মেঘমালা এবং রোদ্দুর
পর্ব চব্বিশ: নতুন পৃথিবীর আলো
নতুন স্কুল। নতুন শহর। সবকিছুই মেঘমালার কাছে যেন একেবারে অচেনা। গ্রাম থেকে আসা মেয়েটি যখন স্কুলের ফটকের ভেতরে ঢুকল, তার মনে তখন এক অদ্ভুত উত্তেজনা আর ভয় মিলেমিশে ছিল। এত বড় স্কুল, এত ছেলেমেয়ে—সবকিছু তাকে একরকম আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল।
ক্লাসের প্রথম দিনটা ছিল পরিচয়ের দিন। শিক্ষক এসে বললেন, "সবাই যার যার নাম আর কোথা থেকে এসেছো, সেটা বলো।"
যখন মেঘমালার পালা এলো, সে একটু লজ্জায় মাথা নিচু করে বলল, "আমার নাম মেঘমালা। আমি গ্রাম থেকে এসেছি।"
ক্লাসে কেউ কেউ ফিসফিস করে কথা বলছিল। একজন বলল, "গ্রাম থেকে এসেছে? এখানের পড়াশোনা তো খুব কঠিন। ও পারবে তো?"
মেঘমালার মনে খোঁচা লাগল, কিন্তু সে কিছু বলল না। নিজের জায়গায় চুপচাপ বসে রইল।
স্কুলের পরিবেশ গ্রামের স্কুলের চেয়ে একদম আলাদা। এখানে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। সহপাঠীরা খুব মেধাবী, শিক্ষকরা প্রত্যাশা করেন যে সবাই সব বিষয়ে সেরা হবে। প্রথম কয়েকটা দিন মেঘমালার জন্য খুব কঠিন হয়ে পড়ল।
একদিন দুপুরে, মেঘমালা লাইব্রেরিতে বসে গণিতের অঙ্ক নিয়ে হিমশিম খাচ্ছিল। হঠাৎ এক মেয়ে তার কাছে এসে বলল, "তোমার নাম মেঘমালা, তাই তো? আমি দেখছি তুমি এখানে নতুন। কোনো সাহায্য লাগবে?"
মেঘমালা একটু অবাক হয়ে তার দিকে তাকাল। মেয়েটির মুখে বন্ধুত্বের হাসি। "হ্যাঁ, আমি নতুন। আর গণিতের এই অঙ্কগুলো আমার কাছে একটু কঠিন লাগছে।"
মেয়েটি বসে পড়ল। "আমার নাম রিয়া। এসো, দেখি আমরা একসাথে চেষ্টা করতে পারি।"
সেই দিন থেকে রিয়া মেঘমালার প্রথম বন্ধু হয়ে উঠল। সে শুধু গণিত নয়, অন্য বিষয়েও মেঘমালাকে সাহায্য করতে লাগল।
একদিন বিকেলে, ক্লাসের পরে রিয়া আর মেঘমালা স্কুলের বাগানে বসে কথা বলছিল। রিয়া বলল, "তুমি জানো, মেঘমালা, তুমি অনেক সাহসী। গ্রামের মতো একটা জায়গা থেকে এসে এত বড় স্কুলে মানিয়ে নেওয়া সহজ নয়। কিন্তু তুমি প্রতিদিন চেষ্টা করছো। এটা অনেক বড় ব্যাপার।"
মেঘমালা মৃদু হেসে বলল, "তোমার মতো বন্ধুরা পাশে থাকলে সব কিছু সম্ভব। আর জানো, রোদ্দুর আমাকে শিখিয়েছে, ভয় পেলে জীবন থেমে যায়। তাই আমি সবসময় নিজেকে সাহস দিয়ে এগিয়ে যাই।"
রিয়া বলল, "তুমি ভাগ্যবান, এমন কেউ তোমার পাশে আছে। আমিও তোমার পাশে আছি, আমরা একসাথে এগিয়ে যাব।"
মেঘমালা বুঝতে পারল, তার সামনে যে প্রতিযোগিতা, তা ভয় পাওয়ার নয়, বরং তা থেকে নতুন কিছু শেখার সুযোগ।
পরবর্তী কয়েক সপ্তাহে মেঘমালা ধীরে ধীরে নিজের জায়গা তৈরি করতে শুরু করল। শিক্ষকদের সাথে কথা বলা, সহপাঠীদের সঙ্গে মিশে যাওয়া, আর নতুন বিষয় শেখা—সবকিছুতেই সে সাহসের পরিচয় দিল।
একদিন স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল বের হলো। মেঘমালা সব বিষয়ে ভালো নম্বর পেয়েছে। শিক্ষকরা তাকে প্রশংসা করলেন। সহপাঠীরাও মুগ্ধ হলো।
সেই রাতে, মেঘমালা ডায়েরি খুলে লিখল,
"রোদ্দুর, আমি তোমার কথা মনে রেখেছি। তুমি বলেছিলে ভয় পেলে জীবন থেমে যায়। আমি ভয় পাইনি। আমি শিখেছি, সাহস আর চেষ্টা কখনো বিফলে যায় না।"
---
নতুন স্কুলে মেঘমালার জীবন এভাবেই এগিয়ে চলল। পরবর্তী পর্বে দেখা যাবে, নতুন শহর ও স্কুলে সে আরও কী কী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয় এবং কীভাবে সেগুলো জয় করে।