Posts

গল্প

অন্ধকারের ওপারে

January 24, 2025

Abdul Awal

Original Author অধ্যক্ষ এমএ আউয়াল

34
View

রাত গভীর। শহরের নীচে, মাটির ৩০০ ফুট গভীরে স্থাপিত গোপন ল্যাবরেটরিতে ডক্টর আদিত্য বসু তার নতুন এক্সপেরিমেন্ট নিয়ে ব্যস্ত। প্রজেক্টটির নাম "ইনফিনিটি গেট"। এটি এমন এক প্রযুক্তি যা সময় এবং স্থানের সীমাবদ্ধতা ভেঙে মানুষকে অন্য মাত্রায় ভ্রমণ করতে দেবে।
ল্যাবরেটরির ভেতরে বিশাল গোলাকার একটি যন্ত্র ঝলমল করছে। এর কেন্দ্রে একটি অদ্ভুত কাচের মতো পোর্টাল রয়েছে, যা দিয়ে মাঝে মাঝে অন্ধকার থেকে আলোর ঝলক দেখা যায়। সহকারী রিয়া ডক্টর বসুকে বললেন,
"স্যার, সিস্টেম ৯৯% প্রস্তুত। কিন্তু এটা কি নিরাপদ?"
ডক্টর বসু হেসে বললেন, "রিয়া, বিজ্ঞান ঝুঁকির বাইরে নয়। আমাদের এগোতেই হবে।"
রাত ২টা ১৫ মিনিট। ডক্টর বসু গ্লাভস পরে কন্ট্রোল প্যানেলে চাপ দিলেন। ইনফিনিটি গেট হঠাৎ করে শক্তিশালী আলোর বিস্ফোরণে সক্রিয় হয়ে উঠল। পোর্টালের ভেতর থেকে একটা শূন্যতার মতো শব্দ আসতে লাগল। ডক্টর বসু ধীরে ধীরে পোর্টালের দিকে এগোলেন।
হঠাৎ, পোর্টালের ভেতর থেকে একধরনের বিদ্যুতের স্রোত ডক্টর বসুকে আঘাত করে। রিয়া চিৎকার করে ওঠে, "স্যার!" কিন্তু ততক্ষণে ডক্টর বসু পোর্টালের ভেতর টেনে নেওয়া হয়েছে।
ডক্টর বসু যখন জ্ঞান ফিরে পেলেন, দেখলেন তিনি এক অদ্ভুত জগতে এসে পৌঁছেছেন। আকাশ লালচে রঙের, গাছগুলো ধাতব, আর মাটি দেখতে কাঁচের মতো স্বচ্ছ। তিনি অবাক হয়ে চারপাশ দেখছিলেন, যখন হঠাৎই একটি যান্ত্রিক কণ্ঠস্বর শোনা গেল,
"স্বাগতম, মানব। তুমি কি এই জগতের প্রথম অনুপ্রবেশকারী?"
ডক্টর বসু দেখতে পেলেন একটি বিশাল যান্ত্রিক প্রাণী তার দিকে এগিয়ে আসছে। এটি মানুষের মতো দেখতে, কিন্তু ধাতু দিয়ে তৈরি। প্রাণীটি বলল,
"আমি আল্ট্রন-৫। এই পৃথিবী ধ্বংসপ্রাপ্ত মানুষের তৈরি। তারা নিজেদের ধ্বংস করে আমাদের সৃষ্টি করেছিল।"
ডক্টর বসু বিস্মিত হয়ে জানতে চাইলেন, "কিন্তু আমি কি এখানে আটকে পড়েছি?"
আল্ট্রন-৫ বলল, "না। ইনফিনিটি গেট তোমাকে ফিরিয়ে নিতে পারে। কিন্তু আগে তোমাকে আমাদের বার্তা নিয়ে তোমার জগতে ফিরে যেতে হবে। মানুষ যদি বিজ্ঞানের ভুল ব্যবহার বন্ধ না করে, তাহলে তোমাদের পৃথিবীর ভবিষ্যতও আমাদের মতোই হবে।"
ডক্টর বসু রাজি হলেন। আল্ট্রন-৫ তাকে পোর্টালের দিক নির্দেশনা দিল। কিন্তু যাওয়ার আগে একটি ধাতব সিলিন্ডার হাতে দিল।
"এটি নিয়ে যাও। এটি আমাদের প্রযুক্তি। তোমরা যদি সঠিক পথে ব্যবহার কর, তবে নিজেকে রক্ষা করতে পারবে।"
ডক্টর বসু যখন পোর্টালের মাধ্যমে তার ল্যাবে ফিরে এলেন, তখন রিয়া তাকে দেখে আনন্দে চিৎকার করে উঠল। ডক্টর বসু ধীরে ধীরে বললেন,
"আমাদের সময় কম। ভবিষ্যৎ পরিবর্তন আমাদের হাতেই।"
এরপর থেকেই ডক্টর বসু তাদের দেওয়া প্রযুক্তি নিয়ে কাজ শুরু করলেন। কিন্তু সেই ধাতব জগতের কথা, এবং তাদের সতর্কবার্তা তার মনে গভীর ক্ষত তৈরি করল। তিনি জানতেন, বিজ্ঞানের সঠিক ব্যবহারই আমাদের টিকে থাকার একমাত্র উপায়।
 

Comments

    Please login to post comment. Login