মেঘমালা এবং রোদ্দুর
পর্ব তেইশ: নতুন শুরু
মেঘমালার স্বপ্নের স্কুলে ভর্তির সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। পরীক্ষার ফলাফল, সাক্ষাৎকার, আর যাবতীয় প্রস্তুতি শেষে অবশেষে দিনটি এসেছে যখন তাকে গ্রামের বাইরে পা রাখতে হবে। এই নতুন স্কুল ছিল শুধু এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, তার জন্য এটি ছিল স্বপ্নের একটি দিগন্ত। তবে গ্রাম ছাড়ার দিন যতই ঘনিয়ে আসছিল, মেঘমালার মন ভার হয়ে উঠছিল।
যাত্রার আগের দিন বিকেলে, মেঘমালা স্কুলের পুরোনো বইগুলো গোছাচ্ছিল। প্রতিটি বই যেন তার জীবনের একটা অধ্যায়ের প্রতীক। গ্রামের স্কুলের পড়া, রোদ্দুরের সঙ্গে কাটানো প্রতিটি বিকেল, মাঠে বসে অংকের সমাধান, বিজ্ঞান পড়ার সময়কার হাসি—সব কিছু যেন বইয়ের পাতায় পাতায় আঁকা ছিল।
সন্ধ্যার দিকে উঠোনে বসে মেঘমালা আকাশের তারা দেখছিল। হালকা শীতল হাওয়া বইছিল, আর মনটা যেন একটু ভারি হয়ে উঠছিল। রোদ্দুর এসে পাশে বসল। তার হাতে একটি ছোট্ট কাগজের প্যাকেট। মেঘমালা তাকিয়ে বলল, "তুমি এখানে?"
রোদ্দুর মৃদু হাসল। "তোমার সাথে কিছু সময় কাটাতে এসেছি। তুমি তো কাল চলে যাবে।"
মেঘমালা একটু চুপ করে রইল। তার চোখে একধরনের অদ্ভুত বিষণ্ণতা। "রোদ্দুর, জানো? এ গ্রামটা আমাকে সব দিয়েছে। প্রতিটি জায়গা, প্রতিটি মানুষ আমাকে আপন করে নিয়েছে। এখান থেকে দূরে গিয়ে কেমন লাগবে জানি না।"
রোদ্দুর হেসে বলল, "এটা তো তোমার জীবনের এক নতুন অধ্যায়ের শুরু, মালা। আমাদের জীবনেও তো পরিবর্তন আসতে হবে। তবে জানো, তুমি যত দূরে যাও না কেন, তোমার স্মৃতিগুলো তোমার সাথে থাকবে।"
মেঘমালা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল। "তবুও মনে হয়, এখানে থেকে গেলেই ভালো হতো। আর তুমি? তুমি কি আমায় মিস করবে?"
রোদ্দুর একটু হেসে বলল, "তুমি কীভাবে এমন প্রশ্ন করতে পারো? মিস করব না? তুমি জানো, তোমার প্রতিটি হাসি, প্রতিটি দুঃখ, সবসময় আমার মনে থাকবে। তবে, তোমার স্বপ্ন পূরণের জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।"
রোদ্দুর প্যাকেটটা মেঘমালার দিকে এগিয়ে দিল। "এটা তোমার জন্য।"
মেঘমালা প্যাকেট খুলে দেখল ভেতরে একটি সুন্দর খাতা। খাতার প্রথম পাতায় লেখা ছিল:
"নিজের গল্প নিজেই লেখো। তোমার প্রতিটি পদক্ষেপে আমি তোমার সাথে আছি।"
মেঘমালার চোখে জল এসে গেল। "তুমি সবসময় এভাবে আমাকে সাহস দাও, রোদ্দুর। আমি জানি, তোমার মতো একজন বন্ধু পাশে থাকলে সবকিছু সম্ভব।"
রোদ্দুর মিষ্টি গলায় বলল, "তোমার ভেতরেই তোমার শক্তি লুকিয়ে আছে। আমি শুধু তোমাকে সেটা মনে করিয়ে দিই।"
পরের দিন সকাল। মেঘমালার যাত্রার সময় এসে গেছে। গ্রামের সবাই তাকে বিদায় দিতে এসেছে। মা তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন। রোদ্দুর দূরে দাঁড়িয়ে ছিল, কিন্তু তার চোখে একটা অদ্ভুত শান্তি।
গাড়িতে ওঠার আগে মেঘমালা একবার পেছন ফিরে তাকাল। রোদ্দুরের চোখে চোখ পড়ল তার। রোদ্দুর হাত নেড়ে ইশারায় বলল, "ভালো থেকো, মালা।"
মেঘমালা জানত, এই বিদায় অস্থায়ী। তাদের সম্পর্ক, তাদের বন্ধন কোনো দূরত্ব মুছে দিতে পারবে না। সে আত্মবিশ্বাস নিয়ে গাড়িতে উঠল। তার সামনে এক নতুন জীবন অপেক্ষা করছিল।
---
এভাবে মেঘমালা তার জীবনের নতুন পথে পা রাখল। পরবর্তী পর্বে দেখা যাবে তার নতুন স্কুলের জীবন এবং কীভাবে সে নতুন বন্ধুত্ব, নতুন অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে নিজের জায়গা তৈরি করে।