মেঘমালা এবং রোদ্দুর
পর্ব একুশ: প্রতিজ্ঞার আলো
সপ্তম শ্রেণীর ভর্তি পরীক্ষার দিন ঘনিয়ে আসছে। মেঘমালা আগের থেকে অনেক আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে, কিন্তু তবুও মাঝে মাঝে তার মনে ভয় আসে—সবকিছু কি ঠিকভাবে হবে? গ্রামের বাড়ির পরিবেশে সে যতই পড়াশোনা করুক, শহরের প্রতিযোগিতার কথা মনে পড়লে তার দম বন্ধ হয়ে আসে।
সকালে উঠেই মেঘমালা পড়ার টেবিলে বসে বই খুলে বসেছিল। তার মাথায় অংক ঘুরপাক খাচ্ছিল। হঠাৎ রোদ্দুর এসে বলল, "মালা, একটা ছোট্ট বিরতি নাও। বেশি চাপ নিয়ে পড়লে মাথা ক্লান্ত হয়ে যাবে।"
মেঘমালা বিরক্ত হয়ে বলল, "বিরতি নেবার সময় নেই, রোদ্দুর। এতো বড় পরীক্ষা, আমি যদি ভালো করতে না পারি, তাহলে?"
রোদ্দুর হালকা হাসি দিয়ে বলল, "তুমি কি জানো, মালা, শুধু ভালো রেজাল্ট করলেই জীবন গড়তে হয় না। তুমি যে নিজের সর্বোচ্চটা দিচ্ছো, সেটাই বড় কথা। ফলাফল তোমার নিয়ন্ত্রণে নেই, কিন্তু চেষ্টা তোমার হাতে।"
মেঘমালা একটু চুপ হয়ে গেল। "তুমি কি মনে করো, আমি পারবো?"
রোদ্দুর মেঘমালার চোখে তাকিয়ে বলল, "তুমি সবসময় পারো, মালা। কারণ তুমি কখনও হার মানো না।"
তার কথা শুনে মেঘমালার মনে সাহস এলো। সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো, ভয় পেয়ে নয়, আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যাবে।
পরের দিন সকালে, রোদ্দুর একটি চমক নিয়ে হাজির হলো। তার হাতে একটা ছোট্ট বাক্স। মেঘমালা অবাক হয়ে বলল, "এটা কি?"
রোদ্দুর বাক্সটা খুলে দেখাল। ভেতরে একটা ছোট্ট কাগজের প্ল্যাকার্ডে লেখা, "নিজের উপর বিশ্বাস রাখো।"
মেঘমালা প্ল্যাকার্ডটা হাতে নিয়ে হাসল। "তুমি তো সত্যি আমাকে সবসময় সাহস দাও। আমি এই বার্তাটা মনে রাখবো।"
এরপর, মেঘমালা তার প্রস্তুতি আরও জোরালোভাবে চালিয়ে যেতে লাগল। প্রতিদিন রোদ্দুর তার পাশে বসে সময় দিত। শুধু পড়াশোনার ব্যাপারে নয়, মেঘমালার মনে যে ভয় আর দ্বিধা ছিল, তাও দূর করতে সাহায্য করছিল।
পরীক্ষার দিন এসে গেল। রোদ্দুর তাকে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দিয়ে বলল, "মনে রেখো, মালা, তুমি শুধু একটা পরীক্ষা দিচ্ছো না। তুমি নিজের ভেতরের ভয়কে জয় করতে যাচ্ছো।"
মেঘমালা তার দিকে তাকিয়ে বলল, "তোমার এই কথাগুলো আমাকে সবসময় শক্তি দেয়। ধন্যবাদ, রোদ্দুর।"
পরীক্ষা ভালো হলো কি না, তা জানা যাবে পরে। তবে মেঘমালা এক নতুন উপলব্ধি নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে বের হলো—যতদিন নিজের উপর বিশ্বাস থাকবে, কোনো কিছুই তাকে হারাতে পারবে না।
---