পোস্টস

গল্প

উত্তরাধিকার

১৮ মে ২০২৪

রিজওয়ান আবীর

উত্তুরে শীতের বাতাসে কেঁপে কেঁপে উঠছে চাক্য। হাতে ধরা ধনুকটা ঠিক রাখতে পারছেনা। এতো করে মোষের তেল মালিশ করে এসেছে কিন্তু শীতের প্রকোপটা ঠেকিয়ে রাখা যাচ্ছেনা। দাঁতে দাঁত বাড়ি খাবার ঠক ঠক শব্দ শুনল সে পাশ থেকে। নুংগা পাশে দাঁড়িয়ে থর থর করে  কাঁপছে। এতো কাঁপছে মনে হয় কিছুক্ষণের মধ্যে হাঁটু ভেঙ্গে পড়েই যাবে। চাক্য বিরক্ত হয়ে পাথরের ছোরাটা নুংগার গলায় চেপে ধরল।

‘আরেকটা শব্দ করবি তো গলা নামিয়ে দিবো’।

পরিস্থিতি বুঝে নুংগাও নিজেকে সামলে নেয়ার চেষ্টা করল।

ওরা ৫ জন। ঝোপের আড়ালে একটা ডোবার পাশে ধনুক হাতে ধনুকের ছিলার মতোই স্থির হয়ে আছে। স্থির নিবদ্ধ চোখ সামনের কিছু কুটিরের উপর। আলাদা গোত্র ঐ কুটির বাসীর, চাক্যদের গঞ্জে মেয়ে মানুষের সংখ্যা একদম কমে গেছে, বংশধর বাড়ানোর জন্য তাই আশেপাশের গোত্র থেকে এখন মেয়েদের কে জোর করে ধরে নিয়ে যাচ্ছে ওরা। এই গোত্রটাতে মাত্র কয়েক ঘর কুটির আর সবল পুরুষ মানুষগুলো অস্ত্রবিদ্যা তেমন জানেনা। তাই ৫ জন মিলেই আক্রমণ করবে বলে ঠিক করেছে। শীতের আকাশ হলেও এই ভোররাতে তা বেশ পরিষ্কার। ঝিঝি গুলো ক্লান্ত হয়ে ডাকা ছেঁড়ে দিয়েছে। চাক্য রক্তপাত চায়না। সে চুরি করে কোন মেয়েকে তুলে নিয়ে যেতে পারলেই খুশি।

তবে চাক্যর মন মতো কিছু হলোনা। নিজ গোত্রের মেয়েদের এমন বিপদ আসতে পারে ভেবে ওরা তৈরি ই ছিল। ধনুকের ব্যবহার অবশ্য জানেনা বলে ওদের সামনে বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি ওরা পাথর আর বর্শা মেরে। ৫ জন ৫ টা মেয়েকে ঘাড়ে তুলে রওনা দিল নিজেদের গঞ্জের দিকে। চিৎকার আর হাত পা ছোঁড়াছুড়ি বন্ধ করার জন্য মুখ আর পা পাকানো লতা দিয়ে কষে বেঁধে নিতে ভুললোনা।

