি হয়ে তাদের সম্পর্ককে স্বীকৃতি দেয়।
মিরাজ এবং ইয়াসমিন ভিডিও কলের মাধ্যমে তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন করে। মিরাজ সাদা শেরওয়ানি পরে, আর ইয়াসমিন লাল লেহেঙ্গা পরে তার জীবনের সবচেয়ে বিশেষ মুহূর্তটি উদযাপন করছিল।
*"আমি তোমাকে চিরকাল ভালোবাসব, ইয়াসমিন। আজ থেকে তুমি আমার জীবনের অংশ,"* মিরাজ তার চোখে অশ্রু নিয়ে বলেছিল।
*"তুমি আমার পৃথিবী, মিরাজ। তুমি ছাড়া আমি কিছুই নই,"* ইয়াসমিনও মিষ্টি হাসি দিয়ে বলেছিল।
দূরত্ব ছিল, কিন্তু তাদের ভালোবাসার শক্তি ছিল অটুট। ভিডিও কলের মাধ্যমে তাদের বিয়ের পর, পরিবার ও বন্ধুদের উপস্থিতিতে তারা একে অপরকে দুঃখ, আনন্দ এবং জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেয়। তাদের সম্পর্কের এই অনলাইন বিয়েটি ছিল একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, যেখানে ভালোবাসা, বিশ্বাস, এবং প্রতিশ্রুতি ছিল সবচেয়ে বড়।
*শেষ কথা*
মিরাজ ও ইয়াসমিনের গল্প প্রমাণ করে দেয় যে, ভালোবাসা কখনো সীমানায় বাঁধা পড়ে না। যদি দু'জন মানুষের মধ্যে সৎ ভালোবাসা থাকে, তবে তারা যে কোনো পরিস্থিতিতে একে অপরের সাথে থাকতে পারে। তাদের সম্পর্কের শক্তি ছিল তাদের আন্তরিকতায় এবং তাদের একে অপরের প্রতি ভালোবাসায়। প্রবাসে থেকেও তারা একে অপরকে জীবনের সঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করেছিল, এবং তাদের ভালোবাসা ছিল এক অনলাইন মোবাইলের মাধ্যমে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা