সকলেই কী সাম্প্রদায়িক?
------নাসিমা খান
সব কিছুতেই বিতর্ক এসে যায়। ইতিহাস বিকৃত না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ ইতিহাসবীদগণ নিরেপক্ষ নন। যে যার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সত্য ঘটনার বিবৃতি দিতে গেলে পক্ষপাত আসবেই। শুধু জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ছাড়া বাকি সব বিতর্কের আওতায়।
সব সময় বুদ্ধিমানের উচিত বিতর্কিত বিষয় এভোয়েড করা। কিন্তু যাদের বুদ্ধিমান হিসেবে আমরা মেনে নিই। তাদের কর্মই দেখি সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত। পৃথিবীর মানুষ কখনো সাম্প্রদায়িকতা থেকে বের হয়ে আসতে পারবে তা অনেকেই বিশ্বাস করে না। এবং বোধহয় তা সম্ভবও নয়।
মানুষ মৃত্যুকে এবং মৃত্যুর পরের জীবনকে সবচেয়ে বেশি ভয় করে। তাই তারা নির্দিষ্ট এক শক্তিশালী নিরাকারকে বিশ্বাস করে। এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত মানুষ তাদের বিশ্বাসকে প্রকাশ করে একটি বিশেষ মতের ধর্মগ্রন্থের উপর। এবং তা রক্ষার্থে জীবন বাজি রাখে। যে ধর্ম পালন করে এবং যে ধর্মে বিশ্বাস করে উভয়ই নিজ ধর্মকে সবচেয়ে বড়ো জায়গা দেয়। এবং এটা তাদের সবচেয়ে দুর্বল জায়গা।
দুর্বল জায়গায় আঘাত করলে সব মানুষ টলে ওঠে।
মানুষ যতই অসাম্প্রদায়িক চেতনায় নিজেকে প্রকাশ করতে চাক না কেন তাদের সাম্প্রদায়িক ঘুণ একেবারে বিশ্বাসের কেন্দ্রে হাঁটু গেড়ে বসে থাকে।
দুএকজন যারা সত্যি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় জীবন চালায়, তারা ভীষণভাবে উড়নচণ্ডী। জগতের কোনো কিছুতেই তাদের মাথা ব্যথা নেই। সে রক্তপাত অথবা নির্বিবাদ!
কিন্তু মানুষের তো উচিত সত্য আর ন্যয়ের জন্য বিকল্প চিন্তা করা। বিতর্কিত ইস্যুগুলোতে অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষদের সত্যিই নাক গলানো উচিত এবং বিনা রক্তপাত, ঝড়-ঝঞ্ঝা, বিবাদে মানুষের শান্তির জন্য তাদের রুখে দাঁড়ানো উচিত বলে মনে করি।
শিক্ষার জন্য বিশেষ প্রতিষ্ঠান না করে একটি একীভূত শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন যেখানে সব মানুষ নিজের ভাষায় পড়তে পারে,নিজের সামর্থ্যে পড়তে পারে। মানুষের ভিতর থেকে সাম্প্রদায়িক চিন্তা দূর করতে হলে আমাদের আরো মূলে পৌঁছাতে হবে। কিন্তু সেই সব মানুষ কোথায়?
একটা মানুষ দেখি না বিনা স্বার্থে তুলো বয়,একটা মানুষ দেখি না বিনা স্বার্থে দান করে, একটা মানুষ দেখি না বিনা স্বার্থে মানুষের জন্য হাত বাড়ায়, একটা মানুষ দেখি না যার ভিতর অহংকার, হিংসা নেই। মানবিক মানুষের যত প্রচার হয় অতোটা মানবিক মানুষ এখন বিরল।
মানুষ কসমেটিক কিনে,বাহারী পোশাক কিনে, আল্ট্রমডার্ণ গাড়ি কিনে,রাজকীয় বাড়ি করে, অসম সুন্দর মসজিদ মন্দির করে, বিনাকারণে লাইটিং করে, গ্রুপিং, আড্ডা, মিলনমেলা করে যে পরিমাণ অনর্থক অর্থ ব্যয় করে; যদি সেই পরিমাণ অর্থ মানুষ মানবতার জন্য ব্যয় করত তাহলে চিৎকার করে বলতে পারতাম মানবিক মানুষ আছে, অসাম্প্রদায়িক মানুষ আছে, ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দেশ আছে।
যারা সত্যিকারের মানবতার জন্য যুদ্ধ করে, মানুষের কল্যাণের জন্য পথে নামে- তারা এই পৃথিবীর মানুষ নয় তারা এলিয়েন।
যেসব ধর্ম মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে, যারা অসাম্প্রদায়িক শব্দের অর্থ ভিন্নার্থে ব্যাবহার করে, যারা মানব কল্যাণের থেকে নিজেদের পারলৌকিক মঙ্গলের জন্য বেশি চিন্তিত হয়- তারা আর যা-ই হোক তারা কখনো মানবিক মানুষ নয়।
মোট কথা আমাদের ভিতরের দুয়েকটি গুণের জন্য আমরা নিজেদেরকে মানবিক মানুষ বলে কিছুতেই প্রমাণ করতে পারি না। আমরা সর্বাবস্থায় কতটা সংযোমী এবং যুক্তিবাদী,কতটা অমায়িক এবং ধৈর্য্যশীল, কতটা মানুষ আর কতটা পশু তার উপর নির্ভর করে আমরা সাম্প্রদায়িক না অসাম্প্রদায়িক।
------নাসিমা খান