সকাল হয়ে গেছে। শিশির ভেজা সিক্ত পথ। শালবনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ওরা। গাছ গুলো সব ন্যাড়া হয়ে আছে। লাল মাটিতে রুক্ষ শুকনো পাতা শিশিরের পানিতে চপচপে হয়ে শব্দ করছে ওদের পায়ের নিচে পড়ে। আর কিছু দূর এগুতেই গাং, ব্রহ্মের আশীর্বাদে এই নদের জলধারা ওদের জনপদের উপর দিয়ে গেছে বলে ওরা একে বলে ব্রহ্মপুতের গাং। ভীষণ তীব্র তার স্রোত, এই শীতকালেও অজস্র জলরাশি নিয়ে সে বয়ে চলছে দক্ষিণে, কোন আকাঙ্ক্ষায় কোন টানে তা ওদের কেউ জানে না। এমনকি ওদের গঞ্জে সবচেয়ে বেশি জানে যে বুড়ো সেও জানে না এর শেষ কোথায়। অনেক সাহসী কেউ কেউ কলাগাছের ডোঙ্গায় চেপে দক্ষিণে যাওয়ার চেষ্টা করেছে, কিন্তু ওদের ভাগ্যে এরপর কি হয়েছে তা কেউ বলতে পারেনা। চাক্য ওর কাঁধের মেয়েটাকে ওর ডোঙ্গার উপর এনে ফেলল। তখন লড়াইয়ের জন্য চেহারা ভালো মতো দেখা হয়নি। কপালের উপর কালো চুল ছড়িয়ে পরেছে মেয়েটার। গায়ের রঙ চাপা আর দেহ সৌষ্ঠব অতুলনীয়। মেয়েটাকে কেন যেন সাধারণ মেয়েদের মতো মনে হয়না, স্বভাবও চড়া ওর; তুলে আনার সময় টের পেয়েছে চাক্য। অন্য মেয়েরা আগত ভবিষ্যৎ বুঝতে পেড়ে যখন কেঁদেছে আর এর হাত তখন চাক্যর পিঠে অনবরত আঘাত করে গেছে। শেষে হাত দুটোও বাঁধতে হয়েছে ওর।

ডোঙ্গা দিয়ে গাং পার হতে হতে দুপুর গড়িয়ে গেল। এখনো মুখটা ভালো করে দেখা হল না মেয়েটার। তাড়াহুড়ো নেই ভাবল চাক্য। ওকে ভালমতো দেখার জন্য অনেক সময় পড়ে আছে। গঞ্জে গিয়ে আগে খেতে হবে ওকে, তারপর ঘুম। মেয়েটাকে নিজের কুটিরে নিয়ে হাত পা খুলে দিল সে, ভেবেছিল এখানে আর ঐ মেয়ে কি করবে? কিন্তু হাত খুলার সাথে সাথেই চাক্যর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল মেয়েটা। চাক্য প্রথমে চমকে উঠলেও সাথে সাথেই সামলে নিলো। আবার হাত বেঁধে দিল মেয়েটার। বেড়ার সাথে বেঁধে রাখল এবার। মেয়েটা এমনভাবে চুলগুলো সামনে এনে রাখে যে ওর চেহারা এবারো দেখা হল না। ‘থাক পড়ে দেখব’ ভেবে বাইরে খেতে চলে গেল সে।

গঞ্জের লোক সংখ্যা কমে যাচ্ছে। শিশুদের কোনও হইচই নেই। কেমন একটা বিষাদ ভাব চারিদিকে। চাল সিদ্ধ আর বন মুরগি ঝলসানো দিয়ে খেয়ে দেয়ে নিজের মাচায় ফিরে আসলো চাক্য। মেয়েটার জন্য একটা কলা পাতায় আলু সিদ্ধ নিয়ে এসেছে। ইতোমধ্যে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। দিনের আলোর বদলে চাঁদের আলো রাজত্ব শুরু করে দিয়েছে। চাক্যের মাচার বেড়া দিয়ে চুইয়ে এসে পড়ছে সেই চাঁদের আলো। এক অদ্ভুত সৌন্দর্য তা। এই সৌন্দর্যের কথা চাক্য যদি গোত্রের অন্য কাউকে বলে নেহাত পাগল ভাববে তাকে। ক্ষুধা আর জৈবিক চাহিদা নির্বাণেই ব্যস্ত সব, চোখ খুলে কিছু দেখার মন কোথায়?

