Posts

গল্প

জলজগতে বসতি

January 25, 2025

Abdul Awal

Original Author অধ্যক্ষ এমএ আউয়াল

43
View

সাল ২১৪৫। পৃথিবী তখন প্রায় সম্পূর্ণ পানিতে ডুবে গেছে। ধ্বংসপ্রাপ্ত ভূখণ্ডের উপরে থাকা মানুষগুলো জায়গা নিয়েছে বিশাল ভাসমান শহরে। মানুষের একমাত্র ভরসা হলো “অ্যাকুয়া ডোম” নামে পরিচিত বিশাল এক প্রযুক্তি, যা সমুদ্রের তলদেশে নিরাপদে বসবাসের সুযোগ দেয়। কিন্তু এই ডোমগুলোতে শুধুমাত্র ধনী এবং ক্ষমতাবানদেরই থাকার অধিকার রয়েছে। বাকি মানুষগুলো টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে পানির উপর ভাসমান বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে।

রায়হান ছিল এক তরুণ বিজ্ঞানী, যার পরিবারের কেউই ডোমের অধিকার পায়নি। তার চোখে ছিল এক স্বপ্ন—মানুষকে পানির তলদেশে একটি নতুন জীবনের সুযোগ করে দেওয়া। রায়হানের সাথে ছিল তার বোন মায়া।

 

একদিন রায়হান তার গবেষণাগারে একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করে। সে এমন একটি ন্যানোড্রোন তৈরি করে, যা সমুদ্রের গভীরতম স্তরে অক্সিজেন এবং বিশুদ্ধ পানির সন্ধান করতে পারে। এই আবিষ্কার যদি সফল হয়, তবে তা ডোমের বাইরে থাকা লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন রক্ষা করতে পারে।

কিন্তু এই খবর শোনার পর, ডোমের শাসকগোষ্ঠী “নেপচুন কর্পোরেশন” বিষয়টি জানতে পারে। তারা ভয় পায় যে, রায়হানের আবিষ্কার তাদের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করবে।

এক রাতে রায়হান তার গবেষণাগারে কাজ করছিল, তখনই একটি অদ্ভুত শব্দ শোনে। তার দরজায় কয়েকজন সশস্ত্র লোক প্রবেশ করে। তাদের নেতা বলে,
“রায়হান, তোমার আবিষ্কার আমাদের জন্য হুমকি। এটি ধ্বংস করো, নাহলে তোমার বোনকে আমরা ডোমের বাইরে পাঠিয়ে দেব।”

রায়হান হতবাক হয়ে যায়। সে বুঝতে পারে, এই লোকগুলো তার কাজ থামাতে চায়। কিন্তু তার কাজই ছিল মানুষের মুক্তির চাবি।

 

রায়হান সময় নষ্ট না করে মায়াকে নিয়ে একটি ছোট সাবমেরিনে পালিয়ে যায়। তার লক্ষ্য ছিল সমুদ্রের গভীরে সেই জায়গায় পৌঁছানো, যেখানে সে তার আবিষ্কার পরীক্ষা করতে পারবে।

পালানোর সময় তারা দেখে, “নেপচুন কর্পোরেশন” তাদের ধাওয়া করছে। বিশাল যন্ত্র এবং অস্ত্রে সজ্জিত তাদের সাবমেরিনগুলো সহজেই রায়হানের ছোট যানটিকে ধ্বংস করতে পারত।

“মায়া, যদি আমরা ব্যর্থ হই, তবে কেউ কখনও জানতে পারবে না যে, ডোমের বাইরে টিকে থাকা সম্ভব,” রায়হান হতাশ কণ্ঠে বলে।

“ভাইয়া, আমরা হাল ছাড়ব না,” মায়া আত্মবিশ্বাসীভাবে বলে।

 

তারা সমুদ্রের এমন এক স্তরে পৌঁছে, যেখানে সূর্যের আলো পৌঁছায় না। অন্ধকার চারদিকে ঢেকে রেখেছে। কিন্তু রায়হানের ন্যানোড্রোন তার কাজ শুরু করে। ড্রোনটি কিছু অক্সিজেন উৎপাদনকারী একধরনের মাইক্রোঅর্গানিজম খুঁজে পায়। এই আবিষ্কার তাদের আশা জাগায়।

কিন্তু ঠিক তখনই, সাবমেরিনটি বিকল হতে শুরু করে। পানির চাপ এত বেশি যে, তাদের যানটি যেকোনো সময় ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। মায়া বলে, “আমাদের তাড়াতাড়ি এখান থেকে বের হতে হবে।”

রায়হান ড্রোনটি সংগ্রহ করে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ঠিক তখনই তাদের সামনে হাজির হয় নেপচুন কর্পোরেশনের বিশাল সাবমেরিন।

 

“তোমার পালানোর পথ শেষ,” শাসকগোষ্ঠীর নেতা বলে। “আমাদের প্রযুক্তির চেয়ে তুমি বেশি শক্তিশালী নও।”

রায়হান জানে, তার হাতে একটিই সুযোগ। সে তার ড্রোনটি সক্রিয় করে, যা বিশাল এক অক্সিজেন বিস্ফোরণ ঘটায়। এই বিস্ফোরণের ফলে শত্রুর সাবমেরিন ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং রায়হান ও মায়া দ্রুত পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

তারা সমুদ্রের একটি নিরাপদ জায়গায় পৌঁছায়, যেখানে রায়হান তার ড্রোনের আবিষ্কার দিয়ে একটি ছোট বসতি তৈরি করে। এই বসতিটিই পরে মানুষের নতুন জলজগৎ হয়ে ওঠে। ডোমের বাইরের মানুষগুলো ধীরে ধীরে এই নতুন জীবনের সুযোগ পায়।

Comments

    Please login to post comment. Login

  • অনেক সুন্দর হয়েছে শুভ কামনা