বিয়ের পাচ মাসের মাথায় যখন আমার জরায়ুর কেটে ফেলা হলো তখন আমি বাচার আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম। শশুর বাড়িতে স্বামী শাশুড়ি যেনো বোবা হয়ে গেছিলো। তারাও বুঝতে পারছিলো না কী করবে। মূলত শরীরে হঠাৎ এক রোগের বাসা বাধার কারণে এতো বড়ো সম্পদ হারাতে হয়েছিলো আমাকে।
দিন দিন পাগল হয়ে জাচ্ছিলাম। প্রতিটা মেয়ের সপ্ন থাকে নিজের বাচ্চার। সেটা যখন ভেঙে জায় তখন একটা মেয়েরও ভেঙে যাওয়া সাভাবিক।
তারপর একদিন চিন্তা করলাম, আমার জীবন নষ্ট হয়েছে স্বামী কে এই পাচ মাসেই অনেক বেশি ভালোবাসি ওর জীবন টা নষ্ট করতে দিবো না। এই বাড়ি থেকে চলে গিয়ে ওকে মুক্ত করবো। যেই ভাবা সেই কাজ। তারপর নিজের বাবার বাড়ি চলে আসলাম।
ভেবেছিলাম শশুর বাড়ি থেকে বাবার বাড়ির মানুষ আমাকে বেশি সাপোর্ট করবে। কিন্তু দিন যেতে যেতে আমার ধারণা পালটে গেলো। কারণ আমার জন্য নাকি বাবা ভাইয়ের বাইরে বের হতে লজ্জা করে। তারা কাউকে মুখ দেখাতে পারে না। ভাবি বাসার মধ্যে ঝামেলা করে। মা ঠিক মতো কথা বলে না। আমার ভাবি তার সন্তানদের আমার কাছে আসতে দেয় না।
কই যখন শশুর বাড়ি ছিলাম আমার শশুর স্বামী একদিনও তো বললো না তাদের আমার জন্য বাইরে যেতে লজ্জা হয়। শুনেছি শাশুড়িরা খারাপ হয়, কই সে তো একদিনও আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেনি। উল্টো আমি চলে আসার পর বার বার তার ছেলেকে পাটিয়েছে আমাকে নেওয়ার জন্য। বার বার ফোন করেছে। আমিই বলেছি যে আমি তাদের জীবন নষ্ট করতে চাইনা।
শুক্রবার আজ স্বামীর অফিস বন্ধ। জামা কাপড় গুছিয়ে তাকে ফোন করে বললাম আমাকে নিয়ে জেতে। আমার বাসা থেকে শশুর বাড়ি যেতে ৪০ মিনিট লাগে। সে বাইক নিয়ে ১০ মিনিট আগেই চলে এসেছে। মা আর বাবাকে শেষ সালাম করে চলে আসলাম। বলে এসেছি কখনো তাদের মুখও দেখতে চাইনা।
এ বাড়ি আসার আজকে ২ মাস। মানসিক ভাবে প্রচণ্ড ভেঙে পরেছি। শশুর শাশুড়ি স্বামী সবাই একসাথে আমাকে নিয়ে বসেছে। শাশুড়ি দুই হাত ধরে বললো,
-তোমাকে খুব সখ করে এই ঘরের বউ করে এনেছি। সন্তান জন্ম দিলেই যে মা হওয়া জায় না কিন্তু না। আদর ভালোবাসা দিয়ে ছোট থেকে পেলেপুষে বড়ো করাটাই মূলত প্রকৃত মায়ের প্রকাশ। বাচ্চা তো রাস্তার পাগলীও জন্ম দিতে পারে। তুমি চিন্তা করো না এসব নিয়ে আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে তোমার উপর কোনো প্রেশার পরবে না। তুমি এতিম খানা থেকে একটা বাচ্চা নিতে পারো।
শাশুড়ির দিকে তাকালাম। ভাবছি শাশুড়ি এমন হয়? ঠিক রাখতে পারছি না নিজেকে। তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। এমন শাশুড়ি কয়জন পায়।
এতিম খানায় আমার স্বামী বলে রেখেছিলো ছোট বাচ্চা নিবো আমরা। তারপর সময় এলো আমাদের সন্তান ঘরে আনার। ছোট্ট এক মেয়ে, আমাদের মেয়ে আসলো। আমার শাশুড়ি আদর করে নাম রেখেছে ফুলতা। সবাই খুব ভালোবাসে ওকে। তারা বুঝতেই দেয় না যে এটা তাদের রক্ত না।
আমার মেয়ের বয়স ১২ বছর। সে এখনো জানেনা তার আসল পরিচয়। আর আসল পরিচয় বলতে কিছু নেই। সে আমার মেয়ে আমাদের মেয়ে।
সমাপ্ত
[সত্যি ঘটনা অবলম্বে]
অতুলনীয় শাশুড়ি
সংগৃহীত