মেয়েটা শুয়ে পড়েছে। দেহের ভাঁজগুলো চাক্যের চাহিদাকে জাগিয়ে তুললেও সে ঠিক মনের সাড়া পেল না। সে জানেনা একটা মেয়েকে নিজের অনিচ্ছার বিরুদ্ধে এভাবে ব্যবহার করা ঠিক কিনা? যদিও সবাই তাই করে। আশপাশের মাচাগুলো থেকে বোবা কান্না ভেসে আসছে, শব্দটা চাক্য কে আরও মনমরা করে তুলল। হটাত চোখ তুলে তাকাল মেয়েটা। চাক্য দৃশ্যটা দেখে এমন অনুভব করল যা সে নিশ্চিত আর কেউ আগে কখনো করেনি। এতো সুন্দর চোখ, চুলের ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দেয়া মুখমণ্ডলের সুষমা শুধু অনুভব করতে পারা যায়, কল্পনা করা যায়, ভাষায় বর্ণনা করা যায়না। এই কি দেবী? মাটির মূর্তি গড়ে, আগুনের সামনে রেখে ওরা যখন সন্তানের আশায় অবিনাশী মায়ের কাছে ভিক্ষা চায়, তখন চাক্য মনে মনে যেই সর্ব-দায়িনী প্রতীমারূপ কল্পনা করেছে, এই কি সেই রূপ? চাঁদের আলোর সৌন্দর্য তার কান্না ভেজা গালের উপর আরও চকচকে হয়ে উঠেছে। এই অনুভূতিকে কি বলে চাক্য জানেনা। কি আশ্চর্য, এমন রূপ তার ভিতর কোনও কামুকতা জাগায়নি, কোনও চাহিদা উথলে উঠেনি তার দেহের মাঝে; সে শুধু চোখ মেলে এভাবে চেয়ে থাকতে চেয়েছে। অনুভব করতে চেয়েছে মেয়েটার মনের ভাষা, আপন করার একটা প্রবল ইচ্ছা তার মাঝে আকুল হয়ে উঠেছে। একে কি বলে? চাক্য জানত না যে তার হাজার বছর পরেও হাজার হাজার মানুষ এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজবে, কিন্তু এর কোনও দিশা করতে পারবেনা।

আলুসিদ্ধগুলো মেয়েটার সামনে রাখল চাক্য। ভয়ে আর রাগে একদম কুঁকড়ে আছে মেয়েটা। চাক্য ওর হাত খুলে দিল।

‘তুমি যাও তোমার গোত্রের কাছে ফিরে।’

এবার রাগের বদলে মেয়েটার চোখে খেলা করল কৌতুক।

‘কার কাছে যাব? আমার মৃত বাপের কাছে?’

এই প্রশ্নের জবাব নেই চাক্যের কাছে। দুঃখে আর লজ্জায় তার ভিতরটা কুঁকড়ে যেতে থাকল শুধু।

মেয়েটা ওর মাচাতেই এরপর ৫ চাঁদ ধরে আছে। কিন্তু একবারও চাক্য ওকে স্পর্শ করেনি। মেয়েটা প্রথমে ভয় পেত এখন অবাক হয় ওর এই চেয়ে থাকা দেখে। চাক্য জানে মেয়েটা ওর চোখে অসভ্য আচরণের বদলে মুগ্ধতা দেখে বিস্মিত হয়, কিন্তু কিছু বলেনা। চাক্যের কাছে সে সৌন্দর্যের দেবী। আর মেয়েটার কাছে সে ঘৃণার পাত্র। এটাই স্বাভাবিক। নিজের বাপকে মেরে ফেলার পর সে খুনি পুতের কল্লা এনে মাচায় টানিয়ে রেখেছে হাড্ডি না শুকানো পর্যন্ত, আর প্রতিদিন থু দিয়েছে। মেয়েটা তো সেখানে কিছুই করছেনা। চাক্যের ভিতরটা শুকিয়ে থাকে সারাক্ষণ। শিকারে গেলে তার টঙ্কার আগের মতো প্রবল হয়না, তীর ও কোনও কিছুকে বিদ্ধ করেনা। তার মন পড়ে থাকে মাচায়। চোখের সামনে ভেসে থাকে মেয়েটার অসামান্য মুখ। কিন্তু এর মানে কি সে বুঝতে পারেনা। সে তো ইচ্ছা করলেই ঐ মেয়েকে নিয়ে যা খুশি তা করতে পারে। কিন্তু তার মন তাতেও সায় দেয়না। সে ভেবে পায়না কিছুই। সেকি পাগল হয়ে গেছে? পাগলের শাস্তি ভয়াবহ। ওদেরকে মনে করা হয় অশুভ শক্তির আধার। তাই কারো মধ্যে পাগলামি দেখলে ধরে বেঁধে কালো রঙের মা মূর্তির সামনে কল্লা নামিয়ে দেয়া হয়। কথাটা ভেবে শিউরে উঠে চাক্য। কিন্তু মেয়েটার চিন্তা মাথা দিয়ে নামাতে পারেনা।

