মেঘমালা এবং রোদ্দুর
পর্ব বাইশ: প্রত্যাশার প্রতিফলন
পরীক্ষা শেষ হয়েছে। মেঘমালার মনে মিশ্র অনুভূতি—একদিকে স্বস্তি, আরেকদিকে উদ্বেগ। রেজাল্টের দিন যতই ঘনিয়ে আসছিল, তার মনে ততই উত্তেজনা বাড়ছিল। গ্রামে এমনিতে শান্ত পরিবেশ, কিন্তু মেঘমালার হৃদয়ে যেন এক অদ্ভুত ঝড় বইছিল।
রোদ্দুর প্রতিদিন তার পাশে থাকত, তাকে সাহস দিত। একদিন দুপুরে, গ্রামের মাঠে হাঁটতে হাঁটতে রোদ্দুর বলল, "মালা, ফলাফল নিয়ে এত চিন্তা কোরো না। তুমি তো তোমার সেরাটা দিয়েছো। যা হবে, ভালোই হবে।"
মেঘমালা মাথা নিচু করে বলল, "কিন্তু রেজাল্ট যদি খারাপ হয়? আমি যদি আমার ইচ্ছামতো স্কুলে ভর্তি হতে না পারি?"
রোদ্দুর হেসে বলল, "তুমি সবসময় খারাপের কথা ভাবো কেন? ভালো কিছু হতে পারে, এটা কেন ভাবছো না? আর ফলাফল যা-ই হোক, সেটা দিয়ে তোমার সামর্থ্য মাপা যাবে না। তোমার চেষ্টা আর আত্মবিশ্বাসই তোমাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।"
মেঘমালা একটু নিশ্চিন্ত হলো। "তুমি ঠিক বলছো। আমি শুধু আমার সেরাটা দিতে পেরেছি, এটুকুই বড় কথা।"
রেজাল্টের দিন এলো। গ্রামের পোস্ট অফিসে ফলাফল এসে পৌঁছেছে। মেঘমালা আর রোদ্দুর একসাথে সেখানে গেল। মেঘমালার হাত কাঁপছিল। সে রোদ্দুরের দিকে তাকিয়ে বলল, "তুমি খোলা। আমি সাহস পাচ্ছি না।"
রোদ্দুর মৃদু হেসে ফলাফল খোলার কাগজটা হাতে নিল। তার মুখে একটি উজ্জ্বল হাসি ফুটে উঠল। "মালা, তুমি পাস করেছো! এবং শুধু পাস না, তুমি একেবারে সেরা নম্বর পেয়েছো!"
মেঘমালা বিশ্বাস করতে পারছিল না। "তুমি মজা করছো না তো?"
"কখনোই না," রোদ্দুর বলল। "তুমি যা করেছো, তা সত্যিই অসাধারণ। এবার তোমার স্বপ্নের স্কুলে ভর্তি হতে আর কোনো বাধা নেই।"
মেঘমালার চোখে জল এসে গেল। "তুমি যদি পাশে না থাকতে, আমি এটা কখনো পারতাম না, রোদ্দুর।"
রোদ্দুর তার দিকে তাকিয়ে বলল, "আমি তোমার পাশে ছিলাম, আছি, থাকবো। কিন্তু আসল কাজটা তুমি নিজেই করেছো। তুমি নিজের উপর বিশ্বাস রেখেছো, আর সেটাই তোমাকে সাফল্যের দিকে নিয়ে গেছে।"
গ্রামের প্রতিটি মানুষ মেঘমালার এই সাফল্যে খুশি হয়েছিল। তার পরিবারের লোকেরা গর্বিত হলো, আর মেঘমালা বুঝতে পারলো, কঠিন পরিস্থিতি যতই আসুক, চেষ্টা আর আত্মবিশ্বাস থাকলে সবকিছু জয় করা সম্ভব।
---
এখন গল্প আরও গভীর দিকে এগিয়ে যাবে। মেঘমালার নতুন স্কুলের জীবনে কী হবে, রোদ্দুর তার পাশে কীভাবে থাকবে, এবং তারা একসাথে কীভাবে নতুন অধ্যায় শুরু করবে—তা পরবর্তী পর্বে উঠে আসবে।