১২ চাঁদ পেরিয়ে গেছে। সেই শীতের পর জগতে আবার শীতের তীব্র থাবা। চাক্য মেয়েটার জন্য ভালো বাকল আর পাতা এনে দেয়। শিমুল তুলা পাকিয়ে পাতার পরতে পরতে ঢুকায়, তারপর বাইরে থেকে সজারুর চামড়া দিয়ে কষে বেঁধে শীত তাড়ানোর মতো উপকরণ দেয় মেয়েটাকে। মেয়েটা সবকিছুই নেয়, কিন্তু তার হাত থেকে কক্ষনই সরাসরি নয়। এই ১২ চাঁদ মেয়েটা তার সাথে কথা বলেনি, কিছু জিগ্যেস করলে জিঘাংসা নিয়ে শুধু তাকিয়ে থেকেছে। তবে মেয়েটা তার মাচাটা গুছিয়ে রাখে। পানি এনে রাখে গাং থেকে। চাটাই দিয়ে বেড়া বুনে অন্য মেয়েদের মতো। কিন্তু তাকে সে সহ্য করতে পারেনা। ঘৃণায় মুখ বাঁকিয়ে নেয় চাক্যকে দেখলে। চাক্য ভিতরে ভিতরে মরে যায়।

শীত চলে যায়। উত্তুরে হাওয়ার জায়গায়ে ফুরফুরে বাতাস বয় রাতের বেলা। চাক্য মাচার এক কোণে গুটি দিয়ে শুয়ে থাকে। মেয়েটা আরেক কোণে চুপচাপ বসে থাকে। অষ্টমীর আধা চাঁদ অকাতরে আলো বিলাতে থাকে। হটাত করে প্রবল চিৎকার শুরু হয় আশেপাশে। আক্রমণ হয়েছে ওদের উপর। জীবনে প্রথমবারের মতো আনন্দে আর উত্তেজনায় মেয়েটার চোখ জ্বলতে দেখে চাক্য। অরুবালা অরুবালা ডাক শুনে মাচা থেকে লাফিয়ে নেমে যায় সে। শব্দের উৎসের দিকে তাকায় চাক্য। এক পুত। বাঁশের তৈরি এক নেংটি পড়ে মেয়েটাকে জড়িয়ে সে দাঁড়িয়ে আছে। চাক্যের বুকের ভিতর কেমন যেন করে উঠে। ধনুকটা হাতে নিয়েছিল সে, কিন্তু তাতে তীর পরানোর কোনও মানে সে খুঁজে পায়না। চাক্য অবাক হয়ে এদিক সেদিক তাকায়। দাউ দাউ আগুনে প্রত্যেকটা মাচা পুড়ছে। তার মাচাতেও আগুন ধরে গেছে। সে পালানোর মতোও শক্তি বোধ করেনা। কেমন উদ্ভ্রান্তের মতো সামনে তাকিয়ে থাকে, মেয়েটা যেখানে ঐ পুতটাকে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। কানের কাছে কার চিৎকার শুনে সে সংবিৎ ফিরে পায়। নেমে আশে মাচা থেকে। কিন্তু লড়াই এ যোগ দেয়না। সে আস্তে আস্তে হেঁটে যায় গাং পাড়। আধা চাঁদের পূর্ণ আলো জলের উপর অদ্ভুত বিভ্রম সৃষ্টি করেছে। রাতের বেলা এদিক আসতে ওদের লোকেরা ভয় পায়। কিন্তু আজ তার একটু ও ভয় লাগছেনা। সে তন্ময় হয়ে দেখছে, আর ভাবছে মেয়েটা তাকে জাদু করেছে কিনা? সে কি আসলেই দেবী? হটাত হুটোপুটি শুনে পিছন ফিরে সে। ঐ পুতটা দাঁড়িয়ে আছে। হাতে তীর-ধনুক। এই ১২ চাঁদের মধ্যে এটার ব্যবহার ওরাও শিখে গেছে। মৃত্যু সামনে ভেবেও চাক্য ভয় পায়না। ওর গলা দিয়ে কোনও আওয়াজ, হুংকার কিছু আসেনা। সে অবাক হয়ে শুধু পুতের পাশের মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকে। 

মেয়েটার চোখ জিঘাংসায় জ্বলছে। তীর টাকে সুন্দর মতো ছুটে আসতে দেখে চাক্য, তার বুকে বিঁধার সময়টাও যেন তার কাছে অন্তহীন মনে হয়। গলগল করে রক্ত পড়ছে। কিন্তু তার মনের ব্যথা এই দৈহিক ব্যথার কাছে পাত্তা পাচ্ছেনা। সে উল্টা হয়ে পড়ে যায়। খোলা চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। শীতে মরা গাঙের কুলকুল আওয়াজ, চাঁদের আলোর মায়া তার কানে-চোখে পরশ দিয়ে যায়। কিন্তু চাক্যের মন জুড়ে থাকে মেয়েটা। এ কেমন অনুভূতি? এখন তো সে মারা যাচ্ছে, দেবী কি এখনো তাকে এই জবাব দিবেনা? তার খোলা চোখ আকাশের মাঝে এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে। রাতের হাওয়ার মাঝে এই বুক ভাঙ্গা কষ্টের মানে খুঁজে। গাঙের শব্দের মাদকতায় এই চাওয়ার অর্থ খুঁজে। পায়না। চাক্য জানেনা, সে যেখানে মারা যাচ্ছে, সেখানে পরে আরও অনেক চাক্য এইভাবে শুয়ে আকাশ দেখবে, এইভাবে শুয়ে বাতাসের, নদীর শব্দ শুনবে, কিন্তু এই অনুভূতির অর্থ খুঁজে পাবেনা। হাজার চাক্য এভাবে তাদের অদ্ভুত অনুভূতিগুলোকে বুকে কবর দিয়ে রাতের পর রাত, চাঁদের পর চাঁদ নির্ঘুম কাটিয়ে দিবে, কিন্তু সেই অনুভূতির সর্বগ্রাসী রূপ চাপা দিতে পারবেনা। ব্রম্মপুতের গাং হবে ব্রহ্মপুত্র। তাঁদের গঞ্জ হবে পুণ্ড্র নগরের উপনিবেশ। ভূমিকম্পে নদী সরে যাবে, নদীর পাশে বইবে রক্ত গঙ্গা। পুণ্ড্রও একসময় উজাড় হবে, এই গাঙের পাড় দিয়ে এরপর কত রাজা আসবে, কত রাজা পালাবে, কত ঘোড়া ছুটবে, সৈন্য দৌড়ুবে, গাঙ্গের উপর চলবে কত কিসিমের ডোঙ্গা, দেশভাগ হবে, আবার লড়াই হবে, তীরের বদলে ছুটবে গুলি, সেই গুলিও বন্ধ হবে। গাঙের স্রোত কমে যাবে, ওদের গঞ্জ হবে বিশাল শহর, আলোর রোশনাই সেখানে চাঁদের আলো ঢেকে দিবে, কিন্তু তার এই প্রশ্নগুলোর উত্তর কেউ দিতে পারবেনা। হাজার তরুণ, হাজার যুবক এভাবে রক্তক্ষরণ করতেই থাকবে করতেই থাকবে। বুকের রক্তের বদলে ঝরবে হৃদয়ের রক্ত তবু রহস্যময় চোখের ভাষা পড়তে পারবেনা, বুঝতে পারবেনা। অব্যক্ত ব্যথা নিয়ে কাটিয়ে দিবে দিন, আর নির্ঘুম চোখে অন্তহীন রাত।